বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

কখন আইভিএফ কখন নয়? 

পরামর্শে হাওড়ার মুখার্জি ফার্টিলিটি সেন্টারের কর্ণধার ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শিউলি মুখোপাধ্যায়।

সাধারণভাবে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করার অন্তত তিন মাস আগে থেকেই প্রতিটি দম্পতির উচিত গাইনিকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ওই মহিলার কিছু রক্তপরীক্ষা করিয়ে বুঝতে পারবেন তাঁর রক্তে হরমোন, আয়রন এবং ভিটামিন কম আছে কি না। সেক্ষেত্রে আগে থেকে কিছু ওষুধ চালু করা যাবে। এছাড়া পুরুষ সঙ্গীটিকেও ধূমপান, মদ্যপানের মতো অভ্যেস ত্যাগ করা ও শরীরচর্চা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বাভাবিক পথে সন্তান আসলে সেক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হয়। তবে আমাদের দেশে এভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার রেওয়াজ নেই। বেশিরভাগ দম্পতিই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্রথমে স্বাভাবিক পথে সন্তানধারণের চেষ্টা করেন। সন্তান না এলেও অনেকদিন এভাবেই কেটে যায়, তারপর তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য যান। এখন প্রশ্ন হল, ঠিক কতদিন এভাবে অপেক্ষা করা যায়? এক্ষেত্রে বয়স কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়— 
ক. কোনও মহিলার বয়স ৩৫-এর কম হলে এবং ১ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশার পরে সন্তান না এলে ওই দম্পতির উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
খ. কোনও মহিলার বয়স ৩৫-এর বেশি হলে এই অপেক্ষার সীমা হওয়া উচিত ৬ মাস।
এবার গাইনিকোলজিস্ট বা ফার্টিলিটি এক্সপার্টের কাছে কোনও দম্পতি গেলে তিনি কী করেন? দেখা যাক চিকিৎসার ধাপ।
• দম্পতির বয়স কম হলে (স্বামী-স্ত্রীর বয়স ২৫ থেকে ২৬ বছরের কাছাকাছি বা একটু বেশি) সাধারণত কোনও পরীক্ষা করাতে দেওয়া হয় না। একটু ক্লোমিফেন সাইট্রেট বা লেট্রোজোল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধগুলি ওভাম তৈরির পথ সুগম করে। ওষুধগুলি খেয়ে মাস তিনেক ফের স্বাভাবিক পথে সন্তানধারণের চেষ্টা করতে বলা হয়। তিনমাসেও কোনও ফল না মিললে তখন তাদের চারটি বিশেষ টেস্ট করানোর কথা বলা হয়। কী কী পরীক্ষা?
১. সিমেন অ্যানালিসিস ২. ইউটেরাসের আলট্রাসোনোগ্রাফি ৩. ফ্যালোপিয়ান টিউবের ব্লকেজ আছে কি না জানতে হিস্টেরোস্যালপিঙ্গোগ্রাফি অথবা স্যালাইন সোনোগ্রাফি ৪. থাইরয়েড, প্রোল্যাকটিন, অ্যান্টিমুলেরিয়ান হর্মোনের (এএমএইচ) মাত্রা জানতে রক্ত পরীক্ষা। অর্থাৎ সেই সমস্ত স্ত্রী হর্মোনের পরীক্ষা যা ওভ্যুলেশন স্বাভাবিক আছে কি না তা বুঝতে সাহায্য করে।
• কোনও মহিলার বয়স ৩২ বা ৩৪ কিংবা তার বেশি হলে আর অপেক্ষা করা হয় না। তাঁদের তখনই ওই চারটি জরুরি টেস্ট করাতে বলা হয়। এরপর পরীক্ষায় যেমন গোলমাল ধরা পড়ে, তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা প্রক্রিয়া। চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় আসা যাক—

ফ্যালোপিয়ান টিউব
মনে রাখতে হবে ফ্যালোপিয়ান টিউব দিয়েই ওভারি থেকেই ওভাম আসে। ধরা যাক এইচএসজি পরীক্ষায় দু’টি ফ্যালোপিয়ান টিউবেই ব্লক পাওয়া গেল। এক্ষেত্রে রোগিণীর কাছে দু’টি চিকিৎসা পদ্ধতি থাকে। প্রথমত, মাইক্রোসার্জারি করে টিউবের ব্লকেজ খোলার পর স্বাভাবিক পথে সন্তানধারণের চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, সরাসরি আইভিএফ করা। কারণ কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির পরও প্রার্থিত ফল মেলে না।
তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান ভারী অদ্ভুত ক্ষেত্র। অঙ্কে যেমন দুইয়ে দুইয়ে চার হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানে তা হয় না। তা কীরকম? আসলে ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ-এর নানা ধরন রয়েছে। এমনই একটি ধরন হল ‘স্পাজম’। হয়তো কোনও কারণে দু’টি ফ্যালোপিয়ান টিউবের মুখ সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। এইচএসজি টেস্ট-এও তাই ধরা পড়ে। আবার কোনও এক সময় ওই মুখ অনেকের ক্ষেত্রে খুলেও যায়। তখন হঠাৎ করেই স্বাভাবিক মেলামেশাতেই প্রেগন্যান্সি আসে! এখন কার এমন হবে আর হবে না, তা আগে থেকে বলা অসম্ভব। তাই ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ এলে দম্পতিদের উচিত আগে কাউন্সেলিং করানো ও সমস্যাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া। এরপর ওই দম্পতিই ঠিক করেন সার্জারিতে যাবেন, কিছুদিন অপেক্ষা করবেন, নাকি আইভিএফ-এর সাহায্য নেবেন।
অন্যদিকে অনেকের দু’টি ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে একটি টিউবে ব্লকেজ থাকতে পারে! সেক্ষেত্রে ওই প্রতিবন্ধকতাহীন টিউব দিয়ে ওভাম বেরতে পারছে কি না তার জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে। ঘনঘন ফলিকুলোমেট্রি করেও দেখা যেতে পারে খোলা মুখের ফ্যালোপিয়ান টিউবের দিকে ওভাম তৈরি হচ্ছে কি না। তারপরেও কোনও ইতিবাচক বিষয় নজরে না এলে আইভিএফ করা যেতে পারে।

হরমোন
রক্তপরীক্ষায় থাইরয়েড বা প্রোল্যাকটিন হরমোনের সমস্যা ধরা পড়লে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সমস্যা মেটানোর কথা ভাবা যেতে পারে। তাতেও সন্তান না এলে তখন এএমএইচ পরীক্ষা করানো হয়। এই পরীক্ষায় ওভারিতে ওভামের সংখ্যা কম থাকলে তা ধরা পড়ে। এএমএইচ-এর স্বাভাবিক মাত্রা ২ থেকে ৬-এর মধ্যে। তবে এই মাত্রা ১-এরও কম থাকলে বুঝতে হবে, ওই মহিলার ডিম্বাণুর সংখ্যা সত্যিই কম। সেক্ষেত্রে ওই মহিলার বয়স একটু বেশি হলে (৪০-এরও বেশি), মেনস্ট্রুয়েশন অনিয়মিত হয়ে পড়লে এবং পরবর্তী আরও কিছু পরীক্ষায় ওভারিতে ওভামের সংখ্যা খুব কম তা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারলে তাঁকে আইভিএফ-এর পরামর্শ দেওয়া হয়। এমনকী  এগ ডোনেশনের সাহায্যও নিতে হতে পারে। এগ ডোনেশনের সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মনে দ্বন্দ্ব থাকে। সেক্ষেত্রে তাঁদের কাউন্সেলিং-এর সাহায্য নেওয়ার কথা বলা হয়।

ইউটেরাস
একাধিক সমস্যা প্রকট হতে পারে ইউটেরাসে। হতে পারে সিস্ট, টিউমার। সেক্ষেত্রে নানাভাবে চিকিৎসায় সমস্যা মেটানো যায়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, হয়তো সিস্ট, টিউমার কিছুই নেই। অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও নেই। তা সত্ত্বেও ইউটেরাসে এমব্রায়ো প্রোথিত হচ্ছে না! বারবার মিসক্যারেজ হচ্ছে! এমন ক্ষেত্রে একটু অপেক্ষা করা হয়। কিছু ওষুধও দেওয়া হতে পারে। দম্পতিকে উদ্বেগহীনভাবে মেলামেশা করে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করতে বলা হয়। তারপরেও সন্তান না এলে শেষ চেষ্টা হল আইভিএফ।

সিমেন
পুরুষের ক্ষেত্রে তিন ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে—
১. অ্যাজুস্পার্মিয়া: সিমেনে স্পার্ম সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত থাকলে, তাকে বলে অ্যাজুস্পার্মিয়া। দেখা যায় টেসটিসে স্পার্মের উৎপাদন হয়তো হচ্ছে অথচ সিমেনের সঙ্গে তা বাইরে আসছে না। সেক্ষেত্রে টেসটিস থেকে স্পার্ম সংগ্রহ করে তারপর আইভিএফ করা হয়। 
২. সিভিয়র অলিগোঅ্যাস্থিনোটেরাটোজুস্পার্মিয়া: ‘অলিগো’-এর অর্থ সংখ্যায় কম। ‘অ্যাস্থিনো’-এর অর্থ সচলতা কম। ‘টেরাটো’-এর অর্থ গঠন খারাপ। অতএব যে ব্যক্তির স্পার্মের সংখ্যা কম, গঠন খারাপ এবং স্পার্ম সক্রিয় নয়—তাঁদের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা। এখন সিভিয়র কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে কেন? কারণ সাধারণভাবে প্রতি মিলিলিটার সিমেনে অন্তত পক্ষে ১কোটি ৬০ লক্ষ স্পার্ম থাকতেই হবে। সিভিয়র অলিগোঅ্যাস্থিনোটেরাটোজুস্পার্মিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সিমেনে স্পার্মের সংখ্যা হয়তো ৫০ লক্ষ, এমনকী ১০ লক্ষেরও কম থাকে! এমন ক্ষেত্রে আইভিএফ-এর সাহায্য নেওয়ার দরকার পড়ে।
৩. সিভিয়র ইরেকটাইল ডিসফাংশন, হার্নিয়া, প্রস্টেট অপারেশনের পরে কিছু কিছু সমস্যার কারণেও আসতে পারে বন্ধ্যাত্ব। জন্মগত নানা দৈহিক ত্রুটির কারণেও দেখা দিতে পারে ইনফার্টিলি। এছাড়া কিছু ব্যক্তির ওয়াই ক্রোমোজোম মাইক্রোডিলিশন, ক্লিনেফেল্টার সিনড্রোমের মতো জিনগত গণ্ডগোল ধরা পড়ে। এমন পরিস্থিতিতেও পুরুষ বন্ধ্যাত্ব দেখা  দেখা যেতে পারে। সবকটি ক্ষেত্রেই অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনিকের সাহায্য নেওয়ার দরকার পড়তে পারে।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

16th     February,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ