স্বরলিপি ভট্টাচার্য: ‘গুণলে বছর কমে যায় শুনেছি। তা প্রায় ১৪ বছর ধরে অভিনয় করছি’, আড্ডার শুরুতেই বলছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেলা অভিনেত্রী পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়। থিয়েটার দিয়ে অভিনয় শুরু। বাড়িতে প্রতিদিন নাটকের মহড়া হত। পারিবারিক সূত্রে অভিভাবক হিসেবে পেয়েছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে। ফলে ভিত শক্ত।
পিঙ্কি বলছিলেন, ‘আমার বাবার মাসি সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। আমার সে অর্থে মাসি ঠাকুমা। আমি মামণি বলে ডাকি। বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। আমি ছিলাম মামণির ডিপার্টমেন্টে। কাঁথা পাল্টানো থেকে শুরু করে আমার জন্য সব করেছ মামণি। পড়াশোনা শেষ না করে অভিনয় করব, এটা মামণি চাননি। বরাবরই বলেছেন, থিয়েটার করতে চাও করো। এটা খুব অনিশ্চিত জায়গা। প্রথম যেদিন ওঁকে প্রণাম করে শ্যুটিং করতে যাচ্ছি মামণি বলেছিল, চেষ্টা করো দামি শিল্পী হতে নামী শিল্পী না হলেও চলবে, এটা আমার আজীবন মনে থাকবে।’
‘ফেরারি মন’ ধারাবাহিকে এখন ‘ময়না’র চরিত্রে পিঙ্কির অভিনয় দেখছেন দর্শক। ‘ময়নার লোভ হল, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। সেটার জন্য একজন মহিলা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। এটা খুব বাস্তব। এটা একটা রক্তমাংসের চরিত্র’, বলছিলেন অভিনেত্রী।
ব্যক্তি জীবনে একমাত্র পুত্র ওশ মল্লিক চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। তাকে নিয়ে এখন দৈনন্দিন কাটে পিঙ্কির। অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে পিঙ্কির ব্যক্তি সম্পর্কের টানাপোড়েন কিছুদিন আগেও ছিল সংবাদ শিরোনামে। সে সব সামলে মা-ছেলের সংসার কেমন চলছে? পিঙ্কির কথায়, ‘কাঞ্চনের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ নেই। এখন আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম থেকেই আমি ছেলেকে সময় দিতাম। এটা প্রকৃতির নিয়ম। বাচ্চারা সবথেকে বেশি অ্যাটাচ থাকে মায়ের সঙ্গে। আমি সবসময় মা হতে চেয়েছিলাম। ফলে মা হিসেবে ওশের দায়িত্ব আমার অনেক বেশি। এটা আমার ধারণা। এরপরেও অনেক কথা থাকে। আমি সেসবের মধ্যে যাচ্ছি না। বাজারে আমার কোনও ইএমআই নেই। সেজন্য অকপটে সত্যি বলতে পারি। আমার কোনও ইমোশন কাজ করে না। ছেলের দিকে তাকালে আমার কাঞ্চনের কথা মনে পড়ে না। আমার মনে হয় ও আমার ছেলে।’
কেরিয়ারের এতগুলো বছর পেরিয়ে আক্ষেপ রয়েছে কোনও? অভিনেত্রীর জবাব, ‘অনেকে বলে আমাকে ইন্ডাস্ট্রি ব্যবহার করেনি। আমি সেটা মনে করি না। বরং আমার মনে হয় আমাকে কেউ ভুল ভাবে ব্যবহার করেনি। বা আমি সেই সুযোগটা দিইনি। আমি একসময় একটাই ধারাবাহিক করেছি। ওই চরিত্রটার প্রতি জাস্টিস করতে পেরেছি।’ জীবনে নতুন প্রেম এল কি? হেসে বললেন, ‘মানুষের প্রতি প্রেম আর এল না। প্রতিদিন যে বলটা আসে আমি সেটা খেলার চেষ্টা করি। মুহূর্তে বাঁচি।’ এটাই তাঁর আজীবনের অভ্যেস। এটাই তাঁর শিক্ষা।