বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

আইভিএফ নিয়ে ভুল ভাঙান

আইভিএফ-এর সাহায্যে সন্তান নেওয়ার সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। ফলে আগের মতো ‘সামাজিক কলঙ্কের’ ভয় মানুষ সেভাবে পান না। তবে একেবারেই কি সব সংশয় দূর হয়েছে? না তেমনটি অবশ্যই নয়। শহুরে দম্পতির মধ্যে আইভিএফ নিয়ে দ্বিধা বরং একটু কম। তবে কলকাতার বাইরের জেলা বা গ্রাম থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মনে সংশয় কিছুটা হলেও রয়ে গিয়েছে। তাঁরা ভাবেন, আত্মীয়স্বজন কী বলবেন! স্বাভাবিকভাবে সন্তান না হওয়া বোধহয় খুব লজ্জার, সক্ষমতার অভাব বোঝায়। আইভিএফ করিয়ে সন্তান নিলে যদি সকলে উপহাস করে ইত্যাদি নানা ভাবনা দানা বাঁধে দম্পতির মনে! কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাসও জড়িয়ে থাকে। অনেকে আইভিএফ করিয়ে সন্তান নেওয়ার পর বিষয়টি লুকোতেও চান! আবার এমনও দম্পতি দেখেছি, যাঁরা আইভিএফ-এর পরে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে চিকিৎসকের খোলাখুলি প্রচুর প্রশংসা করেন। 
আসুন আজ আইভিএফ নিয়ে মনের মধ্যে ওঠা কয়েকটি প্রশ্নের উল্লেখ করে, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। কাটাব দম্পতির দ্বিধা, সংশয়। আইভিএফ নিয়ে দ্বিধা তিন রকমের—
১. প্রচুর প্রশ্ন, ২. ডোনারের সাহায্য নেব কি নেব না, ৩. সারোগেসি
১. আইভিএফ-এর  পুরো কথা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন। দেহের বাইরে নিষেক। এক্ষেত্রে প্রথমে একটি দম্পতির পুরুষ সঙ্গীর স্পার্ম ও মহিলা সঙ্গীর কাছ থেকে ওভাম সংগ্রহ করা হয়। এরপর ল্যাবরেটরিতে স্পার্ম ও ওভামের সাহায্যে তৈরি হয় ভ্রূণ। ওই ভ্রূণকে স্থাপন করা হয় মহিলা সঙ্গীর ইউটেরাসে। এই হল চিকিৎসা। অথচ এ নিয়েই সন্তানহীন দম্পতিরা নানান দ্বন্দ্বে ভুগছেন। 
 দ্বিধা ১—আমরা পারলাম না, ওরা পারল: দম্পতিরা যখন অন্যান্য দম্পতিকে স্বাভাবিক পথে সন্তানধারণ করতে দেখেন, তাঁদের মনে হয় বাকিদের কোনও চিকিৎসা ছাড়াই সন্তান আসছে, আমাদের কেন হচ্ছে না! প্রেগন্যান্সিতে যে সমস্যা আসতে পারে এবং তার সঠিক চিকিৎসা দরকার, তা সহজভাবে মেনে নিতেই তাঁদের সমস্যা হয়। বহু সন্তানহীন দম্পতি মনে করেন, তাঁরা আসলে শারীরিকভাবে অক্ষম। ত্রুটি রয়েছে। তাই সন্তান আসছে না। তাঁরা ক্রমাগত ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকেন। ইনফার্টিলিটিকে অসুখ ভাবতেই অস্বীকার করেন। অথচ আশ্চর্য ব্যাপার হল, সুগার, প্রেশারের মতো সমস্যা থাকলে কিন্তু রোগী এভাবে ভাবেন না। বরং অসুখ সামলাতে ওষুধ খান। তখন কিন্তু মানসিক দ্বিধাও কাজ করে না। শুধু সন্তানহীনতার সমস্যা তৈরি হলেই নানা প্রশ্ন উঠে আসে। কপালকে দোষারোপ করা শুরু হয়। এক্ষেত্রেই কাউন্সেলিং বড় ভূমিকা নেয়। দম্পতির কাউন্সেলিং করে এই ডিনায়াল মোড বা অস্বীকারের মনোভাবটি কাটানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁকে বোঝানো হয় ইনফার্টিলিটি সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরলের মতোই অসুখ এবং তার সঠিক চিকিৎসা আছে।
 দ্বিধা ২—ডোনারের সাহায্য নেব কি নেব না: আরও বড় সমস্যা উপস্থিত হয় ডোনারের স্পার্ম বা এগ ব্যবহারের দরকার পড়লে। কোনও কোনও দম্পতির পুরুষ সঙ্গীর স্পার্মজনিত বা মহিলা সঙ্গীর ওভামঘটিত সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে ডোনার এগ বা স্পার্ম নিয়ে আইভিএফ করার দরকার পড়ে। মুশকিল হল অনেক দম্পতিই প্রথম প্রথম বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না। কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, স্বামীর স্পার্ম রয়েছে। স্ত্রী’র ওভাম অনুপস্থিত বা গুণগত মান ভালো নয়। সেক্ষেত্রে স্বামী দুষতে থাকেন স্ত্রীকে। উল্টো ঘটনাও দেখা যায়। অথচ তাঁরা বুঝতে চান না, এও অসুখ বই কিছু নয়। 
মহিলাদের ওভাম তৈরির ক্ষমতা কমা বা গুণগত মান খারাপ হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। বয়স খুব বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে এমন সমস্যা আসতে পারে। জিনগত কারণেও হতে পারে। জটিল ধরনের এন্ডোমেট্রিওসিসের ফলেও দেখা দিতে পারে জটিলতা। আবার কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি নেওয়ার কারণেও ওভামের গুণগত মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন ক্ষেত্রে ভ্রূণ তৈরির জন্য ডোনারের এগ-এর সাহায্য নেওয়া যায়। 
পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স কিছুটা হলেও দায়ী থাকে। এছাড়া কোনও ওষুধ সেবন, অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, জীবনযাত্রার প্রভাবেও স্পার্ম উৎপাদন বন্ধ হওয়া কিংবা স্পার্মের গুণগত মান খারাপ হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে ডোনারের স্পার্মের সাহায্য নিতে হতেই পারে। অথচ এই ব্যাপারেই দম্পতিরা মারাত্মক দ্বিধায় ভুগতে থাকেন।
অথচ কী আশ্চর্য, কারও লিভার বা কিডনি খারাপ হলে তাকে লিভার বা কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে হয়। হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টও হয়। সেই সময় মানুষ কিন্তু এ‌ইরকম মানসিক টানাপোড়েনে ভোগেন না। সুতরাং ডোনারের কাছে স্পার্ম বা এগ নিতেও সংশয় থাকা উচিত নয়। উল্লেখ্য, রেজিস্টার্ড স্পার্ম ব্যাঙ্ক কিংবা ওভাম ব্যাঙ্ক থেকেই স্বাস্থ্যকর স্পার্ম বা এগ নেওয়া হয়। দাতা, গ্রহীতার পরিচয় গোপন থাকে। 
 দ্বিধা ৩—সারোগেসি নিয়ে নানা প্রশ্ন: এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে কিছু দম্পতির সংশয় থেকেই যায়। সাধারণত কোনও মহিলার ইউটেরাসে বড় সমস্যা থাকলে বা কোনও অসুখের কারণে গর্ভে সন্তানধারণ করা অসম্ভব হলে সারোগেসির সাহায্য নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে দম্পতির স্পার্ম ও এগ ব্যবহার করে ভ্রূণ তৈরি করা হয় আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে। এরপর ওই ভ্রূণ সারোগেট মাদারের ইউটেরাসে প্রতিস্থাপন করা হয়। অর্থাৎ সারোগেট মাদার শুধু গর্ভে ওই ভ্রূণকে বড় হতে সাহায্য করেন। সারোগেসি নিয়ে কিছু নিয়ম জারি হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে এখন সারোগেসির সাহায্য নেওয়া যায় না। আইন অনুসারে এখন দম্পতি ও সারোগেট মাদারের মধ্যে কোনও আর্থিক লেনদেন হবে না। সন্তানহীন দম্পতির জন্য গর্ভে সন্তানধারণে ইচ্ছুক কোনও আত্মীয়, বন্ধুই হতে পারবেন সারোগেট মাদার। তাও আর্থিক কোনও লেনদেন ছাড়াই।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

11th     August,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ