বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সিনেমা
 

রাজনীতি শুধুই রাস্তায়
নেমে ভোটের প্রচার নয়!

মুক্তি পাচ্ছে ‘ট্যাংরা ব্লুজ’। মুখ্য চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। এক বিকালে কফির আড্ডায় পাওয়া গেল তাঁকে। সিনেমা থেকে রাজনীতি সব বিষয় নিয়ে তঁার সঙ্গে কথা বললেন অভিনন্দন দত্ত।

 কী ব্যাপার বলুন তো, ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এর পর আবার! ট্যাংরা অঞ্চলটা আপনার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে দেখছি।
 (হেসে) এটা নেহাতই কাকতালীয়। এর মধ্যে অনেকগুলো কাজই করেছি। কিন্তু সিনেমাহলে মুক্তির কথা ধরলে, এই দুটো ছবিতেই ট্যাংরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
 গত কয়েকটা মাস তো আপনার বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কাটল?
 এখনও চলছে ব্যস্ততা। আর ঈশ্বরের আশীর্বাদে যেন সেটাই চলে। গত বছর অক্টোবর থেকে বাইরে বাইরে কাটছে। ‘আরণ্যক’ সিরিজটা শেষ করলাম। তারপর এই ছবিটা। এখন আর একটা সিরিজের শ্যুটিং করছি।
 এই ব্যস্ততার মধ্যেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ। ‘অভিযান’-এর কাজ বাকি। সব মিলিয়ে কতটা কঠিন ছিল ওই সময়টা কাটিয়ে ওঠা?
 আমি তো ওঁর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। ছবির কাজ চলতে চলতে তিনি যে চলে যাবেন, সেটাও ভাবিনি। ওঁর প্রয়াণের দিন আমি ছিলাম হিমাচল প্রদেশে। ফিরে যে ওঁর সঙ্গে আর কখনও কথা বলতে পারব না—এটা মেনে নেওয়া আমার কাছে খুবই কষ্টের ছিল।
 সত্য ঘটনার প্রেক্ষিতে বস্তির একটা ব্যান্ডের নেপথ্য কাহিনি বলে ‘ট্যাংরা ব্লুজ’। হঠাৎ এরকম একটা ছবির পাশে দাঁড়ালেন কেন?
 ছ’বছর আগে ওদের (সঞ্জয় মণ্ডল অ্যান্ড গ্রুপ) সঙ্গে আলাপ হয়। তখন থেকেই একটা ছবি করার ইচ্ছা ছিল। তারপরে অবশ্য সুপ্রিয়দা (পরিচালক সুপ্রিয় সেন) ওদের নিয়ে একটা তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। আমাদের প্রযোজনা সংস্থা কিছুতেই কাজটা শুরু করতে পারছিল না। সঞ্জয় ও বাচ্চাগুলোর লড়াইটাকে বুঝতেই আমরা পাঁচটা বছর সময় নিয়েছিলাম।
 তার মধ্যেই তো ‘গালি বয়’ এবং ‘আটকান চাটকান’-এর মতো হিন্দি ছবি দর্শক পেয়েছেন।
 এটাও কাকতালীয়। ওই ছবিগুলো তৈরি হয়েছে বলেই হয়তো এখন বারবার তুলনা টানা হচ্ছে। কিন্তু ওই ছবিগুলোর যখন নামও কেউ শোনেননি, তখন আমরা ছবিটার চিত্রনাট্যের প্রথম খসড়া লিখেছিলাম।
 এরকম একটা ছবি বাংলার প্রযোজকদের কি অন্যরকম বার্তা দেবে বলে মনে হয়?
 দেখুন ফেলুদা, ব্যোমকেশ বা দাদা-দিদিদের নিয়ে অ্যাডভেঞ্চারধর্মী ছবি হচ্ছে—খুব ভালো। আমার কোনও আপত্তি নেই। কারণ এই ছবিগুলো ব্যবসা আনলে ইন্ডাস্ট্রির উপকার। মুশকিল এটাই যে, আমাদের এখানে একটা জিনিস সফল হলে তার পুনরাবৃত্তি শুরু হয়। দর্শক সেখান থেকে বেরিয়ে এলেও নির্মাতারা হয়তো তখনও বেরিয়ে আসতে চান না। এখানেই আমার আপত্তি। তাই পুরো বিষয়টা তখন একটা মধ্যমেধার মধ্যে আটকে পড়ে। তাই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে।
 একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। ‘নিজেদের মতে নিজেদের গান’ নিয়ে এখন দেশজুড়ে আলোচনা হচ্ছে। ভোটের আগে একটা প্রতিবাদী গান এবং তা নিয়ে এই আলোড়ন আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিলেন?
 সত্যিই এই গানটা নিয়ে যে জাতীয় স্তরে চর্চা শুরু হবে, সেটা ভাবিনি। আমরা কেউই দলীয় রাজনীতি করি না। দুঃখের বিষয়, গত পাঁচ-ছ’বছরে দেশে অন্যরকমের কথা বললে বা প্রশ্ন করলে তাকেই ‘দেশবিরোধী’ বলে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলে নেই, তাঁরা কোনও সত্যি কথা বলতে গেলে জুটছে ‘আঁতেল’ বা ‘সুশীল সমাজ’ এর মতো বিভিন্ন তকমা। অথচ সভ্যতার ইতিহাসে এই তথাকথিত সুশীল সমাজ সবসময় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। তখন আইডিয়াটা মাথায় আসে। গণতন্ত্রে যুক্তি দিয়ে কেউ বিরোধিতা করতেই পারেন। কিন্তু কথা বলতে গেলে হয় শাসকের পক্ষে নয়তো বিরোধী পক্ষের হয়ে বলতে হবে, এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। রাজনীতি আসলে একটা বিশ্বাস, শুধুই রাস্তায় নেমে ভোটের প্রচার নয়!
 আপনি বরাবরই সোশ্যাল মিডিয়ায় স্পষ্টবক্তা। শিল্পীদের নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছেন। নেটমাধ্যমে সোজাসাপ্টা কথা বলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় না?
 আসলে যতটা সরাসরি বলতে চাই, ইচ্ছে করেই ততটা বলি না। কারণ মারাত্মক ট্রোলিং শুরু হয়। আমার একটা মত প্রকাশের জন্য যখন দেখি হাজার হাজার বেনামী প্রোফাইল থেকে অযৌক্তিক কমেন্ট, বিশেষ করে গালিগালাজ ধেয়ে আসছে, তখন সত্যিই খারাপ লাগে। মনে হয়, দেশের একটা বড় অংশের মানুষ এইভাবেও ভাবতে পারেন! দ্বিতীয়ত, মনে হয় এঁদের একটু বলি যে চলুন যুক্তি দিয়ে লড়াই হোক। আবার তার মানে প্রত্যেকটা কমেন্টের উত্তর দিতে হয়। আর সেটা করতে হলে জানি শেষপর্যন্ত আমার নিজের কাজের ক্ষতি হবে।
 এবারের ভোটে তারকা প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আপনার বন্ধু। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির রাজনৈতিক মেরুকরণে তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয় কি কাজ করে?
 কোনও দলই ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ নয়। কিন্তু কোথাও যেন একটা লাইন টানতেই হয়। আমাদের গানটা শুনলেই পরিষ্কার হয় যে কাদের আদর্শের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলছি। তারা একদিকে এবং দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল যে অন্যদিকে সেটা আমার কাছে স্পষ্ট। তাই সেই শিবিরে যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার অভাব কোনওদিন হবে না। তাছাড়া তাঁদের অনেকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। আবার এটাও ঠিক যে, তাঁদের কারও সঙ্গেই আমি ভোর তিনটের সময় ফোনে কথা বলতাম না। বন্ধুত্ব ছিল, থাকবে। পরস্পরের প্রতি সৌজন্যবোধ থাকবে। কিন্তু ভবিষ্যতে তাঁদের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগটা হয়তো নাও থাকতে পারে।
 এখন ভোটের বৈতরণী পার করতেও যেমন শিল্পীরা রয়েছেন, উল্টোদিকে তাঁদের বিরোধিতাও চলছে। একজন শিল্পী হিসেবে নির্বাচনের পর যে দল ক্ষমতায় আসবে তাদের কী বলবেন?
 একটাই কথা বলব। আপনারা শিল্পীদের একটু সম্মান করতে শিখুন। শিল্পীদের একটু মননশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখুন। যদি একপক্ষ খুব খারাপ কথা বলে চূড়াম্ত মেরুকরণ করার চেষ্টা করে, তাহলে বিরোধী পক্ষ পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে যেন একই জিনিসটা না করেন। অধমের উত্তরে অধম না হয়ে একটু উত্তম হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এটাই সভ্যতার নিদর্শন।
 শেষ প্রশ্ন। এরপর নতুন কাজের মধ্যে কী কী রয়েছে?
 জুনে একটা হিন্দি ছবি করার কথা। অরিত্র সেনের পরিচালনায় ‘ভ্রমণসঙ্গী’ ছবিটা রয়েছে। আরও কয়েকটা বাংলা ছবি নিয়ে আলোচনা চলছে।  

9th     April,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ