বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

জ্বর, সর্দি, কাশি এখন 
বেশিদিন  ভোগাচ্ছে কেন?

পরামর্শে সল্টলেকের ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল (সল্টলেক)-এর সিসিইউ-এর ইনচার্জ ডাঃ শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।
 
শীতকালে সর্দি, কাশি হওয়ার প্রথম কারণ হল তাপমাত্রার পরিবর্তন। দ্বিতীয়ত, শীতে আবহাওয়া অত্যন্ত শুকনো হয়ে পড়ে। ঠান্ডার কারণে জলপানের মাত্রাও কমে যায়। সব মিলিয়ে ফলে মুখগহ্বর, গলা শুকিয়ে গিয়ে কাশির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আবার শীতকালে কিছু ভাইরাস রীতিমতো সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাইনোভাইরাস এমনই অতিপরিচিত ভাইরাস। ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়া মাত্রই রোগীর সর্দি, কাশি জ্বরের উপসর্গ দেখা যায়। তবে ভাইরাসের সংক্রমণজনিত সমস্যা একটানা কখনওই থাকে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর উপসর্গ চলে যায়। অথচ এখন সর্দি ও কাশির সমস্যা প্রলম্বিত হচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা দশদিন, কখনও একমাস অবধি সর্দি-কাশির সমস্যা স্থায়ী হচ্ছে। কেন হচ্ছে এমন? দেখা যাক—
দূষণ
বস্তুকণা পি.এম ২.৫ (পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ বা যে বস্তুকণার আকার ২.৫ মাইক্রন বা তার কম) হল বাতাসে থাকা অতি সূক্ষ্ম কঠিন এবং তরল কণার যোগফল। এই ধরনের বস্তুকণার বেশিরভাগই বিপজ্জনক। নিয়মিত পিএম ২.৫-এর সংস্পর্শে এলে ফুসফুসের রোগ, হার্টের সমস্যা, ক্যান্সার— বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বাতাসে ভাসমান পিএম ২.৫ বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র নানা দূষক উপাদান মানবস্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত হানিকারক। দিল্লিতে বায়ুদূষণের প্রভাব কেমন, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সেখানে স্কুলগুলিতে ছু’টি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতাও খুব ভালো একটা অবস্থানে নেই। নির্ধারিত দূষণমাত্রার অনেক উপরে দূষণ রয়েছে কলকাতায়। আর দূষণ বাড়লেই শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যাও বাড়তে থাকে। সর্দি-কাশি তো বাড়েই, সঙ্গে বাড়তে থাকে হাঁপানি, সিওপিডি-এর সমস্যা। বিশেষ করে যাঁদের কোনও দিন অ্যালর্জির সমস্যা ছিল না, তাঁরাও দূষণের কুপ্রভাবে অ্যাজমার মতো সমস্যায় পড়ছেন।
ভাইরাস বনাম প্রদাহ
ভাইরাল ইনফেকশনে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট আক্রান্ত হয়, এটা আমরা জানি। কাশি, নাক বন্ধ ও তার সঙ্গে থাকে জ্বর। রোগীর জ্বর নেই কিন্তু দিনের পর দিন ধরে সর্দি ও কাশির মতো সমস্যা থেকে যাচ্ছে, মানে বুঝতে হবে রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলির পিছনে যত না বেশি সংক্রমণ দায়ী, তার চাইতে অনেক বেশি দায়ী প্রদাহ!
বিপদ কখন?
ভাইরাল ইনফেকশন আছে। কাশি, সর্দি হচ্ছে। এই অবস্থায় সঠিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন বা ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। আর দূষণের কারণে যেহেতু প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, ফলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে ‘কোমর্বিডিটি’ থাকা মানুষের। অর্থাৎ একটু বয়স্ক মানুষ যাঁদের সুগার, প্রেশার, হার্টের অসুখ রয়েছে, তাঁদের শীতকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিপদ কিন্তু যথেষ্ট বেশি। তাই শীতকালে বয়স্ক মানুষের জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হন। একটু ভেপার নিলেই ঠিক হয়ে যাব বা গার্গেল করলেই অসুখ সেরে যাবে, ভাবলে হবে না। কিংবা চিকিৎসককে ফোন করে দু’টো ওষুধ খেয়ে নিয়ে উপসর্গ কমিয়ে ফেললেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন ভাবাটাও ভুল। ফিজিক্যাল একজামিনেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাশি হচ্ছে এমন ব্যক্তির বুকে স্টেথো বসিয়ে ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে অনেকখানি বোঝা যায়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীকে সামনে থেকে পরীক্ষা করে, তাঁর অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না তাও নির্ণয় করতে পারেন। এর ফলে প্রাণহানিও রোধ করা যেতে পারে।
ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ কেনা নয়
অ্যান্টিঅ্যালার্জি ওষুধ খেয়ে উপসর্গ কমিয়ে ফেলার মতো ঘটনা আমাদের দেশে আকছার দেখা যায়। বলে রাখি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এভাবে অ্যান্টিঅ্যালার্জি ওষুধ খেলে গলার মিউকোসা শুকিয়ে যেতে থাকে। ফলে শ্বাসনালীতে প্রদাহ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কোনও সংক্রমণ বা অসুখ ছাড়াই লাগাতার ঈষদুষ্ণ জলে নুন দিয়ে গার্গেল করারও বিপদ রয়েছে। কারণ লবণের হাইড্রোফেলিক ধর্মের কারণে গলার মিউকোসা থেকে জল টেনে নেয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রক্রিয়ায় মিউকোসাল ইনজুরি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গলার কোনও অসুখ না থাকলে একটানা নুন জল দিয়ে গার্গেল করবেন না। তাতে প্রদাহজনিত কাশি হওয়ার বিপদ বাড়ে।
সমাধান কী?
• মাস্ক পরুন
করোনা মহামারীর সময়ে অ্যাজমা এবং সিওপিডির সমস্যা অনেকখানি কম ছিল। তার কারণ হল নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার এবং হাত ধোওয়ার অভ্যেস। মাস্ক যেমন ভাইরাল ইনফেকশনের আশঙ্কা কমিয়েছিল, তেমনই ধুলো-ধোঁয়ার হাত থেকেও রক্ষা করছিল। আবার
করোনার সময়ে অন্য ব্যক্তির থেকে শারীরিক দূরত্ব পালন ও হাত ধোওয়ার কারণে চট করে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছিল।
অথএব শীতকাল এলে অন্তত দু’টি বিষয় মনে চলুন— ১. মাস্ক পরুন। ২. হ্যান্ড হাইজিন মেনে চলুন।
• ব্যায়াম
নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাটি, জগিং, সাইকেল চালানোর মতো এক্সারসাইজ শ্বাসযন্ত্রকে শক্তিশালী করে। কফ জমা যেমন প্রতিরোধ করে, তেমনই কফ বের করে দিতেও কার্যকরী। 
• ওজন কমান
মাত্রাতিরিক্ত ওজন থাকলে কমান। স্থূলত্ব এবং মাত্রাতিরিক্ত ওজন ফুসফুসের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়।
• বিছানার চাদর, বালিশের কভার
অ্যাজমা, সিওপিডি রোগীর নিয়মিত বিছানার চাদর, বালিশের কভার পরিবর্তন করা দরকার। বালিশে দু’টি কভার পরিয়ে রাখতে পারলে ভালো হয়। কারণ বালিশে অতি ক্ষুদ্র কিছু ধূলিকণা থাকে যা অ্যাজমা, সিওপিডির উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে।
শেষ কথা
নিয়ম মেনে চলুন। ভালো থাকুন। জীবন উপভোগ করুন সুস্থ শরীরে।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

26th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ