বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ভূতে পাওয়া নাকি মৃগী
রোগী— বুঝবেন কীভাবে?

‘কে তুই ডাইনি বল বল? বিলের বউ যে গেল বচ্ছর গলায় দড়ি দিয়ে মলো? না মিঠুনের বুন যে বিষ খে মলো সে?’
জটাজুটধারী ওঝা লঙ্কা পুড়িয়ে ছুঁড়ে দিল অচেতন তনুশ্রীর দিকে। যাকে উদ্দেশ্য করে এই সকল প্রথা চলছিল সেই অচেতন ছোট্ট তনুশ্রী তখন চোখ উলটে মাটিতে শুয়ে আছে। তার হাত পা কাঁপছে থরথর করে! মাথা নাড়ছে অবিরাম ডাইনে বাঁয়ে।
ঘটনাস্থল বঙ্গের এক অখ্যাত গ্রাম। সেই গ্রামের বাসিন্দা গোপাল কর্মকারের সম্পত্তি বলতে সাইকেলের দোকান আর একটা পাকা ঘর। বউ নয়নতারা আর মেয়ে তনুশ্রীকে নিয়ে মৃদুগতিতে এগিয়ে চলছিল তার ছাপোষা সংসার। স্কুলছাত্রী তনুশ্রীর বয়স নয়। আগেও বেশ কয়েকবার এমনভাবে অজ্ঞান হয়েছে গোপালের মেয়ে। চোখ মুখে জল দিয়ে কয়েকবার জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। তবে বারবার এমন হওয়ায় গোপালদাকে ওর প্রতিবেশী উপদেশ দিল—
‘তোর বিটিকে ভূতে ধরেছে! ঝাড়িয়ে নে।’
অতএব ফের একবার নয় বছরের তনুশ্রী ধপ করে দাওয়ায় পড়তেই ডাক পড়ল রতন ওঝার!
রতন ওঝা এসে তনুশ্রীর নাকে লঙ্কা পোড়ার ধোঁয়া দিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে না পেরে শেষে ঝাঁটা পেটার সিদ্ধান্ত নিতেই রুখে দাঁড়ালো গোপাল। বলল না ‘বিটিকে আমি পেটাতে দেব লা। শহরে লিয়ে গিয়ে বড় ডাগতার দেখাব। ডাগতার কিসু লা পারলে তুই পেটাস।’
শহরে বড় নিউরোলজিস্ট দেখাতেই তিনি বললেন তনুশ্রীর এই রোগ আসলে মৃগী। তিনি ওষুধ দিলেন। খেতে বললেন নিয়মিত। দেখা গেল নিয়মিত ওষুধ খেতেই তনুশ্রীর রোগ সেরে গেল অনেকখানি।
দেখা যাক মৃগী কী? কেন হয়? চিকিৎসাই বা কী?
মৃগী কী?
মৃগী হল মস্তিষ্কের স্নায়ুঘটিত একটি অসুখ। স্নায়ুকোষ বা নিউরোনের কিছু অস্বাভাবিক আচরণের জন্য রোগীর শরীরে কিছু উপসর্গের প্রকাশ ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনও ব্যক্তি হঠাৎ করে হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করেন, বাহ্যিক জ্ঞান থাকে না, চোখ উল্টে যায়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে গেঁজলা বেরয়, দাঁতে দাঁত লেগে যেতে পারে। মস্তিষ্কের কিছু বা একগুচ্ছ স্নায়ুর অতিরিক্ত ইলেকট্রিক্যাল ডিসচার্জের জন্য এমন অস্বাভাবিক লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে।
মৃগী ও খিঁচুনি
খিঁচুনি হওয়া, চোখ স্থির হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলি মৃগীর এক ধরনের লক্ষণ বা বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু, অন্য আরও অনেকভাবেই মৃগীর অ্যাটাক হতে পারে। মৃগী বাচ্চাদেরও হয়। কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনও কাজ বা পড়াশুনো করতে করতে, কোথায় যেন কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যায়। কোনও কথার কোনও জবাব দেয় না। একে বলে অ্যাবসেন্ট এপিলেপসি। বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা একটু সতর্ক হলেই এই অস্বাভাবিকতা ডাক্তারবাবুর নজরে আনা যায়। সুতরাং, খিঁচুনি না হলেও এটা মৃগীর লক্ষণ হতে পারে।
আবার ১২-১৩ বছরের একটি বাচ্চার জ্বরের সঙ্গে আগে হয়তো খিঁচুনি হতো। তবে একটু বয়স বাড়তে হয়তো আর খিঁচুনি হয় না।  তবে বাচ্চাটি হঠাৎ করে চুপ করে যায়। তারপর যেন চিবোনোর মতো আওয়াজ করতে থাকে। সেই সময় ডাকলে কোনও জবাব দেয় না। হাতে যে জিনিস থাকে, সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। কিন্তু কোনওটাই অর্থবহ কিছু নয়। আবার কয়েক সেকেন্ড পর সব যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়।  বাচ্চার মধ্যে এই যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়, এও একপ্রকার এপিলেপসি।
মৃগী হল একটি বড় শব্দ। নানা রকমের মৃগীরোগ আছে। তাই, বাচ্চার মধ্যে বা বয়স্ক লোকের মধ্যে যদি কোনও অস্বাভাবিকতা দেখেন, যা ঠিকমতো বোঝানো যাচ্ছে না, তাহলে সবচেয়ে ভালো, একবার কোনও চিকিৎসককে দেখিয়ে নেওয়া।
চিকিৎসা কী?
ডাক্তারবাবুরা সবার আগে রোগী বা তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ক্লিনিক্যাল হিস্ট্রি জানেন। কতক্ষণ ধরে খিঁচুনি হয়েছে, কী কী বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছে, সবটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সবচাইতে ভালো হয় ঘটনার সময় মোবাইলে ভিডিও তুলে রাখতে পারলে। এই ভিডিওটি দেখে রোগীর ঠিক কী সমস্যা হচ্ছে, তা দেখে নেওয়া যায়।
এরপর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ব্রেনের এমআরআই এর কথা বলা যায়। এই পরীক্ষায় মস্তিষ্কের কোনও গঠনগত সমস্যা রয়েছে কি না তা বোঝা যায়।
ইইজি’র সাহায্যও নেওয়া হতে পারে রোগ নির্ণয়ে।
এরপর আসে আসে ওষুধ। মৃগী নিয়ন্ত্রণে ওষুধই ভরসা। বেশিরভাগ রোগীরই এক বা একাধিক ওষুধে কাজ হয়।
তথ্য সহায়তা: ডাঃ আশিস দত্ত, নিউরোলজিস্ট, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (কলকাতা)

2nd     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ