বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

বাচ্চার ঘন ঘন জ্বর-সর্দি-কাশি,  বড় বিপদের লক্ষণ নয় তো?

পরামর্শে বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী  ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ মৃণাল সরকার এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক  ডাঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য

জ্বর কমাতে বরফ জলের ব্যবহার কিছুতেই নয়

 এখন তো ঘরে ঘরে জ্বর। বাচ্চারাও এর ব্যতিক্রম নয়। কেন হচ্ছে এমন?
 দেড় থেকে বছর দশেক। প্রধানত এই বয়সসীমার বাচ্চারা জ্বরে ভুগছে এখন। জ্বরের মূলত দু’টো কারণ। এক, ভাইরাসের আক্রমণ। যাকে আমরা বলি ভাইরাল ফিভার। দুই, ব্যাকটেরিয়ার হানা বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। এই ইনফেকশন বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণে আনা আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় খানিকটা সহজ। কারণ, প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ আবিষ্কার না হওয়ায় ভাইরাল ফিভারের ক্ষেত্রে একটু ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। অ্যাডিনো, ডেঙ্গু এগুলো পরিচিত। কিন্তু নাম না জানা একাধিক ভাইরাস আছে, যাদের কারণে আমরা জ্বরে ভুগতে পারি। এর কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নেই। যার যেমন উপসর্গ, সেইমতো ওষুধ। আর রোগীর নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর ভরসা করা।
 উপসর্গ দেখে কতটা আন্দাজ করা যায় রোগ সম্পর্কে?
 এক ঝলকে একমাত্র আলাদা করা যায় ম্যালেরিয়া রোগকে। এর নির্দিষ্ট একটা ধরন আছে। যেমন দিনে একবার বা দু’বার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। তারপর ঘাম দিয়ে সেটা চলে যাওয়া। ডেঙ্গু-টাইফয়েড এগুলোর ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রায় এক। জ্বরের সঙ্গে বমি বমি ভাব। দেহের তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে যাওয়া। টাইফয়েডের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে পেটে ব্যথা থাকে কমবেশি। আর ডেঙ্গুকে আলাদা করা যায় বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখে। যেমন, গা, হাত-পায়ে অসহ্য ব্যথা। যাকে বলা হয় ব্রেক বোন ফিভার। মানে হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা। এছাড়া, র‌্যাশ বেরনোর মতো কেসও পাওয়া যায় কোনও কোনও ক্ষেত্রে। কিন্তু কোনও বাচ্চা যদি বলে চোখে ব্যথা করছে, তখন বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে। কারণ, বর্তমানে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এটা অন্যতম একটা লক্ষণ। ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় রেট্রোবালবার পেইন। সাধারণত, চোখের পিছনের দিকে পেশি বা স্নায়ুতে এই ব্যথাটা হয়। আবার বাচ্চাদের এখন হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজও হচ্ছে। সেক্ষেত্রে উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, ত্বক ও মুখের ভিতর ছোট ছোট র‌্যাশ ইত্যাদি। 
 জ্বর এলে কী করা উচিত অভিভাবকদের?
 প্রথম কাজ জ্বর কমানো। প্যারাসিটামলে না হলে, জলপট্টি, গা-হাত-পা মুছিয়ে দেওয়া যায়। স্নানও করানো যেতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বরফ জলের ব্যবহার কোনওমতেই নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, জ্বরের সময় রক্তপ্রবাহের গতি বেড়ে যায়। ফলে আমাদের শিরা-ধমনী একটু স্ফীত হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় কনকনে ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে এলে সেগুলি হঠাৎ করে সংকুচিত হয়ে যাবে। এই ট্রান্সফরমেশন অনেকের শরীর নিতে পারে না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। দু’দিনের বেশি জ্বর থাকলে ডাক্তার দেখানো আবশ্যিক। তবে প্রথম দিন যদি জ্বর ১০৪ ডিগ্রির উপর উঠে যায়, তাহলে দ্বিতীয় দিনের জন্য অপেক্ষা করবেন না।
লিখেছেন : অরূপ দে
হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদে সমাধান

হোমিওপ্যাথিক নিদান
সময়টা ভারী অদ্ভুত। যাই যাই করেও এখনও বিদায় নেয়নি বর্ষা। কিন্তু ইতিমধ্যে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে শরৎ। এই প্রখর রোদ তো পরক্ষণেই আবার ভিজিয়ে দিচ্ছে বৃষ্টি। সঙ্গে রয়েছে আর্দ্রতাজনিত সমস্যা। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় জ্বর-সর্দি সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তনে মানুষের দেহের তাপমাত্রারও অনেকটাই পরিবর্তন ঘটছে। একইসঙ্গে কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনায় জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথায় নাকাল রাজ্যবাসী।
বর্ষাকালে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে সাধারণভাবে ডালকামরা, রাসটক্স, ব্রায়োনিয়া দেওয়া হয়। লক্ষণ বিচার করে কখনও কখনও দেওয়া হয় বেলেডোনাও। কারও জ্বরের সঙ্গে খুব সর্দি হলে, নাক দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকলে তিন ঘণ্টা অন্তর এক ফোঁটা করে খেলে সমস্যা কমবে। জ্বর যদি বেশি থাকে (১০৪ ডিগ্রির মতো) সেক্ষেত্রে প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর ওষুধ খাওয়াতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া থেকে সর্দি লাগলে নাক দিয়ে জল পড়া, মাথা ভার হয়ে থাকার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে ডালকামরা ওষুধটির ছ’টি দানা দিনে তিন থেকে চারবার দেওয়া হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ থাকলে দিনে তিন থেকে চারবার চারটি দানা দেওয়া হবে। জ্বর, গা ব্যথা, গলা ব্যথা, হালকা মাথা যন্ত্রণা থাকলে রাসটক্স দেওয়া হয়। ঠান্ডা লেগে মাথা যন্ত্রণা, কাশি, হালকা গা ব্যথা ও জল পিপাসা থাকলে রোগীকে ব্রায়োনিয়া দেওয়া যেতে পারে। কোনও রোগীর বুকে কফ বসে থাকলে, কাশি সহজে না কমলে, কাশতে কাশতে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার অবস্থা হলে ন্যাট্রাম সালফ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত মাথা যন্ত্রণা হলে দু’ঘণ্টা অন্তর বেলেডোনা এক ফোঁটা করে খেতে হবে। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় সহজেই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয় বাচ্চারা। তাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের ডালকামরা ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ছোটদের গরম বিছানায় রাখার পাশাপাশি হালকা জামাকাপড় পরিয়ে রাখা দরকার। প্রয়োজনে অবশ্য চিকিৎসকরা রাসটক্স, ব্রায়োনিয়াও দিতে পারেন।

আয়ুর্বেদিক দাওয়াই
বর্ষা ও ঘন ঘন আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে জ্বর, সর্দির সমস্যা দেখা দেয়। এ থেকে রেহাই পেতে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন প্রাতরাশের আগে বা পরে ৫ এমএল তুলসীর রস পান করুন। চাইলে এই রসের সঙ্গে মিছরি বা মধুও মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা তুলসী পাতা চিবিয়ে বা চায়ের সঙ্গে তুলসীর পাতা ফুটিয়ে খাওয়া হলেও উপকার মেলে। এছাড়া শুকনো আদা চিবিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি চায়ের সঙ্গে আদা ফুটিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা আদার সঙ্গে মধু দিয়ে খেলেও উপকার মেলে। ত্রিকোটি চূর্ণ সহ যে সমস্ত ওষুধে আদার উপাদান রয়েছে, সেগুলিও অত্যন্ত কার্যকরী। আঙুরের রসের মধ্যে গোলমরিচ, আদা, দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ালে জ্বরে উপকার মেলে। জ্বরের সঙ্গে দেহের গাঁটে গাঁটে ব্যথা হলে হিঙ্গুলেশ্বর রস খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এগুলি জ্বর হওয়ার অনেক আগে থেকে খাওয়ার অভ্যেস করতে পারলে রোগ মোকাবিলা আরও সহজ হয়। এই সময়টিতে মশাবাহিত নানা অসুখ হয়। সেক্ষেত্রে ছাতিম গাছের ছালের গুঁড়ো ভালো কাজ করে। জ্বরের মোকাবিলায় চিরতা, কালমেঘের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। জ্বরের সঙ্গে অনেকের হজমের সমস্যাও দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে শুধু উষ্ণ জল বা গরম জলের সঙ্গে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে। 
লিখেছেন : সুদীপ্ত রায়চৌধুরী

14th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ