বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ছোট বয়স থেকেই ইনহেলার
পরিস্থিতি এতটা উদ্বেগের কেন?

পরামর্শে ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউট-এর পালমোনোলজিস্ট ডাঃ আলোক গোপাল ঘোষাল।

এখন ঘরে ঘরে বাচ্চার হাতে ইনহেলার। অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগটা ঠিক কি নিয়ে? অসুখ নিয়ে, নাকি ইনহেলার বাহনটিকে নিয়ে। 
ইনহেলার প্রথম চিকিৎসা হিসাবে সর্বজনলভ্য হিসেবে বাজারে আসে আশির দশকে। কিন্তু সভ্যতার আবহমান কাল থেকেই ইনহেলার পদ্ধতি নেশার জন্য ব্যবহার করা হতো। বিড়ি, সিগারেট, গাঁজা, হুঁকো। কাজেই ইনহেলার নিয়ে নেশার মতো আসক্তি জন্মায় এইরকম একটা ধারণা সমাজিক চেতনায় ছিল। 

ইনহেলার নেওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। প্রশিক্ষণ এবং মনোসংযোগ লাগে। একটি শিশুকেও ট্যাবলেট মুখে তুলে গিলে ফেলা শেখাতে হয় না। তুলনাই ইনহেলার নেওয়া বয়স্কদের জন্যেও নিয়মিত অভ্যেসর ব্যাপার।

ইনহেলার কেন? 
চোখের ড্রপ চোখেই দিতে হয়, ত্বকের মলম ত্বকে। সেইরকমই ফুসফুসের ভেতরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শ্বাসনালীতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র বাহন ইনহেলার। 
ইনহেলার বাহনটি মূলত দুই প্রকার। ড্রাই পাউডার ইনহেলার (ডিপিআই), যা ক্যাপসুল ফুটো করে ভিতরের অতি সূক্ষ্ম কণাকে শ্বাসনালীর প্রত্যন্তে টেনে নিতে হয়। 
অন্য ধরনটি হল মিটারড ডোজ ইনহেলার (এমডিআই), যা বাষ্পের মতো কাজ করে। সাধারণত শিশুরা ডিপিআই ব্যবহার করতে পারে না। এমডিআই তাদের জন্য একটি চোঙার মধ্যে দিয়ে বা নেবুলাইজার হিসেবে ব্যবহার হয়।

ইনহেলারের ওষুধ কীভাবে কাজ করে? 
ওষুধ থাকে দুই প্রকার। একটি তাৎক্ষনিক ভাবে শ্বাসনালীর সংকোচন দূর করে। অপরটি শ্বাসনালীর ভিতরের প্রদাহকে প্রশমিত করে। শেষোক্তটি ইনহেল কর্টিকোস্টেরয়েড (আইসিএস)। আইসিএস নিয়েই ভীতি, আর ভীতি স্টেরয়েড শব্দটির জন্যই। অনেকটা আগুন ব্যবহারের মতো। দাউ দাউ করে আগুন যেমন সব কিছু পোড়ায়, তেমনই আগুন ছাড়া সভ্যতা অচল। 
এবার আসি অসুখের কথা। চিকিৎসক ইনহেলার দিয়েছেন বলেই এটা অ্যাজমা বা সারাজীবন ব্যবহার করতে হবে, এমন ভাববার কোনও কারণ নেই। শিশুদের ভাইরাল অসুখেও বা সাময়িক কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলেও ইনহেলার ব্যবহৃত হয়। 

শিশুদের শ্বাসের বা শ্বাসনালীর অসুখ কি বাড়ছে?
আসলে সচেতনতা বেড়েছে আগের চাইতে বেশি। অনেক বেশি রোগনির্ণয় হচ্ছে। যৌথ পরিবারে আগে একটা দুটো বাচ্চার অ্যালার্জি বা অ্যাজমা থাকতই। টোটকা চিকিৎসা করা হতো বা অগ্রাহ্য করা হতো। এখন বিজ্ঞান এগিয়েছে, জনশিক্ষার প্রসার ঘটেছে, বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। ইনহেলারের বিরুদ্ধে আগের সামাজিক প্রতিরোধ এখন অনেকটাই বিলীয়মান। আশির দশকে বলা হত অ্যালার্জি বা অ্যাজমা বাড়ছে, প্রতি দশ বছরে প্রায় দ্বিগুণ। 
বর্তমানে গ্লোবাল অ্যাজমা নেটওয়ার্ক সারা পৃথিবীতে অ্যালার্জি ও অ্যাজমার প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা করে। আমরাও তার সঙ্গে আছি। দেখা যাচ্ছে কোথাও অসুখের ব্যাপকতা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে , এমনকী কোথাও কোথাও কমেওছে। যানবাহন এবং রান্নায় উন্নত জ্বালানি ব্যবহার ভারতে সুফল দিয়েছে। হাইজিন হাইপোথেসিস নামে একটি পাশ্চাত্য ধারণা কিছুদিন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সোজা ভাষায় মানুষ কৃত্রিম পরিবেশে যত জীবনযাপন করবে, অ্যালার্জি ও অ্যাজমা তত বাড়বে। ধুলোবালি ও জীবাণু আমাদের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশের জন্য জরুরি। 
বেশিরভাগ সময়েই শিশুর অ্যাজমা প্রথম ছয় বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়।  মা-বাবার ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, ফাস্টফুড, খেলাধুলাবিহীন টিভিসর্বস্ব জীবন ফুসফুসের স্বাভাবিক বিকাশ প্রতিহত করে। সুতরাং ইনহেলারে কোনও ভীতি নেই। অসুখটাকে চিহ্নিত করতে হবে। সঠিক ইনহেলার সঠিক ও পর্যাপ্তভাবে ব্যবহার করাই রোগ মুক্তির 
পথ। 

2nd     February,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ