বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ভাইরাসের ছোঁয়ায় 
সারছে অসুখ!

কে না জানে, সংক্রামক রোগ ডেকে আনতে ওস্তাদ নানা ভাইরাস! তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে ভাইরাস মানেই মানুষের শত্রু নয়। রোগ ভালো করবার ক্ষমতাও রয়েছে ভাইরাসের। বললেন পিজি হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ যোগিরাজ রায়।
 
বন্ধু বা উপকারী ভাইরাস বলতে আমরা কী বুঝি?
নানা বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়াকে শায়েস্তা করতে প্রকৃতিতে নানা ভাইরাস আছে, যারা এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে খেয়ে নিতে সক্ষম। আসলে প্রকৃতি তার নিজের মধ্যে অবস্থিত নানা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি কমাতে নিজেই এই ধরনের ভাইরাস ধারণ করে। মানবশরীরে সেইসব ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে বহু সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করা হয়। এতে ফলও খুব ভালো মেলে।

এমন ভাইরাস কে?
এই ভাইরাসের নাম ব্যাকটিরিওফাজ।

মানবশরীরে কখন এই ভাইরাস ব্যবহার করা হয়?
ইদানীং সুপারবাগের কারণে অনেকসময় প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করে না। মানুষ যথেচ্ছ পরিমাণে দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই কোর্স শুরু করে দেয়। বেশিরভাগ সময় সেই কোর্স শেষও করে না। অ্যান্টিবায়োটিকের এই অধিক ব্যবহারে মানবশরীরে একটা সময় ওই ওষুধ আর কাজই করে না। রোগের মূল কারণ যে ব্যাকটেরিয়াটি, সেটি অভিযোজিত হয়ে যায়। ফলে দেখা যায়, কোনও কোনও সাধারণ সংক্রমণেও কারও কারও শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজই করছে না। তখন এই ফাজ ভাইরাসের প্রয়োজন পড়ে। এই ফাজ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে খেয়ে ফেলে। একে ‘ফাজ থেরাপি’ বলা হয়। আসলে পূর্বতন রাশিয়ায় খুব একটা অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যেত না। তাই এরা বহু রোগের বিরুদ্ধেই এই ফাজ থেরাপি প্রয়োগ করে ও খুব ভালো ফল পায়। সেখানে নানা মহামারীতেও ফাজ ভাইরাস ব্যবহার করে সুফল মিলেছে।

কীভাবে ওষুধ হিসেবে এই ফাজ ভাইরাস ব্যবহৃত হয়?
ধরা যাক, কারও ফোঁড়া হয়েছে। ফোঁড়ার পুঁজ সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। সেখানে অসংখ্য ব্যাকটিরিওফাজের মধ্যে সেই পুঁজকে ফেলে দেওয়া হয়। এইবার দু’-তিনদিনের মধ্যেই এই ব্যাকটিরিওফাজ নিজেকে ওই ফোঁড়ার ব্যাকটেরিয়াকে খাওয়ার মতো উপযুক্ত করে তুলবে। এবার ল্যাবরেটরি থেকে এনে ওই ব্যাকটিরিওফাজকে ফোড়ার পুঁজে ফেললে পুঁজটি অচিরেই শুকিয়ে যাবে ও রোগী আরোগ্য লাভ করবে। চামড়ার নানা সংক্রমণ, পেটের সংক্রমণ সবেতেই এটি কাজ করে। ফাজ থেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নবদিগন্ত খুলে দিয়েছে। 

একমাত্র অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করলে তখনই কি এই ভাইরাস ব্যবহার করা হয়?
সাধারণত তাই। আমাদের দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার অত্যন্ত বেশি। তাই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করলে এর শরণ নেওয়া হয়।

প্রকৃতিতে কোথায় এই ব্যাকটিরিওফাজ পাওয়া যায়?
বেশি পাওয়া যায় গঙ্গার জলে। এছাড়া যে কোনও পরিচ্ছন্ন ডোবা, খালবিল, পুকুর, নদীনালাতেও মেলে। 

তাহলে তো গঙ্গার জল পেটে যাওয়া ভালো!
একটা সময় অবধি ভালোই ছিল। তবে বর্তমানে গঙ্গায় দূষণ খুব বেশি। একা ব্যাকটিরিওফাজের পক্ষে এত দূষণ নষ্ট করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ইদানীং আর গঙ্গার জল খাওয়া একেবারেই ভালো নয়। 

কোন কোন রোগে এই ফাজ ভাইরাস ব্যবহার করা হয়?
এই ব্যাকটিরিওফাজ যে কোনও সংক্রমণের উপর কাজ করে। তাই সংক্রমণঘটিত অসুখে এই ভাইরাস কাজ করে।

ধরা যাক, কেউ সংক্রামক রোগ নিয়ে আপনার কাছে গেল,  অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হচ্ছে না। ফাজ ভাইরাস কীভাবে তাঁর উপর প্রয়োগ হবে?
প্রথমেই সংক্রমণটি কীসের জেনে রোগীর শরীর থেকে তার নমুনা জোগাড় করা হবে। তারপর ব্যাকটিরিওফাজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে কোনও ল্যাবরেটরিতে সেই স্যাম্পেল পাঠানো হবে। এরপর দিন চার-পাঁচেক পরে ব্যাকটিরিওফাজ ওই ব্যাকটিরিয়াকে খেয়ে নিতে পারার মতো অবস্থায় পৌঁছলে ল্যাবরেটরি থেকে এনে সেই ব্যাকটিরিওফাজ দিয়ে শুরু হবে চিকিৎসা। 

তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য অপেক্ষা না করে এই ফাজ ভাইরাস দিয়েই সংক্রমণের ব্যাকটেরিয়া মারা সম্ভব?
সম্ভব। তবে আমাদের দেশে এমন ল্যাবরেটরি সংখ্যায় হাতে গোনা, যারা ব্যাকটিরিওফাজ নিয়ে খুব গুরুত্ব সহকারে কাজ করে। রোগীর যা সংখ্যা, সেই অনুপাতে ল্যাবরেটরি কম হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের শরণ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কলকাতায় নাইসেড যেমন এই কাজটি খুব নিষ্ঠাভরে করে। তবে কাজটি আরও প্রসারিত হলে সংক্রামক অসুখের চিকিৎসায় নতুন অধ্যায় শুরু হবে। 
সাক্ষাৎকার: মনীষা মুখোপাধ্যায়

13th     April,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ