বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

হাড়ের যত্নে খাবার
ডাঃ রুদ্রজিৎ পাল

অস্টিওপোরোসিস। অর্থাৎ হাড়ের ক্ষয়রোগ। এটিকে কোন রোগ না বলে বার্ধক্যের স্বাভাবিক পরিণতিও বলা যায়। এর ফলে আমাদের শরীরের নানা জায়গায় হাড় ক্ষয় হয়ে নরম হয়ে যায় এবং সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়। ধরুন আপনি চেয়ারে বসে আছেন, হঠাৎ করে ঝুঁকতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন। এতে আপনার হাতে-পায়ে সামান্য লাগতে পারে, বড়জোর একটু ছড়ে যেতে পারে। এর বেশি কিছু হবে না। কিন্তু যাদের অস্টিওপোরোসিস আছে, তাদের এইটুকু আঘাতেই কোমরের বা শিরদাঁড়ার হাড় ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যাবে।
এই অধ্যায়ে আলোচনা এই অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় কীভাবে খাদ্যের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়, সেই নিয়ে। তবে তার আগে এটা মনে রাখবেন যে হাড়ের ক্ষয়ের নানা কারণ আছে। অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান কিন্তু হাড়ের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। একদম শিশু বয়স থেকে আপনার খাদ্যাভ্যাস কীরকম, আপনার শারীরিক কসরতের পরিমাণ কীরকম—এসবও কিন্তু পরিণত বয়সে আপনার হাড়ের ঘনত্ব কত হবে, তা নির্ণয় করে। সুতরাং ছোট বয়সে যারা নিয়মিত খেলাধুলা করেছেন, তাদের পরিণত বয়সে হাড়ের ঘনত্ব অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
হাড়ের গঠনের জন্য তিনটি প্রধান উপাদান লাগে— ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন। প্রোটিন আমাদের শরীরের সার্বিক গঠনের জন্যই দরকার। এবং এই প্রোটিন হতে হবে হাই বায়োলজিক্যাল ভ্যালুর। এছাড়া হাড়ের ক্ষয়ের অসুখ আটকাতে হলে ক্যালশিয়াম বা ভিটামিন ডি খাবারে বেশি করে থাকতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ক্যালশিয়াম লাগে ১০০০-১২০০ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন ডি লাগে ৮০০—১০০০ ইউনিট। গর্ভাবস্থায় এর বেশিও লাগতে পারে।
দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রীতে ক্যালশিয়াম খুব বেশি থাকে। প্রাণীর দুধ ছাড়াও ওট মিল্ক, সয়া মিল্ক ইত্যাদি এখন পাওয়া যায়। এগুলিতে বেশিরভাগ সময়ে ক্যালশিয়াম যোগ করা থাকে। তাই একেক ব্র্যান্ডের দুধে একেক রকম ক্যালশিয়ামের মাত্রা হতেই পারে। ভেষজ উৎস থেকে যে দুধ, যেমন সয়াবিন বা আমন্ড মিল্ক, তাতে ক্যালশিয়াম থাকলেও সেই ক্যালশিয়াম কিন্তু পুরো শোষিত হবে না। উদ্ভিজ্জ দ্রব্যের মধ্যে নানারকম রাসায়নিক থাকে, যেগুলো ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। গোরুর দুধে ক্যালশিয়াম বিরোধী রাসায়নিকের সমস্যা নেই। ঠিকমতো দুধপান যারা করেন তাদের ক্যালশিয়ামের অভাব হওয়ার কথা নয়। তবে গোরুর দুধে যে ল্যাকটোজ থাকে, অনেকের সেটা হজমে সমস্যা হয়। এই মানুষদের প্রাণিজ দুধ খাওয়ার অসুবিধা রয়েছে। তবে সয়া দুধ বা আমন্ড দুধে ল্যাকটোজ থাকে না। তাই এইসব উদ্ভিজ্জ দুধ এই রোগীরা খেতেই পারেন। 
দুধের মতো দুগ্ধজাত সামগ্রীতেও প্রচুর ক্যালশিয়াম থাকে। অর্থাৎ দই, চিজ বা লস্যিতে যথেষ্ট ক্যালশিয়াম আছে। কিন্তু মনে রাখবেন মাখন বা ঘি দুগ্ধজাত খাবার হলেও এতে ক্যালশিয়াম থাকে না। 
বেশিরভাগ ফল এবং সব্জিতেই ক্যালশিয়ামের পরিমাণ খুব কম। অন্তত আমাদের দৈনিক যা দরকার, সেই ১০০০-১২০০ মিলিগ্রামের তুলনায় ফল বা সব্জিতে খুব বেশি ক্যালশিয়াম থাকে না। চালে ক্যালশিয়াম থাকে ১০০ গ্রামে ১০-১২ মিলিগ্রাম আর আটায় প্রতি ১০০ গ্রামে থাকে ৪০—৫০ মিলিগ্রাম। ময়দা বা সুজিতে ক্যালশিয়াম আরও কম। এর মানে হল, কেউ যদি ভাত বা রুটি  আর তরকারি খেয়ে থাকে, আর সেই সঙ্গে ফল খায়, তাহলেও কিন্তু যথেষ্ট ক্যালশিয়াম শরীরে আসছে না। এর ওপর কিছু সব্জিতে ক্যালশিয়াম বেশি থাকলেও এইসব সব্জিতে ফাইটেট বা অক্সালেট সল্ট থাকায় এই ক্যালশিয়াম আমাদের শরীরে শোষিত হতে পারে না। দুধের খাবারের বাইরে ক্যালশিয়ামের একটা প্রধান উৎস হল মাছ। সব রকম মাছ সব জায়গায় পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের এখানকার পরিচিত অনেক মাছেই যথেষ্ট ক্যালশিয়াম রয়েছে। বরং বলতে পারেন যে চিকেন বা অন্য পশুর মাংসে কিন্তু ক্যালশিয়াম খুবই কম। যেমন, চিকেনে ক্যালশিয়াম আছে ১০০ গ্রামে মাত্র ১২—১৫ মিলিগ্রাম। তাই আমাদের দেশে যারা শুধু মাছ খেয়ে থাকেন, তাদের খুব একটা ক্যালশিয়ামের অভাব হওয়ার কথা নয়। বরং  বিদেশে, যাদের মূল প্রোটিনের উৎস নানারকম পশুর মাংস, তাদের কিন্তু ক্যালশিয়ামের অভাব হতেই পারে। তাই ওদের দেশে দুধ, কর্নফ্লেক্স সহ নানা খাদ্যে ক্যালশিয়াম মেশানো হয়। তাহলে এককথায় বলতে গেলে শরীরের দৈনিক ক্যালশিয়ামের চাহিদা পূরণে আপনার উপায় হল, দুধের খাবার, মাছ, তিল, পোস্ত এবং আমন্ড বাদাম। এগুলির একটি বা দু’টি রোজ খাদ্যতালিকায় থাকতেই হবে। 
এবার আসি ভিটামিন ডি-এর কথায়। ভিটামিন ডি আমাদের হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। অন্ত্র থেকে ক্যালশিয়াম শোষণে সাহায্য করে। তাই শুধু ক্যালশিয়াম খেলে হবে না। সেই সঙ্গে ভিটামিন ডি থাকতে হবে। তবেই ক্যালশিয়াম ঠিকঠাক কাজ করতে পারবে। মাছ হল প্রাকৃতিক ভিটামিন ডি-এর সবথেকে ভালো উৎস। বিশেষ করে তেলযুক্ত মাছ। আমাদের দেশে যে সব তেলযুক্ত মাছ পাওয়া যায়, যেমন ইলিশ বা আড় মাছ, তাতেও প্রচুর ভিটামিন ডি আছে। বরং রুই, কাতলা বা মৃগেলে সেরকম ভিটামিন ডি নেই। মাছের মাংসের চেয়েও মাছের লিভারে ভিটামিন ডি আরও বেশি। যেমন, টুনা মাছের মাংসে ভিটামিন ডি আছে ৩৭—৪০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কেজি। আর টুনা মাছের লিভারে এই ভিটামিন আছে ৩০,০০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কেজি। কিন্তু আমাদের দেশে লিভারসুদ্ধ মাছ খাওয়ার প্রবণতা কম। বরং মাছ কেনার সময়ে ‘নাড়িভুড়ি’ বাদ দিয়ে কেনাই নিয়ম। সেখানেই তো লিভার বাদ চলে গেল। এর একমাত্র উপায় হল ছোট মাছ, যেমন মৌরলা, গোটা চিবিয়ে খাওয়া। কিন্তু মাছের পেট বেশি পরিষ্কার করা মানেই ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ লিভার বাদ চলে যাওয়া। মাছের তেলে কিছুটা ভিটামিন ডি থাকে। কিন্তু কোলেস্টেরলের ভয়ে সেটা বেশি খাওয়ার চল এখন উঠেই গেছে। সিঙি মাছে ভিটামিন ডি থাকে প্রায় ২০০ ইউনিট প্রতি ১০০ গ্রামে। তাই শিশুদের রোজ দুই থেকে তিনটি সিঙি মাছ খাওয়াতে পারলে ভিটামিন ডি-এর অভাব হবে না। 

অনুলিখন: সুপ্রিয় নায়েক

27th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ