বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ঝটপট ওজন কমান 
ঘরোয়া খাবারেই

পরামর্শে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস মিত্র।

 আমরা মোটামুটি তিন ধরনের খাবার খাই— কার্বহাইট্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন। 
এছাড়া ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজের জন্য শাকসব্জি এবং ফলও খাই। শাকসব্জি, ফলের মধ্যেও কিছু কার্বোহাইড্রেট থাকে। প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে কম মাত্রায়।
 এই ধরনের খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ক্যালোরি ঢোকে। আমরা যে সারাদিনে হাঁটি, দৌড়ই, কাজ করি, জেগে থাকি সবকিছুর জন্যই ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। অতএব সহজ হিসেবে, কায়িক শ্রমের কাজ করলে ক্যালোরি খরচ হয়। পরিশ্রম না করলে শরীরে ক্যালোরি জমা হয়। বাড়তি ক্যালোরি দেহে মেদ হিসেবে সঞ্চিত হয়। ওজন বাড়তে থাকে।
 ফ্যাট, প্রোটিন কার্বহাইড্রেট সব ধরনের খাদ্যেই ক্যালোরি থাকে। 
তবে তিন ধরনের আহার্যের মধ্যে ক্যালোরির মাত্রা কম থাকে প্রোটিনজাতীয় খাদ্যে। 
ফ্যাট এবং শর্করাজাতীয় খাদ্যে ক্যালোরির মাত্রা থাকে যথেষ্ট বেশি।
 আমরা বাঙালিরা যে ধরনের খাদ্য খাই তার মধ্যে প্রধান প্রধান কার্বহাইড্রেটজাতীয় খাদ্যগুলি হল— ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি।
ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের মধ্যে পড়ে ঘি, মাখন, চিজ, তেল। প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সয়াবিন ইত্যাদি।
কতটা ক্যালোরি উপযুক্ত?
দ্রুত ওজন কমাতে হলে আমাদের উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য খাওয়া কমাতে হবে। কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যগ্রহণ বাড়াতে হবে। এখন রোজ খাদ্যের মাধ্যমে কতটা ক্যালোরি গ্রহণ করলে ওজন বাড়ার বদলে কমবে, তা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। দৈহিক ওজন ধীরে ধীরে ঝরাতে হলে, সর্বোচ্চ ১২০০ কিলো ক্যালোরি খাওয়া যেতে পারে। তবে দ্রুত ওজন ঝরাতে হলে বা দিন পনেরো-কুড়ির মধ্যে অনেকটা মেদ ঝরানোর প্রয়োজন হলে, ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা নামিয়ে আনতে হবে ৮০০ কিলো ক্যালোরিতে। আর তা করা যেতে পারে রোজকার খাদ্যাভ্যাসে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে। 
ওজন কমাতে সকালের টিপস
ঘুম থেকে উঠে একগ্লাস ঈষদুষ্ণ জলে একটা পাতিলেবুর রস এবং ভালো মানের মধু দিয়ে গুলে জল পান করতে হবে। আধঘণ্টা পরে খেতে হবে চিনি ছাড়া গ্রিন টি। গ্রিন টি-এর সঙ্গে বিস্কুট খেতে চাইলে আটার তৈরি বিস্কিট বা হাই ফাইবার বিস্কিট খেতে পারেন ১টি।
ব্রেকফাস্ট 
ওজন কমাতে গেলে ব্রেকফাস্টে বাদাম বা নাটস খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২৫ গ্রাম মতো আমন্ড, কাজু, আখরোট মিলিয়েমিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এগুলির বিকল্প হিসেবে নিশ্চিন্তে এক মুঠো ছোলা ও কয়েকটা বাদাম রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। সকালে উঠে খেয়ে নিন। আবার এই ধরনের খাবারের বদলে ডিমের দুটো সাদা অংশও খাওয়া যায়। খাওয়া যেতে পারে একবাটি টক দই কিংবা এক কাপ দুধের সঙ্গে ৩০ গ্রাম মতো ছাতু। দুধের সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম মতো ওটস মিশিয়েও খাওয়া যায়। দালিয়াও খাওয়া যেতে পারে। মোট কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এভাবে ব্রেকফাস্ট করতে হবে। উপরিউক্ত সব খাবারগুলিতেই ক্যালোরির মাত্রা থাকে অল্প।
লাঞ্চ 
ভাত হোক রুটি— খেতে হবে অল্প মাত্রায়। ভাত খাওয়া যেতে পারে বড়জোর এককাপ। রুটি হলে একটি। ব্রাউন রাইস খেলেও মাত্রা হবে দু’কাপ পরিমাণ। তবে এত স্বল্প ভাতে খিদে নাও মিটতে পারে। তাই পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি পেতে আলু বাদ দিয়ে সমস্ত রকম সব্জি বেশি মাত্রায় খান। বিশেষ করে যে কোনও সবুজ শাকসব্জি খাওয়ার অভ্যেস ওজন কমানোর পক্ষে আদর্শ। অবশ্য রান্না করতে হবে সামান্য তেলে। যতটা সম্ভব সেদ্ধ করে খাওয়াই ভালো। আর হ্যাঁ, পাতে প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে হবে। তাই এক টুকরোর জায়গায় দুই টুকরো মাছ খান। মাছ ভাজতে হবে সামান্য তেলে। খেতে হবে হালকা ঝোল বানিয়ে। মাছের বদলে খাওয়া যেতে পারে চিকেন স্ট্যু। আবার চিকেনের বদলে দু’টো ডিম খাওয়া যায়। তবে কুসুম খাবেন একটিই। নিরামিষাশীরা ৫০ গ্রাম মতো পনির রাখুন পাতে। আমিষাশী ও নিরামিষাশী উভয়েই পারেন খেতে পারেন ২০০ গ্রাম মতো শশা, টম্যাটো, গাজর, বীট, পিঁয়াজ। স্যালাডের বদলে লাঞ্চে শসা বা টক দই রাখলেও তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। অতএব এইভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে হবে খাবার।
ফলও খেতে পারেন লাঞ্চের ১ ঘণ্টা পর। উদাহরণ হিসেবে পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি, শশা, জাম, জামরুল, পাকা পেঁপের কথা বলা যায়। এই ধরনের ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
সন্ধ্যা
চিনি-দুধ ছাড়া লাল চা খেতে পারেন। এছাড়া একগ্লাস লাউ-এর রস খেলেও তা ওজন কমাতে বিশেষ সাহায্য করে। খাওয়া যেতে পারে একটা ফল। ফল খাওয়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সারাদিনে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ফল খাওয়া যেতেই পারে।
ডিনার 
একটি রুটি। চিনি ছাড়া দু’কাপ মতো দুধ। এছাড়া চাইলে চিকেন স্ট্যু সহযোগেও রুটি খাওয়া যায়।
মনে রাখবেন
• শুধু খাবার খেলেই তো হবে না। তার সঙ্গে পেটের কিছু ব্যায়াম করলে দ্রুত ফল মেলে। উদাহরণ হিসেবে দিনে ১০০ টা উঠবসের মতো ব্যায়াম করা দরকার। ব্যায়াম করতে না পারলে মিনিট চল্লিশেক হন হন করে হাঁটলেও ভালো কাজ হয়। ৩০ মিনিট ট্রেড মিলেও হাঁটা যায়। সাইকেল চালালেও মিলবে উপকার। 
ফল এবং স্যালাড খাওয়ার মাত্রার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
যা করবেন না—
১. কোল্ড ড্রিংকস বা সফট ড্রিংকস খাওয়া যাবে না। একটি ৩০০ এমএল কোল্ড ড্রিংকস-এ যে পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, তা প্রায় ১০ চামচ পরিমাণ চিনির সমান। আবার খাবার মুখরোচক করার জন্য আমরা অনেকেই কেচাপ ব্যবহার করি। জানলে অবাক হবেন ১ চামচ কেচাপ মানে ১ চামচ চিনি! আইসক্রিম, চকোলেট, চিপস, শিঙাড়া, নাগেটস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ময়দার তৈরি খাবার মোটেই খাওয়া যাবে না।
২. ফ্রুট জ্যুস খাওয়া মানে শর্করার সহজ রূপ ফ্রুক্টোজ খাওয়া। ফলের রস খেলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি প্রবেশ করে। তাই ফলের রস নয় বরং গোটা ফল খান। 
৩. টিভি দেখার সময় খাবার খাবেন না। আনমনে বেশি খাওয়া হয়ে যায়।
৪. ওজন কমাতে হলে কার্বহাইড্রেট এবং ফ্যাটের মাত্রা যেভাবেই হোক কমাতে হবে। ফ্যাটের মাত্রা কমানো যেতে পারে নানা ভাবে। প্রথমত কম তেলে মাছ ভাজতে হবে। এছাড়া চিকেন স্ট্যু করেও খাওয়া যায়। অর্থাৎ তেল মশলা দিয়ে কষিয়ে খাওয়া যাবে না। ডিম খেতে হলেও ওমলেট নয়, বরং সেদ্ধ করে খাওয়া দরকার। তবে সবচাইতে ভালো হয় স্বাস্থ্যকর খাবারের একটা রুটিন করে নিতে পারলে।
এইভাবে মোটামুটি ১৫ দিন খাদ্যগ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আনলে অনেকখানি ওজন কমানো সম্ভব।
 লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

15th     September,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ