বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ

পরামর্শে সল্টলেকের মণিপাল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পল্লব চট্টোপাধ্যায়। 

‘হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ’ আসলে এক ধরনের ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ। এই অসুখ বাচ্চাদেরই হয়। সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছর বয়সের নীচের শিশুর এই ধরনের ভাইরাল ইনফেকশন হয়। অবশ্য এই বয়সের চাইতে বেশি বয়সের বাচ্চাদের যে একেবারে হয় না, এমন নয়। তবে বয়ঃসন্ধির বাচ্চারা এই অসুখে কমই ভোগে।
কোন সময়ে হয়?
বিদেশে বসন্ত এবং শরৎ ঋতুতে অসুখটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আমাদের দেশে আবার বর্ষাকালে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। পরিবেশের উষ্ণতা এবং জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিই এই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তের অনুঘটক।
উপসর্গ
১. জ্বর দিয়ে অসুখ শুরু হয়। খাবার খেতে অনীহা দেখা যায়। 
২. এরপর হাতে, হাতের তালুতে, আঙুলের মাঝখানে, পা ও পায়ের তালুতে, গোড়ালিতে, থাইয়ে, মুখগহ্বরে, বুকে এবং বাটকস-এ র‌্যাশ বেরয়। 
৩. জিভ ও মুখেও র‌্যাশ বেরতে পারে। ফলে বাচ্চাদের শক্ত খাবার খেতে খুব কষ্ট হয়। জল পানও করতে চায় না। 
কোন ভাইরাস দায়ী?
এন্টেরোভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত ভাইরাসের সংক্রমণে এই অসুখ হতে পারে। তবে হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ-এর পিছনে দায়ী দু’টি উল্লেখযোগ্য ভাইরাস হল ‘কক্সাকিভাইরাস এ৬’ এবং ‘এন্টেরোভাইরাস এ৭১’। মূলত এই দু’টি ভাইরাসের সংক্রমণই বেশি ঝামেলার সৃষ্টি করে। রোগের জটিলতা বেশি হতে পারে ‘এন্টেরোভাইরাস এ৭১’-এর সংক্রমণে।
অসুখ কীভাবে ছড়ায়?
সাধারণত স্কুল থেকেই সংক্রমণ ছড়ায়। বাচ্চার ত্বকে যে ফোসকার মতো র‌্যাশ তৈরি হয়, তা ফ্লুইডে ভর্তি থাকে। ওই তরল বা ফ্লুইডের সংস্পর্শে এলে অন্য বাচ্চার দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া আক্রান্তর থুতু থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বেরনো ড্রপলেট থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
চিকিৎসা
• অসুখটি নিজের থেকেই সেরে যায়। ৫-৭ দিন পর্যন্ত উপসর্গ থাকে। তারপর ধীরে ধীরে সমস্যা কমতে থাকে। তবে কক্সাকিভাইরাসের সংক্রমণ হলে, উপসর্গ ১২-১৩ দিন অবধি স্থায়ী হতে পারে। এরপরে খোসার মতো হাতের ও পায়ের চামড়া উঠতে পারে। শারীরিক লক্ষণ অনুসারে ওষুধ দেওয়া হয় বাচ্চাকে। জ্বর ও ব্যথার উপসর্গ থাকলে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। মুখে র‌্যাশ ও ঘা হলে ডাইফেনহাইড্রামিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া লিগনোকেন জেলিও ব্যবহার করা যায়। র‌্যাশে চুলকালে ক্যালামাইন জাতীয় লোশন লাগানো যায়।
জটিলতা হয়?
• খাবার খেতে না পারার জন্য বাচ্চা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। শিশু ঝিমিয়ে পড়তে থাকে। • ডিহাইড্রেশন দেখা যেতে পারে। • বাচ্চা একেবারে নির্জীব ও অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন চালানোর দরকার পড়তে পারে।
• ‘এন্টেরোভাইরাস এ৭১’ ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাচ্চার মেনিনজাইটিস, এনকেফেলাইটিস, প্যারালিসিস, ফুসফুসে জল জমা, হার্ট ফেলিওরের মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। বিরল ক্ষেত্রেই এমন হয়। ১০০টি বাচ্চার মধ্যে বড়জোর একটি বাচ্চার এমন শারীরিক জটিলতা আসতে পারে। 
অভিভাবকের করণীয়
রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। ফলে অসুখ নির্ণয় হলে আগামী ১০ দিনের জন্য বাচ্চার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। বাচ্চা যাতে অন্য শিশুর সংস্পর্শে না আসে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ফলে অসুখটি ছড়িয়ে পড়বে না। খুব ভালো হয় বাচ্চার জ্বর ও খাবার খেতে অনীহা দেখলেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে পারলে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য বাচ্চার মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া বাচ্চার ভালো করে হাত ধোওয়ার অভ্যেস বজায় রাখতে হবে।
ডায়েট
শক্ত ও তরল খাবার খেতে কষ্ট হয় শিশুর। তাই চেষ্টা করুন বাচ্চাকে অর্ধতরল খাদ্য খাওয়াতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মুখে একটু স্বাদ আনতে গলা আইসক্রিম, ডালিয়ার খিচুড়ি, সুজির পায়েস খাওয়াতে পারেন। • বাচ্চার শরীরে ফ্লুইডের জোগান বজায় রাখতে হবে।
ভ্যাকসিন
ভ্যাকসিন নেই।
রোগ প্রতিরোধ
বাচ্চাকে বারবার হাত ধোওয়ার অভ্যেস করালে রোগ প্রতিরোধে ভালো ফল মিলতে পারে। ক্রেশ ও নার্সারি স্কুলগুলিতে ‘হাতের স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলার উপর জোর দিতে হবে।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক 

28th     July,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ