বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সিনেমা
 

মহামারীর আতঙ্ক কাটিয়ে
ডোভার লেন সঙ্গীতানুষ্ঠান 

পণ্ডিত যশরাজ স্মরণে ‘ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স’-এর ৬৯তম বার্ষিক অধিবেশন সম্প্রতি কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল। কোভিড পরিস্থিতিতে এই প্রথম রাতভর চলল না এই ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতানুষ্ঠান। চার দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমিত চৌধুরী কণ্ঠসঙ্গীত শুনে হতাশ হতে হয়েছে। এদিন সরোদিয়া সিরাজ আলি খান দাদাগুরু ও পিতামহের সৃষ্ট রাগ হেমবেহাগ ও মধুমালতী বাজিয়ে শোনান। শিল্পীর সঙ্গে অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের তবলা সঙ্গত উল্লেখযোগ্য। পিতা দীপক মহারাজ ও কন্যা রাগিণী মহারাজের দ্বৈত কত্থক নৃত্যের বোল পরন, তৎকার এবং কুমার বোসের সঙ্গে তবলায় অসামান্য তাৎক্ষণিক সওয়াল জবাব দর্শকদের প্রভূত আনন্দ দেয়। সঞ্জীব অভয়ঙ্করের উদাত্ত কণ্ঠর সঙ্গে শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যমের কুশলী বাঁশি চয়ন করে রাগ মধুমন্তী ও ভূপালী। তবলায় বিক্রম ঘোষ যোগ্য সহযোগিতা করেন। ২০২১-এর সঙ্গীতসম্মান প্রাপক অজয় চক্রবর্তী প্রথমে বাগেশ্রী ও পরে ভৈরবী গেয়ে মাতিয়ে দেন। তবলায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সঙ্গত উল্লেখযোগ্য।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে অভিষেক লাহিড়ী শ্রুতিমধুর সরোদে রাগ জৌনপুরী পরিবেশন করেন তবলিয়া ঈশান ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে। কলকাতার উমা মেমোরিয়াল কলায়লাম কথাকলি নৃত্য উপস্থাপন করেন। প্রবীণ সন্তুর বাদক সতীশ ব্যাস অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মধুমন্তী ও কিরওয়ানি রাগ পরিবেশন করেন। আগ্রা ঘরানার কণ্ঠ শিল্পী ভারতী প্রতাপের রাগ ‘শ্রী’ ও পরে আনন্দী কল্যাণের বন্দিশ অনবদ্য। শেষে মীরার ভজন এদিনের সমগ্র অনুষ্ঠানের সেরা প্রাপ্তি। সমর সাহার পরিমিত ও বুদ্ধিদীপ্ত সঙ্গত মনে রেখাপাত করে।
ইন্দ্রজিৎ বসু তৃতীয় দিনের শুরুতে বাঁশিতে পটদীপ রাগের যথাযথ রূপ ফুটিয়ে তোলেন। সঙ্গে যোগ্য তবলা সঙ্গত উজ্জ্বল ভারতীর। ওমকার দাদরকার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় প্রথমে মাড়োয়া ও পরে উপভোগ্য তিলক কামোদ গেয়ে শোনান। মিতা নাগ সেতারে ললিতা গৌরী রাগে সুরেলা আলাপ, জোড় ও ঝালার পর মধ্যলয় পূর্বী এবং পুরিয়া কল্যাণ রাগে দ্রুত বন্দিশ বাজিয়ে শোনান। শুভেন চট্টোপাধ্যায়ের বুদ্ধিদীপ্ত তবলা সঙ্গত প্রশংসার দাবি রাখে। জয়তীর্থ মেভুন্দি পরিবেশন করেন প্রথমে রাগ শুদ্ধকল্যাণ ও পরে বসন্ত। বিস্তারের পর বৈচিত্র্যময় তান শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রাখে। অমিত চট্টোপাধ্যায় তবলায় যোগ্য সহযোগিতা করেন। আমন আলি বাঙ্গাশ সরোদে প্রথমে সরস্বতী রাগে একটি একতাল গৎ এবং পরে মন্দ্র ও মধ্য সপ্তকে ললিত গৌরী রাগ পরিবেশনায় মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন। শিল্পীর শেষ নিবেদন ছিল রাগ মালকোষ। শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তবলার সঙ্গে দুরূহ তানকারী, তেহাই উপভোগ্য ছিল। যদিও মালকোষ রাগের পরিবেশনের সময় নির্বাচন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।
সম্মেলনের শেষ দিনে কণ্ঠশিল্পী অত্রি কোটাল ভীমপলশ্রী রাগে অপরাহ্নের বিষণ্ণতায় তিনতাল ও একতালে দু’খানি বন্দিশ গেয়ে শোনান। বিভাস সাংঘাই শিল্পীকে তবলায় নির্ভরতা দেন। পটদীপ রাগে নন্দিনী সরকার ও দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায় রণদীভের বেহালা ও বাঁশির সুরেলা যুগলবন্দির সঙ্গে সন্দীপ ঘোষের সার্থক সঙ্গত প্রশংসনীয়। তন্ময় বসু (তবলা), সতীশ পাত্রী (মৃদঙ্গম ) ও গিরিধর উদুপার (ঘটম)-এর মিলিত তালবাদ্য শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখে। ইমদাদখানি বাজের প্রতিভূ অনুপমা ভাগবত সেতারে ঝিঁঝোটি রাগে আলাপ জোড়ের পর মধ্য লয় ও দ্রুত তিনতালে দু’খানি গৎ বাজিয়ে শোনান। শিল্পীর মীড়ের কাজ, একহারা তান গুণীজনের কাছে প্রশংসিত হয়। রশিদ খান সাহেবের সুযোগ্য প্রতিশ্রুতিমান পুত্র আরমান খান পুরিয়া রাগে চমৎকার একটি খেয়াল গেয়ে শোনান। পরিশেষে রশিদ খান তাঁর অসামান্য কণ্ঠমাধুর্যে পর্যায়ক্রমে রাগ যোগ, নায়কী কানাড়া, জনসম্মোহনী, সোহিনী, বহুশ্রুত ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’ ও ভৈরবী গেয়ে সম্মেলনের মধুর পরিসমাপ্তি করেন। অসামান্য মীড়ের কাজ, বোলতান, সপাট ও ছুট তানে সাজানো ছিল তাঁর নিবেদন। কথায় আছে যা ধরেন তাই সোনা। এদিন রশিদ খান সম্পর্কে এই বিশেষণ যোগ করলে এতটুকু অত্যুক্তি হবে না। শিল্পী শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তবলা অনুষ্ঠানটিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়। সমগ্র অধিবেশনকে সমৃদ্ধ করে হারমোনিয়ামে হিরণ্ময় মিত্র, সনাতন গোস্বামী, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মিশ্র, প্রদীপ পালিত ও রূপশ্রী ভট্টাচার্যের সঙ্গত, সারেঙ্গিতে মুরাদ আলি, সারওয়ার হোসেনের সহযোগিতা।
—অমিত চক্রবর্তী ছবি: অভিজিৎ সেন  

26th     February,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ