বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

অটোইমিউন ডিজিজ
শত্রু যখন ঘরেই!

অটো ইমিউন ডিজিজের খুঁটিনাটি জানালেন অ্যাপোলো গ্লেনিগলস হাসপাতালের বিশিষ্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

অটোইমিউন ডিজিজ কী?
অটোইমিউন ডিজিজে নিজের কোষকে চিনতে পারে না শরীর। নিজের কোষগুলোর মধ্যেই মারামারি লেগে যায়। একে অপরকে শত্রু ভাবে। অনেকটা একান্নবর্তী পরিবারে ভাই ভাইয়ের বিবাদের মতো। 

এটি কি জিনঘটিত অসুখ?
একেবারেই নয়। এই ধরনের অসুখ কিছু কিছু পরিবারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ঠিকই, তবে অটো ইমিউন ডিজিজ কোনও জিনঘটিত অসুখ নয়। বাবা-মায়ের এই অসুখ থাকলে, ছেলেমেয়েরও হবে এমন নয়। তবে হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। 

খুব প্রচলিত এই ধরনের অসুখ কোনগুলো?
শিশুকাল থেকেই অনেকের ডায়াবেটিস হয়। সেটাও এক ধরনের অটো ইমিউন অসুখ। এক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলোকে অন্য কোষগুলি চিনতে পারে না। কোনও কোনও শিশুর হাইপোথাইরয়েড থাকে একেবারে এক-দু’ বছর বয়স থেকে। সেটাও অটো ইমিউন অসুখের ফল। একে অটো ইমিউন থাইরোডাইটিস বলে। আবার লিভারের কোষগুলোকে আমাদের শরীরের প্রহরী কোষ লিম্ফোসাইটরা চিনতে পারে না, বুঝতে পারে না যে এটা আমারই লিভার। তখন অটো ইমিউন হেপাটাইটিস হয়। অটো ইমিউন প্যাংক্রিয়াটাইটিসও শিশুকালে হতে পারে।

আর্থ্রাইটিস অটো ইমিউন অসুখ? 
বাত বা আর্থ্রাইটিস অটো ইমিউন ডিজিজ নয়। তবে কিছু কিছু বিশেষ ধরনের অটো ইমিউন অসুখকে বাত বা আর্থ্রাইটিসের মধ্যে ফেলা হয়। যেসব অটো ইমিউন অসুখকে একধরনের বাত বলা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হল রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং সিস্টেমিক লুপাস এরিদিমেটোসাস বা লুপাস, জোগ্রেন, অ্যাঙ্কোলাইজিং স্পন্ডাইলোসিস ইত্যাদি। আইবিডি বা ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজও অটো ইমিউন ডিজিজের বড় উদাহরণ। 

পৃথিবীর প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষই সোরিয়াসিসে ভুগছেন। এটাও কি একই অসুখ?
হ্যাঁ, এটাও অটো ইমিউন ডিজিজ। এর সঙ্গেও বাত বা আর্থ্রাইটিসের যোগ আছে। দীর্ঘদিন সোরিয়াসিসে ভুগলে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস হয়।  

পেশিকে বিপদ ফেলতে পারে এই রোগ?
হ্যাঁ, ডার্মাটোমায়োসাইটিস বা পলিমায়োসাইটিস এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শরীরের ভিতর কোনও ক্যান্সার সেল লুকিয়ে থাকলে এই ধরনের অসুখ দেখা যায়। এই রোগে অটো ইমিউন পদ্ধতিতে পেশি তার কার্যক্ষমতা হারায়। মানুষ আর হাঁটাচলা করতে পারে না। সঙ্গে র‌্যাশ ও জ্বর থাকে। এই ধরনের রোগ নির্ণয় করা বেশ কঠিন। 

খুব অল্প কোনও উপসর্গ থেকে শুরু হয়ে বড় রোগের আকার নেয় এমন অটো ইমিউন ডিজিজ আছে?
বেশ কিছু অটো ইমিউন ডিজিজই এই দলে পড়ে। তবে যার কথা না বললেই নয়, তা হল ওয়েগনার গ্র্যানুলোম্যাটোসিস। সর্দি-কাশি দিয়ে শুরু হয়। নাক, মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় শেষে। এই রোগে ফুসফুস আক্রান্ত হয়। রোগটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে বিপদ বাড়তে পারে। 

রোগ নির্ণয় সহজ নয় কেন?
কারণ এই সব রোগের উপসর্গ খুব সাধারণভাবে আসে। দেখলে বোঝাই যায় না এত নিরীহ উপসর্গ নিয়ে এরা হাজির হতে পারে। হয়তো একটু নাক বন্ধ হওয়া দিয়ে শুরু হল অসুখটা। এরপর হয়তো জ্বর হল, সামান্য সর্দি হল এমন। কারও কারও ক্ষেত্রে এই অসুখের তীব্রতাও এক এক জনের শরীরে এক এক রকম। 

এই রোগের চিকিৎসা কঠিন কেন?
শরীরের অনাক্রম্যতা কমিয়ে ফেলাই এর সমাধান। কিন্তু তা কমালে অন্য সব অসুখ হানা দেবে ও শরীর বিপদে পড়বে। সংক্রমণ তো বাড়বেই, শরীরের মধ্যে যে মেরামতির কাজ চলে, তাকেও নিয়ন্ত্রণ করে এই অনাক্রম্যতা। কিছু বিশেষ ধরনের হার্ট অ্যাটাক, ম্যালিগন্যান্সি কমাতেও ইমিউনিটি কাজ করে। ফলে এই ইমিউনিটি কমিয়ে ফেললে হয়তো এমন সংক্রমণ হল বা এমন রোগ হানা দিল, যে তাতে হয়তো ক্যান্সার হল। 

এর কোনও উন্নত চিকিৎসা আছে?
এখন বিভিন্ন অ্যান্টিবডি দিয়ে চিকিৎসা হচ্ছে। টিএনএফ ব্লকার দিয়ে এই চিকিৎসা চালানো যায়। বিভিন্ন উন্নতমানের স্টেরয়েড দিয়ে এই রোগগুলোর চিকিৎসা চলে। ইমিউন কোষের গায়ে গায়ে অনেক বিশেষ রিসেপ্টার আছে। সেই রিসেপ্টার ব্লকার দিয়েও অটো ইমিউন রোগের চিকিৎসা করা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ব্লকার দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া কিছু অ্যান্টিক্যান্সার কেমোথেরাপি এজেন্ট দিয়েও চিকিৎসা চলে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে, নিয়মিত চিকিৎসায় থাকলে রোগমুক্তিও হয়। 
সাক্ষাৎকার মনীষা মুখোপাধ্যায়
 

15th     December,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ