সঙ্গীত জগতে চার দশক পার করে ফেলেছেন কুমার শানু। দীর্ঘ কেরিয়ারে তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। আজও দর্শকের ভালোবাসাই নিজের সেরা প্রাপ্তি বলে মনে করেন। গানের যাত্রা এবং দুর্গাপুজো নিয়ে মুম্বইতে তাঁর আন্ধেরির ফ্ল্যাটে নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন।
রুচি নেই
আগে দুর্গাপুজো মানেই প্যান্ডেলে পুজোর গান বাজত। এখন আর সেই ধারা নেই। কুমার শানুকে একথা জিজ্ঞেস করতে অনুযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘পুজোর সময় নতুন গান শোনার চাহিদা আগে বাঙালিদের মধ্যে ছিল। এখন আর সেই চাহিদা বাঙালিদের মধ্যে নেই। শ্রোতার চাহিদা থাকলেই গান গেয়ে ভালো লাগে। তখনই গানের অ্যালবাম বাজারে আসে। কিন্তু বাঙালিদের আর বাংলা গান শোনার রুচি সেরকম নেই। পুজোর সময় কোনও জনপ্রিয় বলিউড গান শুনতেই এখন বাঙালি ভালোবাসে। আর ইউটিউবের যুগে যে কেউ পুজোর নতুন গান প্রকাশ করছে।’
চার দশক
চার দশকের দীর্ঘ সঙ্গীত সফরে কী হারিয়েছেন, কী পেয়েছেন? একটু আনমোনা হয়ে শানু বললেন, ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা হারিয়েছি। রকে বসে আড্ডা, রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রিয় স্ট্রিট ফুড খাওয়া, এসব আর করতে পারি না। বাবা-মাকে হারিয়েছি। বাবার মৃত্যুর দিন আমি স্টেজ শো করেছিলাম। কারণ শো বাতিল করার উপায় ছিল না।’ এই চার দশকে অনেক বাধা পেরিয়ে এসেছেন তিনি। ‘স্ট্রাগল আগেও ছিল, এখনও আছে। অনেকের ধারণা ছিল বাঙালি বলে হিন্দি গান গাইতে পারব না। প্রতি পদে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। আমার মতে যাঁরা স্ট্রাগল করেন, তাঁরাই টিকে থাকেন।’
প্রতিষ্ঠান
কুমার শানুর নিজের কোনও সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান নেই কেন? জবাবে একটু আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে আমিও চাই। কিন্তু এটা একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি দেখেছি এক্ষেত্রে সবাই কমার্শিয়াল দিকটাকে বেশি গুরুত্ব দেন। আমি তা চাই না। আমি কারও সঙ্গে প্রতারণা করতে পারব না।’
রিয়ালিটি শো
রিয়ালিটির শো-র মঞ্চে একঝাঁক গায়ক জন্ম নেন, আবার সময়ের স্রোতে তাঁরা হারিয়েও যান। বহু রিয়ালিটি শো-তে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন শানু। এপ্রসঙ্গে তাঁর মত, ‘রিয়ালিটির শো-র মঞ্চ অনেক গরিব শিল্পীকে সুযোগ দেয়। রিয়ালিটির শো-র হাত ধরে ওরা কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারে। কিন্তু মূল সমস্যা, ওরা স্বকীয়তা গড়ে তুলতে পারে না। আমাদের নকল করে ওরা গান গায়। অনেক সময় আবার মানুষের ভালোবাসা, বা অর্থের নেশা ওদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়। তাই হারিয়েও যায়। ফলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি।’
গানে প্রযুক্তি
এখন প্রযুক্তির সাহায্যে যে কেউ গায়ক হয়ে উঠছেন, একথা মেনে নিয়ে শানু বলেন, ‘প্রযুক্তির ভালো আর খারাপ দুই দিকই আছে। আমরাও প্রযুক্তির সুবিধা নিই। তবে কিছু মানুষ প্রযুক্তির সাহায্যে নিজেদের গায়ক বলে প্রমাণ করছেন। এটা মানতে পারি না।’
ঈশ্বর প্রদত্ত
আজও কুমার শানুর গলায় তারুণ্য আর প্রাণশক্তি ভরপুর। এর রহস্য কী? হেসে বলেন, ‘রহস্য কিছু নেই। কারণ আমি গলার জন্য কিছু করি না। ঈশ্বর প্রদত্ত জিনিস, তাই ঈশ্বরের হাতেই ছেড়ে দিয়েছি।’
অনুশোচনা
কাজের ব্যস্ততায় বাবা, মাকে তেমন সময় দেওয়া হয়নি বলে আজও আপশোস রয়েছে কুমার শানুর। ব্যক্তিগত অনুশোচনা ছাড়াও পেশাগত আপশোসও রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এ আর রহমান ‘রোজা’ ছবির সব গান আমাকে আর অলকাকে (ইয়াগনিক) দিয়ে গাওয়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তখন সময় দিতে পারিনি, আর সেভাবে গুরুত্বও দিইনি। অনেক বড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল।’
রিমেক ট্রেন্ড
শানু জানালেন, রিমেক ট্রেন্ডকে তিনি ইতিবাচক ভাবেই দেখেন। তাঁর কথায়, ‘পুরনো গানগুলো নতুন নায়কদের মাধ্যমে নতুন ভাবে ফিরে আসছে। রিমেকের কারণেই এপ্রজন্ম পুরনো গানগুলোর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এটা আমি সদর্থক ভাবেই দেখি।’
বার্তা
নতুন গায়কদের উদ্দেশ্যে শানুর বার্তা, ‘হৃদয় দিয়ে গান গাইলে তবেই শ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করতে পারবেন।’