বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

তন্ময়কে ছাড়া ছবিটা হয় না

স্বরলিপি ভট্টাচার্য: ১৯৯৭। নভেম্বর। রামোজি ফিল্ম সিটি থেকে ডাক এল বেহালার ছেলেটার কাছে। ছোট থেকে ছবি আঁকতে ভালোবাসত সে। সরকারি আর্ট কলেজে ইন্ডিয়ান পেন্টিং নিয়ে পড়াশোনাও শেষ করেছে। কিন্তু কমার্শিয়ালে আগ্রহ বরাবরের। ১৯৯৬-এর মে মাসে আর্ট ডিরেক্টর গৌতম বসুর হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পা পড়েছিল সেই ছেলের। কিন্তু কিছুদিন পর আর ইন্ডাস্ট্রিকে ভালো লাগেনি। তবে রামোজি থেকে ডাক আসার পর বদলে গেল জীবন। ‘রামোজি ফিল্ম সিটি আর্টের স্বর্গ। আমি ওখানে গিয়েছিলাম একটা ফোন নম্বর সম্বল করে। ট্রেন থেকে নেমে দেখলাম, আমার নামের প্ল্যাকার্ড নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছেন’, লাল চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন তন্ময় চক্রবর্তী। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির আর্ট ডিরেক্টর।
এখনও পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রায় একশোর উপর বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন তন্ময়। এছাড়া বলিউড, হলিউডও রয়েছে তালিকায়। তন্ময় যে বিভাগের কর্মী, সেটা ছাড়া একটা ছবি তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু তন্ময়কে কতজন চেনেন? তাঁর পরিশ্রম স্বীকৃতি পায় কি? প্রশ্ন শুনে হাসলেন। তারপর সোজা তাকিয়ে মৃদুভাষী তন্ময় বললেন, ‘এটা কষ্ট দেয়। তবে এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। ছবির রিভিউয়ে শেষ অনুচ্ছেদ আগে পড়ি। কারণ যদি আর্ট ডিরেক্টরের নাম দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন কেউ, তাহলে সেটা ওখানেই থাকে। আবার অনেক সময় থাকেও না। অনেক পরিচালক এসে বলেন, ‘তন্ময় এটা তোর ছবি।’ তারপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের নাম বলতে ভুলে যান। আবার ‘গয়নার বাক্স’-এ রিনাদিকে (অপর্ণা সেন) স্টেজে বলতে শুনেছিলাম, তন্ময়কে ছাড়া ছবিটা হয় না।’
টালিগঞ্জ এলাকার যে ঘরে বসে তন্ময় কথা বলছিলেন, তা মিউজিয়াম সম। আদতে সেটাই তাঁর অফিস। নানা জায়গা থেকে নানা জিনিস সংগ্রহ করে রাখেন। কবে, কোনটা কাজে লাগবে তা নিজেও জানেন না। একজন আর্ট ডিরেক্টরের কাজ সম্পর্কে সাধারণ দর্শকের ধারণা ঠিক কী? মজার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন তন্ময়। ‘সম্প্রতি এক সহকারীর বিয়েতে গিয়ে শুনলাম, একজন জানতে চাইছেন, বর কী করে? উত্তরে আর একজন বলছেন, স্টুডিওপাড়ায় ছবি আঁকে। এটাই আমজনতার কাছে আর্ট ডিরেক্টরের কনসেপ্ট। তবে এটুকু বুঝতে পারি, ছবিটা দেখতে ভালো, এই বিষয়টা এখন দর্শক বুঝতে পারেন।’ 
কেরিয়ারের শুরুতে গৌতম বসু তন্ময়কে বলেছিলেন, ‘কাজ কর, পেমেন্ট চাইবে না।’ আজ তন্ময়ের কাছে নতুনরা কাজের জন্য আসেন। তাঁদেরকেও কি এমন কথা বলেন? ‘আমার ইউনিটে কেউ একদিন কাজ করলেও টাকা দিই। সে যেন না বলে, তন্ময়দার কাছে টাকা পেতাম, দেয়নি। গৌতমদা নিজের যুক্তিতে ঠিকই বলেছিলেন। সেসময় দেখেছি ম্যানেজাররা অ্যাটাচি নিয়ে আসতেন। ক্যাশ দিয়ে ভাউচারে সই করাতেন। ২০০০-এর পর বেশিরভাগই কর্পোরেট হয়ে গিয়েছে’, উত্তর দিলেন শিল্পী।
এত বছরের কেরিয়ারে এমন একজনের আস্থা অর্জন করেছেন তন্ময়, যা তাঁর কাছে জাতীয় পুরস্কারের শামিল। স্পষ্ট বললেন, ‘সমীর চন্দ আমার দ্রোণাচার্য। আমি ওঁর একলব্য শিষ্য। নানা কারণে পাকাপাকি ভাবে আমার মুম্বই যাওয়া হয়নি। সমীরদা বলেছিল, ‘তুই আর মুম্বই আসিস না। কলকাতায় কাজের লোক নেই। আমি কাজ পাঠাচ্ছি।’ মীরা নায়ারের ‘নেমসেক’, মণিরত্নমের ‘যুবা’  পাঠিয়েছিলেন। বলতেন, ‘তন্ময় আছে কলকাতায়, ও করে দেবে।’ এটা আমার কাছে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার মতো।’ 
বাংলা কাজ করবেন বলে জাতীয় স্তরের বহু কাজ ছেড়ে দেন তন্ময়। কিন্তু তাঁর সাধের টলিউড এখনও তৈরি নয়। আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘কলকাতায় আমরা ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলি বটে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি এখনও তৈরিই হয়নি। মুম্বই আসল ইন্ডাস্ট্রি। ১৯৬০ হোক, ২০২৩ বা অষ্টাদশ শতক- যা নিয়ে কাজ হবে, তার সব প্রপসের সাপোর্ট রয়েছে।’ 
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। পরিচালক হতে চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছেটা আজও লালন করেন? ‘আর্ট ডিরেকশনের মধ্যে ডিরেকশন শব্দটা রয়েছে। আর্ট ডিরেক্টর মানে কিন্তু শুধু আজ্ঞা পালন নয়। স্ক্রিপ্ট পড়ে যেন লাইট কোথা থেকে আসবে, ক্যারেক্টার কোথায় বসবে- নিজের ভাবনা আর্ট ডিরেক্টর বোঝাতে পারেন’, বললেন আত্মবিশ্বাসী তন্ময়।

6th     June,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ