বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

তিনটি জন, ত্রিস্তরীয় মাথাব্যথা
 সত্যমেব জয়তে ২

প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার: যার যা পুঁজি, সে সেটা ভাঙিয়েই খায়। পরিমাণ মতো কমেডি মিশ্রিত অ্যাকশন ছবিতে জন আব্রাহামের গ্রিক দেবতা-সুলভ অঙ্গ-সৌষ্ঠবের চিরকাল পূজারী মহিলা ভক্তকুল। আর পুরুষ দর্শকরা ওই শরীর-শিল্পের দিকে অক্ষম ঈর্ষায় জুলজুল চোখে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু জন বিশাল বড় ভার্সেটাইল সুঅভিনেতা, এমন দাবি তাঁর কোনও পরম ভক্তও করবেন না। এই ছবিতে আবার তাঁর অভিনীত চরিত্রের সংখ্যা তিন। বাবা ও দুই যমজ ভাই। জনের প্রথম অবতার কৃষক নেতা দাদাসাহেব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতি দূরীকরণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে এক পুত্র জয় আইনের রক্ষক, অপর পুত্র সত্য আইন ভঙ্গকারী ধর্মযোদ্ধা। তিন অবতারে জনের মাত্রাজ্ঞানহীন ও বৈচিত্র্যহীন উচ্চগ্রামের অভিনয় হজম করার জন্য দর্শককে রীতিমতো ধৈর্যের পরীক্ষায় বসতে হয়। দিব্যা খোসলা কুমার (বিদ্যা) স্বামী সত্যের ক্রুসেডের মোকাবিলায় কোমর বেঁধে লেগে পড়েন। 
সত্যমেব জয়তে ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় ছবিটি এমন একটি গড়বড়ে ও বিশৃঙ্খল জগাখিচুরি, গণ-বিনোদনের চটুল অজুহাত দিয়েও যার ব্যর্থতাকে আড়াল করা যায় না। অশ্রুসিক্ত ও রক্তস্নাত অবিচারের মাখোমাখো গল্প। স্টিরিওটাইপ নির্মাণশৈলীর দোষে দর্শককের মন ছুঁতে পারে না ছবি। এমনকী, ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক বুনিয়াদ বা নারী-সুরক্ষার মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলোও স্রেফ প্রয়োগ ব্যর্থতায় নিতান্তই খেলো হয়ে উঠেছে। 
গণ-উত্তেজনার গনগনে আঁচে আইন হাতে তুলে নেওয়া জনতার তাৎক্ষণিক ও রিপুতাড়িত বিচারকে মহিমান্বিত করার রেওয়াজ বলিউডে দীর্ঘদিনের। সেই মতলবি ব্যবসায় এবারের দাবার বোড়ে জন। গণ-উন্মাদনাকে স্বীকৃতির মোহর দিতে গিয়ে বিভিন্ন জাতীয় প্রতীক ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামের যথেচ্ছ ব্যবহার চূড়ান্ত অবিবেচনা-প্রসূত। সমকালীন শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রসঙ্গ টেনে আনা এবং প্রকৃত স্বাধীনতার ইউটোপিয়ান ধারণাকে অক্সিজেন দিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া দেওয়ার একটা চতুর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। সেটাও তেমন কাজে আসেনি। 
দুর্নীতি বিরোধী জনমত, কৃষক অভ্যুত্থান, সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট— মোটামুটিভাবে সাম্প্রতিক কালে সংবাদ শিরোনামে আসা প্রতিটি ঘটনা পরিচালক-চিত্রনাট্যকার মিলাপ জাভেরি গল্পের মধ্যে তেড়েফুঁড়ে গুঁজে দিয়েছেন। কিন্তু অসঙ্গতিতে ভরা রূপকের ছড়াছড়ি ও ব্রেকিং নিউজের পাহাড় ডিঙিয়ে গল্পের বাঁধন মজবুত হয়নি। মনমোহন দেশাইয়ের সঙ্গে এক পংক্তিতে দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে জাভেরি একরাশ বিভ্রান্তিমূলক জোড়াতালি উপহার দিয়েছেন। কোমা থেকে জেগে ওঠা রোগিণীর অতিমানবিক কার্যকলাপ সামান্য একটা উদাহরণ মাত্র। স্থূল ডায়লগবাজির ঘোর অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে ছবির সংলাপ। 
থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড় ক্লাইম্যাক্সে প্রতীকীবাদের ছড়াছড়ি। জাফরানি ও সবুজ কুর্তায় সজ্জিত দুই যমজ ভাই লাঙ্গলের ফলায় বাঁধা মায়ের সামনে ধুন্ধুমার দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ। শেষমেশ গ্রামবাসীরা দেশের মানচিত্রের আকারে জমায়েত হয়ে প্রকৃত ভিলেনের দফারফা করে। 
টি সিরিজ ফিল্মস ও ইমামি এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত এই ছবিতে প্রাপ্তি বলতে তিনটি বিষয়। নোরা ফতেহির স্মার্ট ‘কুসু কুসু’ আইটেম নাম্বার, ডুবলির ঝাঁ-চকচকে সিনেমাটোগ্রাফি এবং মাহির জাভেরির বুদ্ধিদীপ্ত এডিটিং। 
ফরাসি ভাষায় ‘দেজা ভু’ বলে একটি চমৎকার কথা আছে। জীবনে চলার পথে অনেক সময় অনেক কিছুকেই পূর্বপরিচিত বলে মনে হয় মানুষের। এই অভিজ্ঞতার নামই দেজা ভু। সাধারণত সদর্থক অর্থেই কথাটি বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এই ছবি দেখার অভিজ্ঞতাটি সর্বোচ্চ নেতিবাচক দেজা ভু!

30th     November,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ