বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

মাঙ্কিপক্স কী?
সাবধান থাকবেন কীভাবে?

পরামর্শে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট ফিজিশিয়ান  ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল।

মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস একটি ডিএনএ ভাইরাস। অসুখটি জুনোটিক ডিজিজ। অর্থাৎ প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রামিত হয় এই ভাইরাস।

কেন এই রোগের নাম মাঙ্কিপক্স?
বঁাদরদের মধ্যে এই ধরনের অসুখ প্রথম দেখা গিয়েছিল। সেখান থেকেই মাঙ্কিপক্স নামকরণ হয়। রোগটির প্রকৃতি অনেকটাই স্মল পক্সের মতো। ১৯৭০ সালে কঙ্গোয় অসুখটি প্রথম মানুষের মধ্যে ধরা পড়ে। রোগলক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, গায়ে র‌্যাশ ইত্যাদি। ইঁদুর, কাঠবেড়ালি, বাদুড়, বাঁদড়ের মতো করাল দাঁতবিশিষ্ট প্রাণী হল এই ভাইরাসের রিজার্ভার বা পোষক। এই ধরনের প্রাণী যদি কোনওভাবে মানুষের গায়ে আঁচড়ে বা কামড়ে দেয়, তাহলে মানবদেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া এই ধরনের প্রাণীর মাংস ভালোভাবে রান্না না করে খেলেও হতে পারে মাঙ্কিপক্স।

মানুষ থেকে মানুষে রোগটি ছড়ায় কীভাবে?
মানুষ থেকে মানুষে রোগটি ছড়ায় ড্রপলেটের মাধ্যমে। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের পর ইনকিউবেশন পিরিয়ড হল ৬ থেকে ১৪ দিন। অর্থাৎ কোনও সুস্থ ব্যক্তির দেহে ভাইরাস প্রবেশের ৬-১৪ দিনের মধ্যে ভাইরাসটি বংশবৃদ্ধি করে ও শরীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।

লক্ষণ কী কী? স্মলপক্স ও মাঙ্কি পক্সের মিল-অমিল যদি বলেন। 
১. জ্বর আসে। তার ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ত্বকে র‌্যাশ বের হয়। মারাত্মক শারীরিক দৌর্বল্য, মাথা ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা এবং লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া হল মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ। সাধারণ পক্সের র‌্যাশে ফ্লুইড থাকে। মাঙ্কিপক্সের র‌্যাশে ফ্লুইড থাকতে পারে, আবার র‌্যাশ কঠিন প্রকৃতিরও হতে পারে। ২. র‌্যাশে ব্যথা থাকতে পারে আবার চুলকানিও হতে পারে। ৩. ত্বকের তল থেকে উঁচু নয়, এমন ম্যাকুলা র‌্যাশ থাকতে পারে আবার, ত্বকের তল থেকে উঁচু শক্ত প্রকৃতির র‌্যাশও থাকে। ৪. এই রোগ চেনার অন্যতম উপায় হল র‌্যাশের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা। স্মল পক্সে সারা দেহে র‌্যাশ বের হয় ও তা তরলপূর্ণ হতে পারে। মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে সব ধরনের র‌্যাশই চোখে পড়ে। অর্থাৎ প্রথমে ত্বকের তলের থেকে উঁচু নয়, এমন হালকা লালবর্ণের র‌্যাশ বের হয়। এরপর ত্বকের তল থেকে উঁচু র‌্যাশ বেরতে পারে। র‌্যাশ ফোস্কার আকার নিতে পারে। সেই ফোস্কার মতো র‌্যাশ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকতে পারে। হাতের তালু ও পায়ের পাতায় বেশি র‌্যাশ বের হয়। ৫. মাঙ্কিপক্সে উপসর্গ ২-৪ সপ্তাহ অবধি থাকতে পারে। সাধারণ পক্সে কিন্তু উপসর্গ এত বেশিদিন ধরে স্থায়ী হয় না। ৬. এই গোটা সময়টা ধরে সংক্রামিত ব্যক্তি রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখেন। তবে ধীরে ধীরে র‌্যাশ শুকিয়ে যায়। র‌্যাশের উপরিভাগ ত্বক থেকে খসে পড়ে। তবে মাঙ্কিপক্সের মতো লক্ষণ কিন্তু চিকেন পক্স ও হারপিসেও হয়। তাই একজন চিকিৎসককে এই রোগগুলির কথাও স্মরণে রেখে রোগনির্ণয় করতে হবে।

সংক্রমণ হয়েছে, সন্দেহ করা হবে কীভাবে?
গত ২১ দিনের মধ্যে কোনও ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকা থেকে ফিরে এলে ও তাঁর শরীরে মাঙ্কিপক্সের মতো উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। প্রধানত পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। এখন ইউরোপের অনেকগুলি দেশে অসুখটি ছড়িয়ে পড়েছে।

রোগ নির্ণয় কীভাবে?
‘পলিমারেজ চেন রিয়্যাকশন’ (পিসিআর) করে রোগীর দেহ থেকে পাওয়া ভাইরাসটি অর্থোপক্স ভাইরাস পরিবারের কি না, তা দেখা হয়। উল্লেখ্য, এই একই পরিবারের ভাইরাস হল স্মলপক্স। রিপোর্ট পজিটিভ এলে ভাইরাসটি মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস কি না তা নিশ্চিত করতে রিয়েল টাইম পিসিআর করা হয়।

চিকিৎসা কীভাবে?
অসুখটি ‘সেলফ লিমিটিং।’ নিজের থেকেই সারে। ওষুধ লাগে না। তবে বাচ্চাদের মাঙ্কিপক্স হলে অবহেলা নয়। বিশেষ করে অপুষ্টি ও অন্যান্য সমস্যায় ভুগলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সতর্ক হতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সুগার, প্রেশার, সিওপিডি, হার্টের অসুখের মতো কো-মর্বিডিটি থাকলে। সেক্ষেত্রে প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে ৫-৬ শতাংশ হতে পারে। ৩-৬ শতাংশ ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স থেকে নিউমোনিয়া, সেপসিস, এনকেফেলাইটিসের মতো অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণভাবে চিকিৎসা করা হয় উপসর্গ অনুসারে। অর্থাৎ জ্বর ও গা হাত-পায়ে ব্যথা হলে প্যারাসিটামল, লিভোসেট্রিজেন দেওয়া হয়। সঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে বলা হয়। সাধারণত তাতেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আগে মহামারী হয়নি এমন দেশেও মাঙ্কিপক্স ছড়াচ্ছে। সেক্ষেত্রে কী করণীয়? রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে কী করা যায়?
যে দেশে মাঙ্কিপক্স ধরা পড়েছে, সেই দেশ থেকে ফেরার পর অন্তত দুই সপ্তাহ ওই ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এছাড়া আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় রোগ ধরা পড়লে, রোগীকে আইসোলেশনে রাখারও দরকার। রোগী এবং পরিচর্যাকারীকে ত্রিস্তরীয় বা এন-৯৫ মাস্ক পরতে হবে।

স্মলপক্সের ভ্যাকসিন কি মাঙ্কিপক্স আটকায়? জার্মানিতে সংক্রমণ ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিদের স্মলপক্সের টিকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 
মাঙ্কিপক্সের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জুনোটিক ডিজিজ-বিভাগের মহামারী বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখভ জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে স্মলপক্স ভ্যাকসিন প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। তবে ভেবেচিন্তে তবেই নাগরিকদের এই টিকা দিতে হবে। কারণ, ভ্যাকসিন সরবরাহ যথেষ্ট কম। সকলের নেওয়ার দরকারও নেই।

কাদের নেওয়া উচিত?
সংক্রামিত হওয়ার চারদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিলে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া সংক্রামিত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিলে যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গ অনেকাংশে কমে।

ভারত সরকার মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে কী ভাবছে?
ভারতে মাঙ্কিপক্সের একটি ঘটনাও ধরা পড়েনি। সরকার এখনও ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে বলে জানা নেই। তবে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা উচিত। পজিটিভ হলে আইসোলেশনে রাখতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজারের ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে। 
সাক্ষাৎকার: সুপ্রিয় নায়েক 
 

16th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ