সুপ্রিয় নায়েক: ভারতীয় ফুটবলের জনক নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর নেতৃত্বেই ১৮৯২ সালে ট্রেডস কাপে ব্রিটিশদের ফুটবলে হারায় শোভাবাজার ক্লাব। এই ঘটনায় দিকে দিকে জ্বলে ওঠে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবের আগুন। গোলন্দাজ ছবিটি তৈরি হয়েছে এই নগেন্দ্রপ্রসাদের জীবন ঘিরে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেব। ক্রীড়া পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই তিনটি ক্ষেত্রেই তিনি জাম্প দিয়ে জাম্পকাটে জেরবার করে দিয়েছেন দর্শককে। আসলে ইতিহাস বইয়ে লেখা অক্ষরের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতে গিয়ে পরিচালক নগেন্দ্রপ্রসাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে একবার করে ছুঁতে চেয়েছেন। ফলে নগেন্দ্র এই একবার গড়ের মাঠে ফুটবলে কিক দিচ্ছেন তো পরের দৃশ্যে কুস্তির আখড়ায় বিবেকানন্দকে দেখছেন তো পরের ঘটনায় রাগবি খেলছেন, আবার হুট করে পিটুনি খাচ্ছেন। এরপর তাঁকে একজন ফুটবল কিনে দিচ্ছেন! আবার একজন বিপ্লবী গাজনের শিব সেজে (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) লেকচার দিচ্ছেন, আবার ফুটবল খেলোয়াড়রা আপেল পড়ার মতো নগেন্দ্রর সামনে চলে আসছেন! দুম করে বিয়ে হচ্ছে, শেক্সপিয়রের নাটকের অনুবাদও হচ্ছে! কী যে জগঝম্প ব্যাপার! মোট কথা ছবিতে ঘটনাক্রম নদীর একমুখী স্রোতের মতো বয়ে চলেনি। স্বভাবতই যাত্রীদের সুষুম্নাকাণ্ডে লেগেছে জোর ঝাঁকুনি! সংলাপ প্রসঙ্গেও দু’-এক কথা বলতে হয়! এ ছবিতে সংলাপ খুবই কম। ধারাভাষ্যকারই ডকুফিচারের ধাঁচে সব বর্ণনা দিয়ে গিয়েছেন। আবার যেটুকু কথা চরিত্ররা বলেন সেই সংলাপের মধ্যে পারস্পরিক কোনও মিল নেই। কতগুলি উদাহরণ দেওয়া যাক— কোথাও কোনও কারণ নেই, হঠাৎ মা এসে নগেন্দ্রকে বলেন, ‘শোভাবাজারের রাজার মেয়ের সঙ্গে তোর বিয়ের ঠিক হল।’ বলেই চলে যান। নগেন্দ্র কিছু বলেন না। তাঁর মানসপটে ফুটে ওঠে কমলিনীর মুখ! অথচ এই দৃশ্যের আগে কমলিনীকে নগেন্দ্র দেখেছেন পালকির পর্দার ফাঁক দিয়ে মাত্র দু’বার! ওই দেখাতেই যে, কমলিনীর প্রতি নগেন্দ্র দুর্বল হয়েছেন সেকথাও কোনওভাবে বোঝা যায়নি! আবার একটা দৃশ্যে দেখা যায় নগেন্দ্রকে ষাঁড়ে গুঁতো মেরেছে। বাবা সূর্যকুমার (শ্রীকান্ত আচার্য) ছেলের পেটের আঘাত সেলাই করছেন। সেলাই শেষ করেই কোনও ভূমিকা ছাড়াই বলে দিলেন আর খেলার কথা ভাবাও যাবে না! ব্যস ওখানেই দৃশ্য শেষ। বাবা হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেকে এভাবে শরীরের সঙ্গে মনের যন্ত্রণাও দেওয়া যায়! আবার খেলার মাঠে জ্যাকসন নামে এক ব্রিটিশ খেলোয়াড় নগেন্দ্রপ্রসাদকে বলেন, ‘এই খেলা আমাদের, মাঠ আমাদের।’ উত্তরে নগেন্দ্ররূপী দেব বলেন ওঠেন, ‘বারুদে আগুন তুমি দিয়েছ।’ অর্থ কী? আগুন না দিলে নগেন্দ্র জাগত না? এই ছবির শরীর হওয়া উচিত ছিল ফুটবল আর আত্মা দেশাত্মবোধ। কিন্তু এই জাম্পকাটেই সব গুলিয়ে গিয়েছে।
অবশ্য, ছবির দ্বিতীয়ার্ধ অনেকটাই ভালো। খেলাও দেখানো হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন ফুটবল। ছবিতে গান আছে। বন্দেমাতরম গানটির রেশ মনে থেকে যায়। তবে, এমন একটা ছবি তৈরির উদ্যোগ যে নিঃসন্দেহে মহৎ, তা স্বীকার করতেই হয়।