বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ায় হোমিওপ্যাথি

বর্ষায় মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। হোমিওপ্যাথিতে সমাধান জানালেন ডাঃ নিমাই বসু।

• ভরা বর্ষায় করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুও বাড়ছে। ডেঙ্গু জ্বর আর পাঁচটা জ্বরের চেয়ে আলাদা কোথায়?
••  মরশুম বদলের এই সময়টা অনেকেরই ডেঙ্গু হয়। এই জ্বরকে বলা হয় ‘হাড় ভাঙা জ্বর’। অর্থাৎ এই রোগে প্রবল জ্বরের সঙ্গে শরীরের গাঁটে গাঁটে ও বিভিন্ন হাড়ে ব্যথা হয়। এই ব্যথা এতটাই তীব্র, মনে হয় যেন হাড় ভেঙেছে। ম্যালেরিয়ার মতো কাঁপুনি দিয়েও জ্বর আসে কারও কারও। দুই-তিনদিনের বেশি জ্বর থাকলে, প্যারাসিটামল খেয়েও জ্বর না কমলে অবশ্যই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে হবে। 
• কী পরীক্ষা করাতে হয়?
•• ডেঙ্গু হয়েছে কি না বুঝতে অ্যালাইজা টেস্ট করতে হবে। এতে আইজিজি এবং আইজিএম অ্যান্টিবডি ও এনএস১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত জ্বর আসার ৩ দিন পর এই পরীক্ষা করলে নির্ভুল ফল মেলে।
• এই রোগের উপসর্গ কী কী?
•• মূলত এই রোগে জ্বরের মাত্রা প্রবল থাকে। হঠাৎ হঠাৎ জ্বর বাড়ে। ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর উঠতে পারে। সঙ্গে সারা গা, হাত, পায়ে যন্ত্রণা হয়। অসহনীয় মাথাব্যথা হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি হতে পারে। বমি বমি ভাব থাকে। ক্লান্তি, চোখের পিছনের দিকে ব্যথা এগুলোও ডেঙ্গুর খুব সাধারণ লক্ষণ। রোগী খুবই অস্থির হয়ে পড়েন। কারও কারও ক্ষেত্রে মাড়ি থেকে ও মল-মূত্রের সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। এই রোগের অন্যতম একটি সমস্যা হল, দেহে প্লেটলেটের সংখ্যা হু হু করে নামতে থাকে। নিউরোট্রান্সমিটারের সমস্যা দেখা দেওয়ার ভয়ও থেকে যায়। ফলে সরাসরি মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার।
• ধরা যাক, উপসর্গও কিছু দেখা দিল, পরীক্ষার ফল পজিটিভ এল। ডেঙ্গু হল রোগীর। এবার কী করণীয়?
••  যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ শুরু করতে হবে। হোমিওপ্যাথিতে রোগ নয়, রোগী দেখে চিকিৎসা করা হয়। রোগীর জীবনযাত্রা, উপসর্গ ও রোগের ধরনের উপর ওষুধও বদলায়। সাধারণত, ব্রায়োনিয়া ৬, ব্রায়োনিয়া ৩০, অ্যাকোনাইট ১ এক্স, রাস টাক্স ৬, রাস টাক্স ৩০, ডালকামারা ৬ এই ওষুধগুলি ডেঙ্গুতে খুব ভালো কাজ করে। বিশেষ করে অ্যাকোনাইট ১ এক্স। সাধারণত দিনে দু’বার দু’ফোঁটা করে এই ওষুধ খেতে হয়। শিশু হলে গ্লোবিউল দেওয়া হয়। 
তবে হ্যঁা, একটা কথা মনে রাখবেন— কোন রোগীর জন্য কোন ওষুধ কাজ করবে, এটা রোগীকে দেখার পর চিকিৎসকই একমাত্র বলতে পারবেন। কিছু মাদার টিংচারও ডেঙ্গুতে ভালো কাজ করে। যেমন, চেলিটোনিয়াম, ক্যারিকা পাপাইয়া ইত্যাদি।
• ওষুধের পাশাপাশি কী ধরনের যত্ন প্রয়োজন?
•• রোগীকে বদ্ধ ঘরে রাখা যাবে না। দিনের বেলাতেও মশারির ভিতর থাকবেন। হালকা সুতির জামা-কাপড় পরবেন। খাওয়াদাওয়াও হবে একেবারে হালকা। লিক্যুইড ডায়েট বেশি উপকারী। এই সময় যকৃৎ একেবারে ভালো থাকে না। তাই সহজপাচ্য খাদ্য খেতে হবে। আর বিশ্রাম নিতেই হবে। স্নান করতে হবে ভালো করে।
• আর ম্যালেরিয়া?  
•• ম্যালেরিয়ার জ্বর একটু অন্যরকম। এ জ্বর তেড়ে আসে আবার নেমেও যায়। আবার কিছুক্ষণের মধ্যে তীব্র হয়ে ফিরে আসে। 
জ্বর যখন ওঠে তখন ১০৪-১০৬ ডিগ্রি অবধি ওঠাও অসম্ভব নয়। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। ছাড়েও কাঁপুনি দিয়েই।
• শুধুই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, নাকি অন্য আরও উপসর্গ আছে?
•• কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা ছাড়াও চোখ লাল হয়ে যায়। বমি বমি ভাব থাকে। কারও ক্ষেত্রে বমি হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।  ম্যালেরিয়া হলে বেশিরভাগ রোগীরই জ্বরের সঙ্গে ক্ষুধামান্দ্য, পেটের সমস্যা, কারও কারও কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দেয়। 
রক্তে শ্বেতকণিকা ও মনোসাইট বেড়ে যায়। প্লীহা বাড়ে এই রোগে। 
• কী পরীক্ষা করতে হয়?
 ম্যালেরিয়ার জন্য নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা আছে। অ্যান্টিজেন ভিত্তিক র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। ম্যালেরিয়ার জ্বরে আছে তিনটি পর্যায়। গা গরম হওয়া, কাঁপুনি  ও ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া। রক্তের নমুনা নেওয়া উচিত জ্বর ছাড়ার সময়। 
• হোমিওপ্যাথিতে এই রোগের চিকিৎসা কী?
•• এখানে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখা উচিত, এই অসুখে অনেকে যথেচ্ছ কুইনাইন খেতে শুরু করেন। কেউ কেউ ম্যালেরিয়া কোথাও হচ্ছে শুনলেই কুইনাইন কিনে খাওয়া শুরু করেন। 
চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে কুইনাইন খেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। রোগ হলে সাধারণত নির্দিষ্ট ডোজে ক্যারিকা পাপাইয়ার মাদার টিংচার এই অসুখে ভালো কাজ করে। হোমিওপ্যাথিতে যেসব ওষুধ ডেঙ্গুতে ভালো কাজ দেয়, তাদেরই কিছু কিছু ওষুধ ম্যালেরিয়াতেও কাজ দেয়। 
• এ তো গেল, রোগ হওয়ার পরের কথা।  রোগ আটকাতে কী করব? 
•• ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কথা তো আগেই বলেছি। মশা নিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহারের কথাও বলেছি। তবে বাজারচলতি নয়। প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে এই ক্রিম কিনবেন। ম্যালেরিয়া আটকাতে মশারি খাটাতেই হবে। নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে। জল জমতে দেওয়া চলবে না। ডেঙ্গু এডিস ইজিপ্টাই গোত্রের স্ত্রী মশাদের দ্বারা ছড়ায়। ম্যালেরিয়া হয় স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে। এই রোগ হওয়ার আগে তা রুখে দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় মশার বংশবিস্তার রোধ করা। ডেঙ্গুর মশা দিনের বেলা কামড়ায়। 
বাড়ির চারপাশে জল জমতে না দেওয়া, আশপাশ পরিষ্কার রাখা, কোথাও জলা জঙ্গল বা ঝোপ তৈরি হতে না দেওয়া, নিয়মিত ব্লিচিং, ক্লোরিন দিয়ে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা, মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো— এগুলো সমস্ত নাগরিকেরও কর্তব্য। সরকার ও পুরসভা এই বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেয় ঠিকই, কিন্তু নিজের সুস্থতা নিজের কাছে। তাই সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদেরও উচিত এই কাজে শামিল হওয়া।
এছাড়া বর্ষার শুরু থেকেই বাড়ির ছোট-বড় সকলেই যদি ব্রায়োনিয়া ৬, ব্রায়োনিয়া ৩০, বেলেডোনা ৬, ডালকামারা ৬ এগুলোর যে কোনও একটি দু’বেলা খাওয়া যায়, তাহলে এই রোগ থেকে অনেকটা দূরে থাকা যায়। আক্রান্ত হলেও রোগের প্রকোপ মারাত্মক হয় না। তবে এর মধ্যে কোন ব্যক্তির কী ওষুধ প্রয়োজন, তা চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন।
সাক্ষাৎকার: মনীষা মুখোপাধ্যায়

14th     July,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ