বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ভ্রমণের স্বাস্থ্যগুণ কী কী? 

পরামর্শে সল্টলেক মাইন্ডসেট ক্লিনিকের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবাঞ্জন পান।

মারিয়ান ডায়মন্ড। বিখ্যাত স্নায়ুবিজ্ঞানী। তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পিছনে দুটো বড় কাজ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। একটি হল— তিনি আইনস্টাইনের ব্রেন নিয়ে স্টাডি করেছিলেন। তবে এই ঘটনার চাইতেও বেশি শোরগোল ফেলে দেয় তাঁর একটি বড় আবিষ্কার! ১৯৬৪-তে তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেন সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যানধারণা বদলে যায় অনেকখানি। তা কীরকম? আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ব্রেনের কার্যকারিতা জন্ম থেকেই নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এই কারণেই কোনও ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ার হন, কেউ আবার হন কুমোর, কেউ হন নাবিক, কেউ বা ডাক্তার! 
তবে বিজ্ঞানী ডায়মন্ড প্রথম ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে সেই ধারণায় চিড় ধরালেন। তিনি বেশ কতকগুলি ইঁদুরকে রাখলেন একাধিক খেলনার সঙ্গে। আর একদল ইঁদুরকে রাখলেন চেনা ছন্দের পরিবেশে। দেখা গেল খেলনা নিয়ে বাস করা ইঁদুরের গুরুমস্তিষ্কে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁর এই পরীক্ষা প্রথম প্রমাণ করল, কোনও সুস্থ প্রাণীর ব্রেনের কার্যক্ষমতা জন্ম থেকে নির্দিষ্ট থাকে না। পরিবেশগত উদ্দীপকের প্রভাবে ব্রেনের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব। তিনিই প্রথম দেখিয়ে দিলেন, যে প্রাণী পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করে নিতে পারবে, সেই প্রাণীর ব্রেনের কার্যক্ষমতাও বাড়বে। আরও পরে নানা গবেষণায় জানা যায়, এইভাবে পরিবেশের প্রয়োজন অনুসারে নিউরোনের সজ্জা পরিবর্তন করে নেওয়ার ক্ষমতাকে বলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি। মানুষের ক্ষেত্রেও নিউরোপ্লাস্টিসিটি জীবনে উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। যে ব্যক্তি যত দ্রুত স্বস্তিদায়ক অবস্থান পরিবর্তন করে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে পারেন, তাঁদের গুরুমস্তিষ্কেও ঘটে ইতিবাচক পরিবর্তন। সবচাইতে বড় কথা এই ধরনের পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এইবার বেড়ানোর কথা বলতে গিয়ে ‘ব্রেন প্লাস্টিসিটি’-এর প্রসঙ্গ কেন টানা হল, সেকথায় আসি। ঠিক যখন থেকে বেড়ানোর প্রসঙ্গ ওঠে তখন থেকেই তৈরি হতে থাকে প্রত্যাশা, প্রতীক্ষা। এই ধরনের ইতিবাচক অপেক্ষায় আমাদের ব্রেন ভালো থাকে। ভালো থাকে মন। এমনকী দেখা গিয়েছে, বেড়িয়ে ফেরার পর প্রায় ১ মাস অবধি এই ধরনের ইতিবাচক প্রভাব বজায় থাকে। আসলে বেড়াতে যাওয়ার অর্থ হল, নিজের কমফর্ট জোনের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া। আর কমফোর্ট জোনের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থই হল নিউরোপ্লাস্টিসিটির বৃদ্ধি ঘটানো। এই কারণেই বেড়াতে যাওয়া প্রতিবার মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই কারণেই ঘরকুনো, একই রুটিনে দীর্ঘদিন অভ্যস্ত ব্যক্তির নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

ঘুরতে গেলে কী কী ঘটে?
কগনেটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি : আমাদের ব্রেন পছন্দ করে নতুনত্ব। একজন ব্যক্তি যত বেশি নতুন জায়গায় ভ্রমণ করবেন, নতুন খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটবে এবং সেই সকল নতুন বিষয়ের সঙ্গে তিনি যত বেশি করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, তত বেশি করে তার মধ্যে বাড়বে ‘কগনেটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি’। ছোট থেকে বড় হওয়ার পথে যে সকল বিশ্বাস নিয়ে আমরা বড় হই (তা সে ঠিক হোক বা বেঠিক), সেই সকল বিশ্বাসকে প্রশ্ন এবং পরিবর্তন করতে শেখায় কগনেটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি। দেখা গিয়েছে কগনেটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়লে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। 
স্ট্রেস কমায়: বেড়াতে বেরিয়ে আমরা আমাদের চেনা দুঃখ, চেনা যন্ত্রণা, সমস্যা ভুলে থাকি। ফলে উৎকণ্ঠা কমে। ভ্রমণের সুমধুর স্মৃতি বহু দিন ধরে আমাদের মানসিক চাপ কমায় নানাভাবে। 
নিজেকে চেনা: গতানুগতিকতা আমাদের নিয়মের শৃঙ্খলে বেঁধে রাখে। ফলে নিজের সঙ্গে কাটানোর সময় আমরা পাই না। বেড়ানো আমাদের সেই অবসর দেয়।
মানসিক দৃঢ়তা: বেড়াতে গিয়ে আমাদের নানাবিধ অপ্রীতিকর ঘটনার মুখেও পড়তে হয়। পছন্দের খাবার, ঘর না পেয়েও আমাদের মানিয়ে নিতে হয় পরিস্থিতির সঙ্গে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে একটু স্বর দৃঢ় করেও আদায় করতে হয় অধিকার। খুব দ্রুত নিতে হয় সিদ্ধান্ত, যা মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রেন প্লাস্টিসিটিও বাড়াতেও সাহায্য করে। এও দেখা গিয়েছে, যে সকল ব্যক্তির জীবনের ছোটখাট সামান্য পরিবর্তনেই আবেগে ভেসে যাওয়ার সমস্যা থাকে, তাঁদের আবেগগত দিক থেকে অনেক সুস্থিত হতে সাহায্য করে ভ্রমণের সময় ঘটা এই ধরনের ঘটনা। 
সম্পর্কের উন্নতি: ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে একান্তে বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্ককেও করে তোলে মজবুত। দেখা গিয়েছে, একত্রে কায়াকিং, র‌্যাফ্টিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার ট্র্যাভেল দু’জন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে সাহায্য করে।
ওয়েলনেস ট্রিপ: বেড়ানোর সঙ্গে নিরিবিলিতে যোগা বা ধ্যান করার বহু সুযোগ এখন নানা ভ্রমণ সংস্থা দিচ্ছে। এই ধরনের ভ্রমণ কিন্তু জীবনকে অন্য খাতে বইয়ে দেওয়ার পথের সন্ধান দিতে পারে। 
অতএব একটা বিষয় পরিষ্কার, পায়ের তলায় সর্ষে আসলে আমাদের দিগন্তের সন্ধানই দেয়। করে সেই বোধের মুখোমুখি, যা আসলে বলে ওঠে, আদিগন্ত প্রকৃতির সান্নিধ্যে আমরাও হয়ে উঠতে পারি পাহাড়ের মতো, সমুদ্রের মতো, নদীর মতোই কলুষহীন, সংস্কারহীন, বন্ধনহীন অসীম সম্ভাবনাময়।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

25th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ