বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে যক্ষ্মা

পরামর্শে যক্ষ্মারোগ বিশেষজ্ঞ  ডাঃ প্রণব মজুমদার।

টিবি রোগটি কী?
যক্ষ্মা রোগটি হয় টিউবারক্যুলোসিস ব্যাসিলাই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। এই সংক্রমণ মূলত দেখা যায় ফুসফুসে। তবে ফুসফুস ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে পেট, হাড়, ত্বক, চোখ, জননেন্দ্রিয়ের কথা বলা যায়। মোটকথা চুল এবং নখ বাদ দিয়ে যে কোনও অঙ্গে টিবি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রোগ লক্ষণ কী কী? 
জ্বর, একটানা কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলির যে কোনও একটি দেখা দিলে সতর্ক হন।

যক্ষ্মার চিকিৎসা এবং সরকারি উদ্যোগ
১৯৬২ সালে দেশে শুরু হয়েছিল জাতীয় যক্ষ্মা প্রকল্প। তবে প্রার্থিত ফলাফল না মেলায় ১৯৯৩ সালে শুরু হয় সংশোধিত জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের সবচাইতে বড় সাফল্য হল ‘ডাইরেক্টলি অবজার্ভ থেরাপি’ (ডট)। এই প্রকল্পে সরকারি কর্মীর পর্যবেক্ষণে থাকেন রোগী। ছয় মাস ধরে রোজ নিয়ম মেনে রোগীকে ওষুধ খেতে হয়। ‘ডট’ পদ্ধতিতে অনেকখানি সাফল্য মেলে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আরএনটিসিপি-এর নাম বদলে হয় ন্যাশনাল টিউবারক্যুলোসিস এলিমিনেশন প্রোগ্রাম (এনটিইপি) বা জাতীয় যক্ষ্মা নির্মূলকরণ প্রকল্প। 
এনটিইপি এর অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য হল তিনটি। এক, ২০২৫ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যুহার কমানো, দুই, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নতুন করে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দূর করা এবং তিন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে টিবি চিকিৎসায় রোগীর খরচ শূন্য করা। এই প্রকল্প ধাক্কা খায় ২০২১ সালে। কোভিডের কারণে যক্ষ্মা রোগীর রোগনির্ণয় প্রক্রিয়া খানিক বাধাপ্রাপ্ত হয়। তার নেতিবাচক ফলাফলও নজরে আসে। 
২০১৯ সালে সারা দেশে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ লক্ষের আশপাশে। টিবি ইন্ডিয়া রিপোর্ট ২০২২–এর তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে টিউবারক্যুলোসিস রোগীর সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৯ লক্ষ ৩৩ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ রোগীর সংখ্যায় প্রায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়া প্রাণহানির হারও বাড়ে। তবে লড়াই থেমে ছিল না। তারই ফলে যক্ষ্মা নির্মূলকরণের উদ্যোগে কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যও মিলেছে।
ভারতের নানা রাজ্যে বেশ কিছু জেলায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে যক্ষ্মা দূর করা সম্ভব হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর এবং নদীয়া জেলা ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে যক্ষ্মা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।

আধুনিক চিকিৎসা
একটা সময়ে, যক্ষ্মার চিকিৎসায় প্রায় ৯ মাস ধরে রোগীকে ওষুধ খেতে হতো। এখন তা কমিয়ে ছ’মাস করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে যাতে ছ’মাসের জায়গায় রোগীকে মাত্র তিনমাস ওষুধ খেতে হয়। কারণ চিকিৎসকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি। আসলে চিকিৎসাপর্ব যত প্রলম্বিত হয়, ততই ওষুধ খাওয়ার রুটিনে ছেদ পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। বৃদ্ধি পায় ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়।

ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি
এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরনো যক্ষ্মা রোগীর ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিতে আক্রান্ত হওয়ার হার আগে ছিল ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ! আবার, নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্তদের ৪ শতাংশেরই ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি ধরা পড়ছে। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর প্রাণ বাঁচাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।

সেগুলি কী কী? 
১. কোনও ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহ হলে চেষ্টা করা হচ্ছে প্রথমেই সিবি ন্যাট পরীক্ষার করানোর। 
এই পরীক্ষার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স টিবি আছে কি না তা বোঝা যায়। বিশেষ করে এইচআইভি আক্রান্ত, শিশু এবং ফুসফুস ছাড়া অন্য কোনও অঙ্গে টিবি ধরা পড়লে সেইসব রোগীর সিবিন্যাট পরীক্ষা করা হচ্ছে।
২. সিবিন্যাট পরীক্ষায় ‘রিফামপিসিন’ (যক্ষ্মা নিরাময়ের প্রাথমিক পর্যায়ের ওষুধ) রেজিস্ট্যান্স ধরা পড়লে তাঁকে ‘লাইন প্রোব অ্যাসে’ পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। এই পরীক্ষায় রোগীর আর কোন কোন ওষুধে রেজিস্ট্যান্স আছে তা জানা যায়।

ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির চিকিৎসা
আগে এই ধরনের রোগীর চিকিৎসা প্রায় ২ বছর ধরে করতে হতো। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট রোগীর সার্ভাইভ্যাল রেট ৫০ শতাংশেরও কম ছিল। তবে এখন ওষুধ খাওয়ার নিয়মে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। তাতে প্রায় ৮৪ শতাংশ ড্রাগ রেজিস্টান্ট টিবি রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। নতুন নিয়মে ওষুধ খেয়েও যাঁরা সুস্থ হচ্ছেন না তাঁদের জন্য ভিন্ন প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা চালানোর ট্রায়াল দেওয়া হয়েছিল ভারতে। সেই ট্রায়াল সফল হয়েছে। ফলে ড্রাগ রেজিস্টান্ট টিবি রোগীর জন্য আশার আলো অবশ্যই রয়েছে।

টিবির কি কোনও ভ্যাকসিন আছে? 
দু’টি টিবি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায় খুব দ্রুত ভালো খবর মিলবে।

রোগ দূরীকরণে আধুনিক পদক্ষেপ
১. বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে ‘অ্যাকটিভ কেস ফাইন্ডিং’-এ জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে সমস্ত অঞ্চলে টিবি হওয়ার আশঙ্কা বেশি, সেই সব এলাকার টিবি সেন্টারের তরফে ওই এলাকায় বছরে দু’বার টিউবারক্যুলোসিস স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। কোনও ব্যক্তির যক্ষ্মার চারটি উপসর্গের মধ্যে যে কোনও একটি লক্ষণও থাকলে, তাঁর এক্স রে করা হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে তৎক্ষণাৎ। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হচ্ছে চিকিৎসা।
২. নতুন প্রকল্পের অধীনে, সক্রিয় টিবি রোগীর পরিবারের সদস্যদেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোনও উপসর্গহীন সদস্যের শরীরে টিবি ব্যাসিলাই জীবাণুর অস্তিত্ব মিললে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে টিবি প্রতিরোধের ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে রোগীর পরিবারের সকল ব্যক্তিদেরই টিবি প্রতিরোধী ওষুধ খাওয়ানোর নিয়ম রয়েছে।
কাদের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
ধূমপায়ী, ড্রাগসেবী, এইচআইভি রোগীর টিবি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া টিবিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝঁুকি বাড়ায় অপুষ্টি। তাই অপুষ্টি থাকলে টিবি আছে কি না তাও পরীক্ষা করতে বলা হয়। অন্যদিকে টিবি ধরা পড়লে রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার জন্য প্রতি মাসে অর্থসাহায্যও করা হয়। এছাড়া এন-টিবি অ্যাপ চালু করা হয়েছে রোগীর ফলোআপের জন্য।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

8th     December,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ