বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ডেঙ্গুতে হোমিওপ্যাথি
 

হোমিওপ্যাথির লাভ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ডেঙ্গুর মতো ভাইরাসঘটিত অসুখের খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে। দুর্ভাগ্য, মডার্ন মেডিসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে মানুষের কিছুটা ধারণা থাকলেও, হোমিওপ্যাথি নিয়ে এখনও অনেকেই ভ্রান্তির শিকার। হোমিওপ্যাথিতে বরং এই ধরনের অসুখ সারিয়ে তুললে রোগমুক্তির সঙ্গে রোগীর এনার্জি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুই’ই বজায় থাকে। ফলে রোগের দ্বিতীয়বার আক্রমণও প্রতিহত করা যায়। 
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি
বিগত কয়েক বছরে ডেঙ্গু কলকাতা সহ শহরতলিতে মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকার সংখ্যাও বাড়ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, বিভিন্ন এলাকা ক্রমেই ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে পড়া, পাড়ায় পাড়ায় নির্মাণ কাজ চলায় জমা জল এবং আবর্জনা দু’ই বেড়ে যাওয়া সহ নানা কারণে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এই বছর এখনও পর্যন্ত রাজ্যে এই রোগে ৬ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারাও গিয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে চাইলে কিছু সামাজিক নিয়ম যেমন মানতে হবে, তেমনই হোমিওপ্যাথিতে আস্থা রেখে ওষুধও খেতে হবে। বিশেষ করে যেসব মানুষের সুগার, প্রেশার, হার্টের অসুখ সহ বিভিন্ন কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা খুব কার্যকর। হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণবিশেষে ডেঙ্গু দমনের ওষুধ দেওয়া হয়। 
চিকিৎসা 
হোমিওপ্যাথিক ওষুধে ডেঙ্গুজ্বর সহজেই আয়ত্তে আনা যায়। যদি সঠিক নিয়ম মেনে ও চিকিৎসকের দেওয়া ডোজ অনুসারে ওষুধ খাওয়া শুরু করা যায়, প্রথম থেকেই এই রোগ আয়ত্তে থাকে। বাড়াবাড়িও হয় না। দেখা গিয়েছে, একএকটি এলাকায় ডেঙ্গুর লক্ষণ এক একরকম। সেই লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসা করলে ফলও ভালো মেলে। যেমন, হাওড়ার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে একবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের উপসর্গ দেখে তাঁদের রাসটাকস ২০০ দিয়েছিলাম। তাতে ম্যাজিকের মতো ফল হয়েছিল। 
মডার্ন মেডিসিন কি সঙ্গে চলবে? 
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে কি মডার্ন মেডিসিনের দরকার নেই? আমি একথা কখনও বলি না। আমি নিজে মডার্ন মেডিসিন পড়েই ডাক্তার হয়েছি। পরবর্তীকালে হোমিওপ্যাথিও পড়ি। তাই বুঝি, কোনও কোনও সময় এই রোগে মডার্ন মেডিসিন বা অ্যালোপ্যাথির সাহায্য নিতে হয়। যেমন, হোমিওপ্যাথিতে রোগের লক্ষণ দেখে ওষুধ দিতে হয়, এক একটি উপসর্গে এক-একটি ওষুধ ভালো কাজ করে, তাই অনেক সময়ই খুঁটিয়ে রোগের উপসর্গ বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। আর সেই সময় জ্বর হু হু করে বাড়তে থাকলে অনেক সময় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ রোগীকে দেওয়া হয়। জ্বর একটু আয়ত্তে আনার সঙ্গে সঙ্গে রোগের বাকি চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে চলে। রোগীর জ্বর প্রথম থেকেই আয়ত্তে থাকলে আলাদা করে প্যারাসিটামল দেওয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। 
আসলে যে কোনও রোগের চিকিৎসায় যদি হোমিওপ্যাথি ও মডার্ন মেডিসিন দুই-ই একসঙ্গে রোগীকে দেওয়া হয় ও ভালো ফল পাওয়া যায়, তাহলে তাতে কোনও অন্যায় নেই। রোগীর আরোগ্যই যেখানে বড় কথা, সেখানে ‘মিক্সোপ্যাথি’-র ভ্রান্তি না ছড়ানোই ভালো। 
 কোন কোন ওষুধ? 
১. ইউপেটোরিয়াম পারফোলিয়েটাম: এই রোগের আর এক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’। তাই বহু রোগীর জ্বরের সঙ্গে গা-হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা ও হাড়ভাঙার মতো যন্ত্রণা থাকে। প্রায় নড়াচড়া করতে পারেন না রোগী। এইসব ক্ষেত্রে ইউপেটোরিয়াম কাজের হতে পারে। 
২. রাসটাকস: রোগী শুয়ে থাকলে যন্ত্রণা বাড়ছে, চলাফেরা করলে গা-হাত-পায়ে ব্যথাটা কমছে। সঙ্গে জ্বর আছে। এইক্ষেত্রে দেওয়া যায়। 
৩. ব্রায়োনিয়া: গায়ে জ্বর, খুব ক্লান্তি, সঙ্গে রোগী শুয়ে থাকলে যন্ত্রণা কমছে। চলাফেরা করতে গেলেই যন্ত্রণা খুব বাড়ছে। এইসব উপসর্গে ব্রায়োনিয়া অসম্ভব কার্যকর হতে পারে। 
৪. হিপারসালফ: শরীরে অসম্ভব শীতবোধ রয়েছে, গা থেকে একটু চাদর সরালেই খুব ঠান্ডা লাগছে, এদিকে ঘামও হচ্ছে অল্প, সঙ্গে জ্বর এবং গায়ে ব্যথাও রয়েছে—এইসব উপসর্গে হিপারসলফ উপকারী হতে পারে।  
৫. অ্যান্টি ক্রুড: রোগীর জিভ সাদা হয়ে এসেছে, কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না, অরুচি ও ক্ষুধামান্দ্য থাকছে—এইসব ক্ষেত্রে অ্যান্টি ক্রুড দেওয়া যেতে পারে।  
৬. ক্রোটেলাস হরিদাস: জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, সঙ্গে নাক দিয়ে কালো রক্ত পড়ছে। সেক্ষেত্রে রোগীর প্রেসক্রিপশনে যেন অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে এই ওষুধটিও অবশ্যই থাকে।
৭. ফসফরাস: রোগীর সবরকম উপসর্গের সঙ্গে রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেল প্লেটলেট খুব কম। এমনকী, নাক দিয়ে রক্ত বেরলে এবং তার রং উজ্জ্বল লাল হলে রোগীকে ফসফরাস দিতে হবে। 
৮. সালফার: এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার পর। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। তাই তখন রোগী যাতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত না হন ও তাঁর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে, সেদিকে নজর রেখে এই ওষুধ দিতে হবে। 
 ডোজ?
এই সব ওষুধের ডোজ চিকিৎসক ঠিক করবেন। রোগীর লক্ষণ ও রোগের ধরন দেখে কখনও ২০০, কখনও ৩০ এভাবে রোগের মোকাবিলা করতে হবে। একটি ডোজ দেওয়ার পর রোগ কিছুটা কমে এলে, একটু ধৈর্য ধরতে হবে। পরপর নানা ডোজের ওষুধের প্রয়োগে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই ডোজ কেমন হবে তা রোগী বা তাঁর পরিজন কখনও ঠিক করবেন না। এই দায়িত্ব একমাত্র চিকিৎসকের। 
গবেষণাগারের স্বীকৃতি
ডেঙ্গু সম্পর্কে গবেষণার জন্য বরানগরে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি অঞ্জলি চ্যাটার্জি রিজিওনাল রিসার্চ সেন্টার আন্ডার সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি নামে পরিচিত। এখানকার ভাইরোলজি বিভাগে উপরের সবক’টি ওষুধ অ্যানিম্যাল মডেলে নানা কোষের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, এইগুলি লক্ষণ অনুসারে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। 
ডেঙ্গু হওয়ার আগেই প্রতিরোধ
ধরা যাক, ডেঙ্গুর মরশুমে এলাকায় বা বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের খুব ডেঙ্গু হচ্ছে। এমন অবস্থায় আক্রান্ত হননি এমন মানুষ প্রতিরোধক কিছু ওষুধেও ভরসা করতে পারেন। উপসর্গ না থাকলেও সেই ওষুধ খেতে পারেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা বাড়ে। সেক্ষেত্রে দেখতে হয়, ওই পাড়ায় যাঁদের ডেঙ্গু হচ্ছে, তাঁদের ঠিক কী কী উপসর্গ থাকছে। সেই অনুসারে প্রতিরোধী ওষুধ দেওয়া হয়। এতে তাঁরা অনেকটাই নিরাপদে থাকেন। অসুখ না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। অসুখ হলেও অতটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নাও যেতে পারে না। 
প্রতিরোধের প্রচলিত উপায়
ডেঙ্গু প্রতিরোধের কিছু সামাজিক নিয়ম আছে। চারপাশে যাতে মশা না জন্মাতে পারে, সেই ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা, জল ও আবর্জনা জমতে না দেওয়া, মশারি টাঙিয়ে শোওয়া, যতটা সম্ভব ফুলস্লিভ জামাকাপড় পরে বাইরে যাওয়া, ত্বকে কোনও সমস্যা না থাকলে মশা নিরোধক স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করা— এগুলি মেনে চলতে হবে। 
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়

8th     September,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ