বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সিনেমা
 

পালিয়ে যাওয়ার সেকাল একাল
সিনেমার সমালোচনা: পালান

‘আমি কবি নই, আমি নস্টালজিয়ার বিরুদ্ধে ফাইট করি। নস্টালজিয়া চলে যায় সেন্টিমেন্টালিজমের দিকে। আর তা থেকে এসে যায় একটা মিথ্যাচরণ।’ মৃণাল সেনের এই একটি উদ্ধৃতিই তাঁর সমগ্র সত্তার সংজ্ঞা। শিল্প-সৃষ্টির নিবিষ্ট মুহূর্ত থেকে ব্যক্তি-জীবনের ভাবোচ্ছ্বাস, সমস্ত আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এই একটি কাঠখোট্টা জীবনদর্শনের নির্দয় লাগামে। ‘খারিজ’ ছবিটিও তার ব্যতিক্রম নয়। নাবালক গৃহ পরিচারক পালানের প্রতি অঞ্জন-মমতা দম্পতির অমানবিক উদাসীনতা মৃণালের নয়া বাস্তববাদী চলচ্চিত্র দর্শনে আপত্তিকর আচরণ নয়। পালানের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে শ্মশানযাত্রীদের প্রতি ওই দম্পতির আন্তরিকতা প্রদর্শনও স্পষ্টতই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার উপায় অনুসন্ধান মাত্র। পরিচালক মৃণাল কখনও নিজের সৃষ্ট চরিত্রদের নৈতিকতা বিচারের দায়ভার নেননি। তার কারণও তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আমি যেহেতু আমাকে নিয়েই চিন্তিত, বিব্রত, আমাকে নিয়েই সব সময় রয়েছি, তাই আমি কীভাবে পরিবেশ অনুযায়ী রিঅ্যাক্ট করছি, সেটাই দেখতে হবে। আপনি যখন আমার ছবি দেখতে যাবেন, প্রথমেই আমার ছবিকে মেনে নেবেন।’ 
‘খারিজ’ ছবির মূল কাহিনিকার রমাপদ চৌধুরী ও পরিচালক মৃণাল সেনের পিঠোপিঠি জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পালান’ ছবিটি। অঞ্জন-মমতা দম্পতি (অঞ্জন দত্ত ও মমতাশঙ্কর) এখন বার্ধক্যপীড়িত। বেলতলার সেই ভাড়াবাড়ির বাসিন্দা। তাঁদের পুত্র পুপাই (যিশু সেনগুপ্ত), পুত্রবধূ পাওলি (পাওলি দাম) ও নাতনি গুটি কসবার দুই বেডরুম ফ্ল্যাটবাসী। উভয় পক্ষের সম্পর্কের সেতুটি মজবুত। মৃণাল সেনকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কৌশিক তাঁর নিজস্বতা হারাননি। কৌশিকের অঞ্জন-মমতা জীবনের প্রতিটি মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বস্ত। অস্তিত্বের সংগ্রামে নিরন্তর সন্তরণের অভিঘাতে তাঁদের সুকোমল বৃত্তিগুলি নিজেদের কক্ষপথ থেকে পালিয়ে যায়নি। কৌশিকের চরিত্রেরা পরিচালকের কড়া নজরদারিতে যাবতীয় সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বরাবর যেমন পরিশীলিত আচরণবিধি মেনে চলে, এই ছবিতেও তার ব্যত্যয় হয়নি। এমনকী ড্রাইভার হরির (দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত) প্রতিও সকলের মেলামেশায় কোনও আরোপিত কৃত্রিমতা চোখে পড়েনি। 
স্থান-কাল নির্বিশেষে পালানদের সব সময় জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে পালিয়েই যেতে হয়। এই ছবিতে মৃত পালানের অল্টার ইগো বান্টির মৃতা মা। মৃণালের অঞ্জন-মমতা লোকনিন্দা ও আইনি আতঙ্কের গ্রাস থেকে পালাতে চেয়েছিল। কৌশিকের অঞ্জন-মমতার পলায়ন মানসিকতা বহুমাত্রিক। শত সঙ্কটের মাঝেও সন্তানের পারিবারিক জীবন ও ব্যক্তিগত পরিসর থেকে সযত্নে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখা, বার্ধক্যজনিত পীড়ার যন্ত্রণা থেকে পালানোর রাস্তা খোঁজা এবং সর্বোপরি সামাজিক-রাজনৈতিক চক্রব্যূহ থেকে পালানোর মরিয়া প্রয়াস। মৃণাল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যে পলায়নবাদের শেষ খোঁজার কোনও চেষ্টাই করেননি, কৌশিক সেই সমাধান সূত্রটিও শেষমেশ বের করেছেন, যা অপ্রকাশিতব্য। 
নীল দত্তের নেপথ্য সঙ্গীত স্বতন্ত্র উল্লেখের দাবি রাখে। গোটা ছবিতে অনবদ্য শিল্প-নির্দেশনার ছাপ। আপ্পু প্রভাকরের সিনেমাটোগ্রাফি ও শুভজিৎ সিংহের সম্পাদনার যুগলবন্দি সামান্য বিলম্বিত লয় অবলম্বন করেছে, যা কৌশিকের ছবিতে ব্যতিক্রমী। এই ছবির অবিসংবাদী প্রোটাগনিস্ট অঞ্জন দত্ত। বাকি অভিনেতারা সচেতন আন্ডার-অ্যাক্টিং করে তাঁকে মদত দিয়েছেন।
প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার 

22nd     September,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ