বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

মাসখানেক ধরে কাশি, কী করবেন?

পরামর্শে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি  বিভাগের প্রধান ডাঃ দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায়

পুজোর ঠিক আগে আগে বর্ষা হচ্ছে। আবার রোদ উঠছে। ছোটবড় সকলেরই আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা শ্বাসনালীর ওপরের দিকের সংক্রমণ হচ্ছে। ঘরে ঘরে এক সমস্যা। হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে জল বেরনো, চোখ চুলকানো। কারও সঙ্গে জ্বরও আসছে। বেশিরভাগ সময় ২-৪ দিনে কমে যাচ্ছে। তবে কাশি থেকে যাচ্ছে। শিশু এবং বয়স্কদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া হচ্ছে ৩০-৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে। বাকি ৬০-৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অন্য জটিলতা দেখা যাচ্ছে।

কেন এভাবে কাশি? 
হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে জল বেরনো, চোখ চুলকানো, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়ার মতো লক্ষণগুলি দু’টি আলাদা অসুখ থেকে হতে পারে। প্রথমটি কমন কোল্ড। চলতি মরশুম কিন্তু কমন কোল্ড-এর মরশুম। আর কমন কোল্ড হয় ভাইরাসের প্রভাবে। দ্বিতীয় কারণ অ্যালার্জি। 
ঘন ঘন আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার প্রভাবে ঘরের অন্দরে অ্যালার্জেনের মাত্রা খুব বেড়ে যায়। কারণ ঘরে রোদ কম ঢোকে ও কোনও কোনও বাড়িতে এসিও বেশি চলে। এক্ষেত্রেও লক্ষণ ভাইরাল ডিজিজ-এর মতো। 

কীভাবে বুঝবেন সমস্যাটি ভাইরাস নাকি অ্যালার্জি জনিত?
ভাইরাসের সমস্যা ৫-৭ দিনে চলে যায়। সঙ্গে জ্বর থাকে। অ্যালার্জিতে সমস্যা চলতেই থাকে। অ্যালার্জিজনিত উপসর্গে জ্বর থাকে না।

কী করবেন?
জ্বর এবং উপরিউক্ত উপসর্গ থাকলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু আছে কি না জানতে রক্তপরীক্ষা করান। না থাকলে সেক্ষেত্রে কমন কোল্ড ধরে নিয়ে করতে হবে চিকিৎসা। রোগীকে দিতে হবে প্যারাসিটামল। ভাইরাল ইনফেকশনে রোগী খুব দুর্বল বোধ করেন। মনে হয় যেন শরীরটাকে টেনে নিয়ে কাজের জায়গায় যেতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৩টি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া। গলাকে বিশ্রাম দেওয়া।  প্রচুর জলপান। 

কেন গলাকে বিশ্রাম দেবেন? 
কাশির সমস্যার মূল কারণ ভাইরাল ইনফেকশন হলে তা গলার স্বরযন্ত্রকেও আক্রমণ করে ও প্রদাহ তৈরি করে। কথা কম বললে স্বরযন্ত্র দ্রুত সেরে উঠবে। অথচ রোগী কমন কোল্ডের সমস্যা নিয়েই কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন। যত কথা বলছেন, তত সমস্যা বাড়ছে। তাই দরকার বিশ্রাম ও স্টিম নেওয়া। 
অনেকসময় প্রাথমিকভাবে ভাইরাল ইনফেকশনের পর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও ঘটে। জ্বর প্রথম দিকে ১০০-১০১ মতো থাকলেও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার পর বেড়ে ১০২-১০৩ হয়ে যায়। বয়স্কদের এমনিতেই ফুসফুসের জোর কম থাকে। ফলে এরপর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনমন ঘটে। সেক্ষেত্রে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। 
বাচ্চাদের কাশি না কমলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হতে পারে। এছাড়া আলাদা করে দেখতে হবে নাকের পিছনে অ্যাডিনয়েডস গ্ল্যান্ড বড় হয়ে রয়েছে কি না বা টনসিলে ইনফেকশন আছে কি না! এখন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের পক্ষে টনসিল বা অ্যাডিনয়েডস-এর সমস্যা চট করে বোঝা মুশকিল। একাটানা কাশি হলে তখন বাচ্চাদের ইনহেলার দেওয়া হয়। অথচ জটিলতা কমে না। মূল সমস্যাটি রয়ে যায় অ্যাডিনয়েডস বা টনসিলে। সেক্ষেত্রে এক্স-রে করে মূল সমস্যা চিহ্নিত করে সেই বুঝে হবে চিকিৎসা। 

অ্যালার্জেন নিয়ে সতর্ক হন 
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরেও কাশির মাত্রা কমল না মানে এবার অ্যালার্জির কথা ভাবতেই হবে। হঠাৎ বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম, চড়া রোদের মরশুম হল ইনডোর অ্যালার্জেন বা মাইটের দ্রুতহারে বৃদ্ধির সেরা পরিবেশ। এই সময়ে ফ্যাঙ্গাসের উপদ্রবও বাড়ে বইকি। মাইট ও ফ্যাঙ্গাস থাকতে পারে বিছানার চাদর, কার্পেট ও পর্দায়। ইনডোর অ্যালার্জেনের কারণে কাশি হলে সাধারণত দেখা যায়, রোগী  সকালে ঘুম থেকে ওঠে পাঁচ থেকে সাতটা হাঁচি দিয়ে। তারপরই নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ চুলকানো, কাশি শুরু হয়।

অ্যালার্জির কাশি থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন?
সপ্তাহে একদিন বিছানার চাদর, বালিশের কভার গরম জলে আধঘণ্টা ডুবিয়ে রেখে কাচতে হবে। মাইট ও ফ্যাঙ্গাস মরবে।
• বাড়ির দরজা-জানলা যত খোলা থাকবে তত ভালো। 
• স্কিন প্রিক টেস্ট করে দেখা ঠিক কোন কোন অ্যালার্জেন থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে। অ্যালার্জেন দু’ধরনের। অ্যাভয়েডেবেল এবং আন অ্যাভয়েডেবেল অ্যালার্জেন। ডিম, চিংড়ি মাছে অ্যালার্জি থাকলে সেই খাবার না খেলেই ওই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। আবার কোনও কোনও ব্যক্তির মাইট, ধুলো, ফ্যাঙ্গাসে অ্যালার্জি। তা এড়ানো মুশকিল। সমস্যা চিহ্নিত হলে ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি গড়ে ওঠে। রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

21st     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ