বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

এক অন্য মেয়ের গল্প
 পাগলেইট

শৌণক সুর: উত্তর ভারতের এক শহরের কাকভোর। শীতের কুয়াশা ধীরে ধীরে সরে গিয়ে রাস্তায় মানুষের শশব্যস্ত পায়ের আওয়াজ। এর মধ্যেই এলাকার এক বাড়িতে শোকের ছায়া। এই বাড়িরই এক তরতাজা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দূরদূরান্তের আত্মীয়রা আসতে শুরু করেছে। এই যুবকের সঙ্গেই মাস পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছিল সন্ধ্যার (সানিয়া মালহোত্রা)। বাপেরবাড়ি থেকে সন্ধ্যার মা-বাবা এসে কান্নায় ভেঙে পড়ল। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর শোকের লেশমাত্র নেই স্ত্রীর চেহারায়। চোখে নেই একবিন্দু জল। শান্ত গলায় শাশুড়িকে বলে বসে, সকালে সে চা খাবে না। বরং একটা ঠান্ডা পানীয় আনিয়ে দিলে ভালো হয়। ফেসবুক ঘাঁটছে, চিপস খাচ্ছে। সময় কাটছে না সন্ধ্যার। হঠাৎ বান্ধবী নাজিয়াকে (শ্রুতি শর্মা) সে জানায়, ছোটবেলায় তার একটা বিড়াল ছিল। নাম ছিল ক্যাটরিনা। সে মারা যাওয়ায় তিনদিন প্রচণ্ড কান্নাকাটি করেছিল ও। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু এবার সেরকম কিছুই হচ্ছে না, বরং থেকে থেকে খিদে পাচ্ছে। স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীয়ের একি অনুভূতি! এরমধ্যে পরলোকগত স্বামীর আলমারি থেকে একটি মেয়ের ছবি উদ্ধার করে সে। তার পিছনে লেখা ‘ফর মাই জানু’। কে এই মেয়েটি? কোথায় থাকে? তারই খোঁজ শুরু করে সন্ধ্যা। 
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া পরিচালক উমেশ বিস্তের এই ছবি একেবারেই ফ্যামিলি ড্রামা। সমাজের বাস্তব সমস্যাকেই নতুন আঙ্গিকে পেশ করছেন তিনি। নৈপুণ্যের সঙ্গে মহিলাদের বিভিন্ন প্রতিকূলতা তুলে ধরেছেন। ছবিতে প্রচুর চরিত্র রয়েছে। তবে সকলেই নিজের নিজের জায়গায় সাবলীল। তাঁদের মধ্যে অবশ্যই সেরা সানিয়া মালহোত্রা। এর আগে ‘লুডো’, ‘পটাখা’ , ‘বধাই হো’-তে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। কার্যত সেই একই ধারা বজায় থাকল এই ছবিতেও। পাঁচ মাসে স্বামীকে কাছ থেকে চিনতে পারেনি সন্ধ্যা। দু’জনে একসঙ্গে ভালো সময়ও কাটায়নি। তাই হয়তো মনের মিল নেই। দেখা দেয়নি বৈবাহিক প্রেমও। কিন্তু স্বামীর আলমারি থেকে ছবি উদ্ধারের পরই সেই চিন্তাধারা গেল পাল্টে। আগে সে ভাবত তার স্বামীর মধ্যে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ নেই। কিন্তু সেই ভুল যখন ভাঙে তখন মৃত স্বামীর অতীত জানতে বদ্ধপরিকর হয় সে। স্বামীর বান্ধবীটি কে? তারা কীভাবে, কোথায় সময় কাটাত জানতে চায়। স্বামীর পছন্দের রং, খাবার সে জানে না। কিন্তু সেই মহিলা হয়তো জানে। ধীরে ধীরে নিজেকে যেন নতুন করে খুঁজে পায় সন্ধ্যা। একসময় ক্ষমাও করে দেয় স্বামীকে। এই ধরণের প্রতিটি অভিব্যক্তিতে নিজের সেরাটা দিয়েছেন সানিয়া। দর্শকদের নজর কেড়েছেন আশুতোষ রানাও। মৃতের বাবার চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। বলিষ্ঠ অভিনয় আশুতোষের। পুত্রশোক, আর্থিক সমস্যায় পরিবার ধুঁকছে, কিন্তু তিনি কর্তব্যে অবিচল। তিনি ন্যায়ের প্রতীক। অন্যায়ের পথ থেকে কয়েক যোজন দূরে। চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছেন সায়নী গুপ্তা, শিবা চাড্ডা, আসিফ খান, রঘুবীর যাদব, মেঘনা মালিকরাও। ছবির চিত্রনাট্য ভালো। গল্পের শুরুটা কিছুটা ধীর। ফলে ধৈর্য না থাকলে অনেক দর্শক প্রথমেই উৎসাহ হারাতে পারেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনওভাবেই হতাশ হবেন না একথা হলফ করে বলা যায়। শোকস্তব্ধ পরিবারের কাহিনি যাতে একঘেয়ে না হয়, তারজন্য বুদ্ধিমানের মতোই কিছু জায়গায় কমিক রিলিফের জোগান রেখেছেন পরিচালক। ভিন্ন ধর্মের মেলবন্ধনের বার্তাও রয়েছে। সমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরেই বঞ্চিত। কেউ তাঁদের ইচ্ছার দাম দেয় না। কিন্তু তাঁরাও এগিয়ে যেতে চায়। মাথা উঁচু করে চলতে চায়। ছবির শেষে যেন এই বার্তাই দিয়েছেন পরিচালক। ফলে দেখা মিলেছে অন্য এক মেয়ের, ভিন্ন এক গল্পের। 

7th     April,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ