বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

বাড়িতেই ভেষজ বাগান
কী কী গাছ, কেন রাখবেন?

বাড়িতেই ভেষজ গাছগাছারির বাগান! হ্যাঁ, আপনিও করতে পারেন ছাদ, বারান্দা বা ব্যালকনিতে একফালি ছোট জায়গা থাকলেই। কীভাবে? জানাচ্ছেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ।

খুব অনায়াসে বাড়িতেই গড়ে তুলতে পারেন ভেষজ বাগান, যা আপনার কাছে হয়ে উঠতে পারে সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। এছাড়া ভেষজ বাগানের প্রয়োজনীয়তাও কিন্তু বহুমুখী। 
 কংক্রিটের গ্রাসে দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে একটু মুক্ত বাতাস, চোখ জুড়ানো সবুজ পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে ভেষজ বা আয়ুর্বেদিক বাগান।
 অন্যদিকে হঠাৎ প্রাথমিক ঘরোয়া চিকিৎসা থেকে শুরু করে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, পাখি, প্রজাপতি, মৌমাছি ইত্যাদি নিয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে ভেষজ বাগান সর্বদাই অনবদ্য।
ভেষজ নির্বাচন
ভেষজ বাগান তৈরির ক্ষেত্রে ভেষজ নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেমন—
  সর্বাগ্রে খেয়াল রাখা উচিত যেসব ভেষজ লাগানো হচ্ছে, সেগুলির জন্য কতটা তাপমাত্রা, আলো, জল এবং কতটা জায়গার প্রয়োজন পড়ে।
 দ্বিতীয়ত, ভেষজ সমূহের দ্রব্যগুণ সম্বন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন। ফলে দরকার পড়লেই ভেষজটির সদ্ব্যবহার করা যায়।
 তৃতীয়ত, গাছটি লতানো হলে প্রয়োজনীয় অবলম্বন রাখারও দরকার।
জৈবিক পদ্ধতিতে ভেষজের পরিচর্চা
 অবাঞ্ছিত পোকামাকড়ের হাত থেকে ভেষজ গাছকে বাঁচাতে জৈব পদ্ধতিতে পরিচর্চাই শ্রেষ্ঠ।
 সময়মতো ডালপালা ছাঁটা, নিয়ম করে  প্রয়োজন অনুপাতে জৈব সারের প্রয়োগ এবং পোকা প্রতিরোধে নিম তেলের স্প্রে ও মাটি উর্বর রাখতে সর্ষের খোল ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেষজ বাগানের গুরুত্ব
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা: ১. আয়ুর্বেদ মতে এটি তিক্তরসপ্রধান স্নিগ্ধ, পিচ্ছিল গুণযুক্ত শীতলকারক ভেষজ, যার অজস্র ঔষধিগুণ রয়েছে। যেমন হঠাৎ কাটা-ছেঁড়া, পুড়ে যাওয়া, ফোঁড়া, ফুসকুড়ি থেকে শুরু করে মুখের অবাঞ্ছিত কালো ছোপ তুলতে, ত্বকের অ্যালার্জিতে সরাসরি ঘৃতকুমারীর পাতার রস ব্যবহার করা যায়। ২. রসায়ন গুণের জন্য ঘৃতকুমারী বলকারক ও স্ফূর্তিদায়ক হিসেবে বেশ পরিচিত।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্য, যকৃতের রোগ, চোখের সমস্যা, বাতের ব্যথায় ও রক্তপিত্ত রোগে কার্যকরী।
কালমেঘ: ১. অতি পরিচিত সহজলভ্য ঔষধি কালমেঘ। কালমেঘ তিক্তরস যুক্ত, লঘু ও রুক্ষ গুণযুক্ত ভেষজ যা কৃমি, ত্বকের রোগে ও জ্বরে হিতকারী। ২. সাধারণ জ্বরে কালমেঘ স্বরস ২০-৩০ এমএল সমপরিমাণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুইবার সেব্য। যেখানে ত্বকের অ্যালার্জি বা সাধারণ ক্ষতের সমস্যা রয়েছে, সেখানে কালমেঘ পাতা বেঁটে প্রলেপ দিলে অভূতপূর্ব ফল মেলে।
ব্রাহ্মী: ১. মেধা, আয়ু, বলবৃদ্ধি করে ব্রাহ্মী। ২. বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি, স্মৃতিনাশ, রক্তাল্পতা, অনিদ্রা, হার্টের সমস্যায, প্রমেহ রোগ ও ত্বকজ বিকারে ভেষজটি কার্যকর। ৩. ব্রাহ্মী স্বরস ২ চামচ করে দিনে দু’বার খাবেন। আর ব্রাহ্মী চূর্ণ সেবন করবেন ২-৩ গ্রাম পরিমাণ উষ্ণ দুধের সঙ্গে।
তুলসী: ১. কটু-তিক্ত রস যুক্ত কফ ও বাত নাশক ভেষজ তুলসী যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিম্যালেরিয়াল, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি পাইরেটিক অর্থাৎ জ্বর নাশকারী। ২. শ্বাসকষ্ট ও কাশির সমস্যায় মধুর সঙ্গে তুলসী পাতার রসের ব্যবহার উপকরী। এছাড়া আদা-তুলসী চায়ের উপকার সর্বজনবিদিত।
গুলঞ্চ: ১. গ্রাম বাংলায় গুড়ুচি, অমৃতা, ছিন্না, ভিষকপ্রিয়া নামে সুপরিচিত। ২. ভেষজটি তিক্ত কষায় রসযুক্ত, রসায়নগুণ সমৃদ্ধ, বল বৃদ্ধিকর, মেধ্য, ত্রিদোষ শামক ভেষজ। 
৩. ভেষজ গুণে এটি অ্যান্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক। ৪. গুলঞ্চ স্বরস ২০-৩০ মিলি সমপরিমাণ জল মিশিয়ে সেব্য।
আবার গুলঞ্চ চূর্ণ ১ গ্রাম পরিমাণ জলের সঙ্গে সেবনীয়। নীরোগ থাকতে গুলঞ্চ ভেজানো জলও পান করা যেতে পারে। ১/২ কাপ পরিমাণ গুলঞ্চ চূর্ণ সমপরিমাণ জলের সাথে খালি পেটে সেব্য।
গাঁদাল বা প্রসারণী: 
১. গ্রামবাংলার গাঁদাল বা গন্ধভাদুলে তার আয়ুর্বেদিক গুণের পাশাপাশি বিকট দুর্গন্ধের জন্যও বেশ পরিচিত। ২. ভেষজটির প্রসারণী নামের অর্থ হল সঙ্কুচিত বা অবরোধ নিবারক। ৩. বাতের সমস্যায় যেখানে হাতে বা পায়ের শিরায় টান ধরার সমস্যা হয় বা যাঁদের মূলত পেটের হজম সম্বন্ধীয় গন্ডগোল রয়েছে, সঙ্গে অর্শ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত, তাঁদের ক্ষেত্রে গাঁদাল পাতা ভাজা, গাঁদাল পাতার ঝোল বা বড়া বেশ ফলপ্রসূ।
বাসক: ১. একটু বড় টবে বা ফাঁকা জায়গায় একটি বাসক গাছ রাখা যেতেই পারে। বাসক অতি পরিচিত এক বনৌষধি। ২. গ্রামবাংলায় সর্দি, কাশি ও জ্বরের চিকিৎসায় বাসক ক্বাথ খুব জনপ্রিয়। ৩. আয়ুর্বেদ মতে বাসক প্রধানত রক্তপিত্ত চিকিৎসায় শ্রেষ্ঠ ভেষজ। ৪. ক্ষয় রোগ, দীর্ঘদিনের কাশ ও হুপিং কাশির বেগ প্রশমনে বাসক ক্বাথ অব্যর্থ।
ভৃঙ্গরাজ: ১. চুলের অন্যতম রসায়ন হল ভৃঙ্গরাজ। ভৃঙ্গরাজ সমৃদ্ধ তেল  চুলের সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি মাথা ঠান্ডা রাখতে অনবদ্য।
পুদিনা: ১. ছোট ছোট টবে অনায়াসেই এটি রাখা যায়। বেশ দৃষ্টিনন্দন। ২. রুচিকারক হিসেবে ব্যবহার করা যায় ভেষজ। পুদিনার চাটনি, শরবত বেশ সুস্বাদু ও হজমে সহায়ক। ৩. আধুনিক গবেষণায় পুদিনার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিডায়াবেটিক, ক্ষত রোপক ইত্যাদি গুণ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। 
এছাড়াও ভেষজ বাগানে পাথরকুচি, অপরাজিতা, জবা, নিশিন্দা, লেমনগ্রাস, থানকুনি ইত্যাদি ভেষজের  গুরুত্বও অপরিসীম।

4th     August,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ