বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার হলে কী করবেন?

এখন চারিদিকেই নানা প্রচারপত্রে বা স্বাস্থ্য-বিষয়ক আলোচনায় আপনারা থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতনতার কথা শোনেন। বিয়ের আগে নাকি এই পরীক্ষা করে তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কিন্তু এই পরীক্ষার দরকার কী? কীভাবে হয় এই পরীক্ষা? এইসব নিয়েই আজকের আলোচনা।
থ্যালাসেমিয়া হল একটি রক্তের অসুখ। এই অসুখে জিনগত ত্রুটির জন্য রক্তের হিমোগ্লোবিন ঠিক মত তৈরি হয় না। রক্তকণিকা তৈরি হয়েই ভেঙে যায়। ফলে এইসব রোগীদের ছোট থেকেই রক্তাল্পতা দেখা যায় এবং আমাদের দেশে এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল নিয়মিত ব্যবধানে রক্ত নিয়ে যাওয়া।  ‘আমাদের দেশে’ কথাটি বললাম কারণ বিদেশে কিছু জায়গায় জিন থেরাপি করে এই রোগের চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশে রক্ত নেওয়াই এর একমাত্র চিকিৎসা।
থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত অসুখ। রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য যে জিন আছে, তার দু’টি প্রকার— আলফা এবং বিটা। এর মধ্যে কোনও একটি জিনে ত্রুটি থাকলে গ্লোবিন চেন ঠিকমত তৈরি হয় না। এই জিনের ত্রুটি বহু রকমের হতে পারে। সবচেয়ে সাংঘাতিক হল সেই জিন সম্পূর্ণ মুছে যাওয়া। এর ফলে সেই প্রোটিন তৈরিই হবে না। আর একরকম হল জিনটি আছে, কিন্তু তার কাজ করার ক্ষমতা কম। এর ফলে কিছু প্রোটিন তৈরি হবে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এই দ্বিতীয় ভাগের রোগীদের বলা হয় থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার।
আপনারা জানেন সন্তানের জিন তৈরি হয় বাবা এবং মায়ের জিনের সংমিশ্রণে। এই সংমিশ্রণ মেন্ডেলের নিয়ম অনুসারে হয়। যদি বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে একজনের জিন স্বাভাবিক এবং অন্যজনের জিন ‘ক্যারিয়ার’ হয়, তাহলে ৫০ শতাংশ আশঙ্কা যে সন্তান ক্যারিয়ার হবে। এতে কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু যদি বাবা এবং মা দু’জনেই ক্যারিয়ার হয়, তাহলে ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে যে সন্তান ক্যারিয়ার হবে এবং ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা যে সন্তানের পুরোপুরি থ্যালাসেমিয়া হবে। আমাদের যত ভয় তা শুধুমাত্র এই ২৫ শতাংশকে নিয়েই। থ্যালাসেমিয়া থাকা মানে সারা জীবন মাসে মাসে রক্তের চাহিদা থাকবেই। এইজন্যই এত সাবধানবাণী।
অতএব আলোচনা থেকে বোঝাই যাচ্ছে ঠিক কী কারণে এই পরীক্ষা করালে লাভ। ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই অসুখের অনুপাত বিভিন্ন। তার পিছনে একটি কারণ আছে।
নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যদি বিবাহের রীতি প্রচলিত থাকে, তবে জিনগত অসুখ সেই জনগোষ্ঠীতে বহুল প্রচলিত হয়ে যায়। ভারতের বেশ কিছু গোষ্ঠী আছে, যাদের মধ্যে এই রীতি চালু আছে। এইসব মানুষের এরকম অসুখ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ভারতের একশো চল্লিশ কোটি জনসংখ্যার মোট হিসেব নিলে হয়ত থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার ১—৩ শতাংশ। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় এই সংখ্যাটি ৮ থেকে ১০শতাংশও হতে পারে। এই কথা মাথায় রেখেই এই পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আপনি থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার কি না, তা জানার জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা হয়। একে বলে এইচ পি এল সি। এই পরীক্ষায় রক্তের হিমোগ্লোবিনের যে নানা প্রকার আছে, তাদের অনুপাত দেখা হয়। হিমোগ্লোবিন এ২ নামে একটি প্রকার আছে। যদি এর অনুপাত একটি নির্ধারিত মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন সেই মানুষ ক্যারিয়ার বলে চিহ্নিত হবেন। এই পরীক্ষা বহু জায়গায় হয়। আপনি নিজে যখন খুশি গিয়ে এই পরীক্ষা করাতে পারেন। অনেক সময়ে আপনার অন্য রুটিন রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে আপনার চিকিৎসক সন্দেহ করলে উনি তখন এই পরীক্ষা করাতে দেবেন।
শেষ করার আগে দু’টি কথা। এক নম্বর হল, এই পরীক্ষাটি কি একদম অভ্রান্ত? তার মানে, যদি এটি স্বাভাবিক আসে, আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার ক্যারিয়ার হওয়ার আশঙ্কা নেই? আগেই বলেছি যে থ্যালাসেমিয়া নানা রকমের হয়।  যেটা সবথেকে বেশি হয়, সেই বিটা থ্যালাসেমিয়া এতেই ধরা পড়ে। কিন্তু খুব বিরল ক্ষেত্রে আলফা থ্যালাসেমিয়া বলে একটি রোগ হয়। সেটা কিন্তু এই পরীক্ষায় ধরা পড়বে না। কিন্তু এই রোগ ভীষণ বিরল। তাই সেটা নিয়ে অহেতুক চিন্তা করবেন না। আর দ্বিতীয় হল, ধরুন যদি আপনার রিপোর্ট আসে যে আপনি ক্যারিয়ার, তখন কী করবেন? আগেই বললাম, যদি আপনার সঙ্গী স্বাভাবিক জিনের অধিকারী হন, তাহলে কোনই চিন্তা নেই। কিন্তু যদি আপনার সঙ্গীও ক্যারিয়ার হন, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লিখেছেন ডাঃ রুদ্রজিৎ পাল

8th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ