বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

বিশ্ব ক্যানসার দিবস
ভবিষ্যতে কেমন হবে ক্যান্সার চিকিৎসা?

পরামর্শে রাজারহাটের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়দীপ ঘোষ

 ইমিউনোথেরাপি
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় এখন ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগ হচ্ছে। এই থেরাপির মূল লক্ষ্য হল ক্যান্সার কোষগুলিকে ধ্বংস করা। কেমোথেরাপির লক্ষ্যও তাই। তাহলে কেমোথেরাপির সঙ্গে ইমিউনোথেরাপির তফাতটা কোথায়? আমরা জানি, ক্যান্সার কোষ খুব দ্রুত বিভাজিত হয়। কেমোথেরাপির মাধ্যমে এইভাবে দ্রুত বিভাজিত হওয়া কোষগুলিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। মুশকিল হল, কেমোথেরাপি ক্যান্সার কোষের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য সুস্থ কোষ যা দ্রুত বেড়ে ওঠে, সেগুলিকেও টার্গেট করে ফেলে। উদাহরণ হিসেবে চুল, বোন ম্যারো,  পরিপাকতন্ত্রের অন্দরের গাত্রের কথা বলা যায়। এই কারণেই কেমোথেরাপি নিলে চুল পড়ে যায়, হজমের গণ্ডগোল দেখা দেয়, ইমিউনিটির সমস্যা হয়, বারবার ঠান্ডা লেগে যায় রোগীর। সেখানে ইমিউনোথেরাপি শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই সক্রিয় করে তোলে। এভাবে ক্যান্সার কোষগুলিকে নষ্ট করতে থাকে।
কেমোথেরাপির মতোই ইমিউনোথেরাপির ওষুধও স্যালাইনে গুলে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। মোটামুটি আধঘণ্টা মতো সময় লাগে। কোনও ব্যথা হয় না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় নেই বললেই চলে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ইমিউনোথেরাপির ওষুধগুলি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ব্যবস্থাকে ক্যান্সার কোষগুলিকে চিনিয়ে দিতে সাহায্য করে।
ইমিউনোথেরাপি ও কেমোথেরাপির সঙ্গে তুলনামূলক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ ক্যান্সারের চিকিৎসাতেই ইমিউনোথেরাপি কার্যকরী। তবে ফুসফুস, কিডনি, মেলানোমার মতো কিছু কিছু অসুখে ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগে বিশেষ উপকার মিলেছে! তবে ইমিউনোথেরাপি কিন্তু ম্যাজিক নয়। মানে ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগে যে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন, এমনটা ভাববার কারণ নেই। হ্যাঁ, কেমোথেরাপির সাহায্যে যে রোগীর হয়তো আর চিকিৎসা করা যাবে না, তার ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগ করে ওই রোগীর আয়ুষ্কাল সামান্য বাড়ানো যেতে পারে। 
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ক্যান্সার রোগীর আয়ু ঠিক কতদিন বাড়তে পারে ইমিউনোথেরাপিতে? সমীক্ষাগুলির দিকে তাকিয়ে বলা যায়, ইমিউনোথেরাপি কিন্তু রোগীর কয়েক বছর আয়ু বাড়াতে সক্ষম নয়। বড়জোর কয়েকমাস আয়ু বাড়াতে পারে এই থেরাপি। তবে এখনও গবেষণা চলছে, কিছু কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির সঙ্গেও ইমিনোথেরাপি প্রয়োগ হচ্ছে। ইমিউনোথেরাপির আরও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই চিকিৎসার খরচও অনেকখানি বেশি! ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে এই চিকিৎসার সুফল লাভ কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব। 
 বাড়ির কারও ক্যান্সার হলে কি আপনারও হবে?
সাধারণ মানুষের ধারণা, ক্যান্সার সম্ভবত বংশগত অসুখ। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৫ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে ক্যান্সার জিনঘটিত। ১ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার জিনঘটিত কারণে হয়। ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার পিছনেও জিন দায়ী থাকতে পারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে। তবে কিছু পরিবারে কিছু কিছু ক্যান্সারের জিন থাকে। কোনওভাবে সেসব জিন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করলে ক্যান্সার প্রকট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সাধারণত ব্রেস্ট, ওভারিয়ান এবং কোলন ক্যান্সার হওয়ার পিছনে পারিবারিক ইতিহাস থাকে। বাকি ক্যান্সারগুলি যে কারও যে কোনও সময়ে হতে পারে।
 কার টি সেল থেরাপি
ইমিউনোথেরাপি ছাড়াও টার্গেটেড থেরাপিও হচ্ছে। অর্থাৎ ক্যান্সার কোষে ঠিক কোন মিউটেশন হয়েছে, সেই মিউটেশনকে টার্গেট করে শুরু হচ্ছে ওষুধ দেওয়া। নতুন আরও একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হল ‘কার টি সেল থেরাপি’। এখনও অবধি কিছু হেমাটোলজিক্যাল ক্যান্সার যেমন লিউকোমিয়াতে প্রয়োগ করা হয়েছে এই থেরাপি। এক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষের অ্যান্টিজেনগুলির বিরুদ্ধে ইমিউনিটি বাড়িয়ে তাদের ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়।
 লিক্যুইড বায়োপ্সি
ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ে আমরা বায়োপ্সি বা সুচ ফুটিয়ে নমুনা সংগ্রহ করার কথা শুনেছি। এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে সামান্য হলেও ব্যথা বেদনার সম্মুখীন হতে হয়। বর্তমানে রোগীকে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে এসে গিয়েছে লিক্যুইড বায়োপ্সি। শরীরের কোনও অংশে ক্যান্সার কোষ বেড়ে উঠলে সেখান থেকে বহু ডিএনএ রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই ডিএনএ চিহ্নিত করে তাদের বিশ্লেষণ করে ক্যান্সারের ধরন বা ঠিক কোন ধরনের মিউটেশন হয়েছে, তা বোঝার মতো কাজ বিশ্বের নানা জায়গাতেই চলছে। 
 ন্যানো রোবট
ন্যানো রোবট টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা চলছে বিদেশে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে শরীরে কিছু সূক্ষ্ম চিপ প্রবেশ করানোর চিন্তাভাবনা চলছে। এই চিপগুলিতে লোড করা থাকবে নানা তথ্য। চিপগুলি শরীরের নানা অংশে ঘুরবে ও শরীরে কোনও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জিন সক্রিয় হয়েছে উঠেছে কি না, তা নির্ণয় করতে পারবে। ফলে আগে থেকেই শুরু করা যাবে চিকিৎসা। তবে সমগ্র বিষয়টিই এখনও ধারণার আকারেই রয়েছে। এহেন প্রযুক্তি সত্যি সত্যি প্রয়োগ হতে এখনও অনেক দেরি আছে।
 প্রিভেনটিভ অঙ্কোলজি
কিছু ক্যান্সার রয়েছে যেগুলিকে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব। আবার কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ করাও যায়, যেমন ৪০ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সি মহিলাদের ২ থেকে ৩ বছর অন্তর ম্যামোগ্রাফি করে ব্রেস্ট ক্যান্সার অনেক আগে নির্ণয় করা যায়। আবার ৯ থেকে ২৭ বছর বয়সি মেয়ে ও মহিলা যাঁদের সেক্সুয়াল এক্সপোজার হয়নি, তাঁদের এইচপিভি ভ্যাকসিন দিলে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের আশঙ্কা অনেকখানি কমানো সম্ভব। এমন উদাহরণ আরও আছে। তাই একজন অঙ্কোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

4th     February,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ