বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

বিপদ যখন স্ক্রাব টাইফাস

রোগের উপসর্গ, চিকিৎসা ও সতর্কতা নিয়ে পরামর্শ দিলেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও কল্যাণী এইমস-এর মাইক্রোবায়োলজির প্রধান ডাঃ সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়।

বীভৎস গরম। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বর-সর্দি-কাশি। ধুম জ্বর, গা-হাত পা ব্যথা, অথচ কোনও টেস্টেই ধরা পড়ছে না কিছু! বেশ কয়েকটি পরিবারে এমন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। করোনাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে ছড়াচ্ছে স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে উদ্বেগ।

কেন হয় এই অসুখ?
গ্রিক শব্দ ‘টাইফাস’-এর অর্থ ‘অস্পষ্ট’। উকুনগোত্রীয় পরজীবী ট্রম্বিকিউলিড মাইটস-এর কামড়ে এই রোগ হয়। ভারত সহ চীন, কোরিয়া, পাকিস্তান, জাপান, তাইওয়ান, নেপাল, ভুটান, এমনকী পাপুয়া নিউগিনি অঞ্চলেও এই পোকা বা মাইট পাওয়া যায়। গোটা ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে এই পোকার উপস্থিতি প্রচুর। সাধারণত বনে-জঙ্গলে বা জলা এলাকার পাশে তৈরি হওয়া ঝোপঝাড়ে এই পোকা দেখতে পাওয়া যায়। কোনও কোনও মাইটের শরীরে ওরিয়েনশিয়া সুতসুগামোসি নামক একটি ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই পোকা মানুষকে দংশন করলে পোকার শরীরে থাকা এই ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে প্রবেশ করে। এর প্রভাবেই স্ক্রাব টাইফাস হয়।

উপসর্গ
স্ক্রাব টাইফাসের অন্যতম উপসর্গ ধুম জ্বর, সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা ও গা-হাত-পায়ে ব্যথা। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে দংশনের জায়গায় একটি ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে ‘এসকার’। দংশনের জায়গাটি লালচে হয়ে গিয়ে মাঝে একটি কালো মামড়ির মতো দাগ তৈরি করে। তবে সকলের শরীরে এসকার দেখা যায় না। এই রোগের উপসর্গের সঙ্গে ভাইরাল ফিভার, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এমনকী, করোনার লক্ষণের মিল রয়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই এই অসুখ চিনতে দেরি হয়। 

কীভাবে চিনবেন?
চেনার ভার চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। জ্বর এলে রোগী সাম্প্রতিককালে কোনও বন-জঙ্গল বা জলা এলাকায় গিয়েছিলেন কি না জানাতে হবে। 
জ্বর আসার জন্য ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য রোগের পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তাতে কিছু ধরা না পড়লে স্ক্রাব টাইফাসের অ্যালাইজা টেস্ট করতে হয়। পিসিআর পরীক্ষায়ও এই রোগ ধরা পড়ে। 

প্রাণঘাতী কি?
সময়মতো ধরা না পড়লে এই অসুখ প্রাণঘাতী হতে পারে। অসুখ কতটা তীব্র হবে, তা নির্ভর করে মাইটের মাধ্যমে কতটা ব্যাকটেরিয়া মানবশরীরে প্রবেশ করেছে তার উপর। বাড়াবাড়ি হলে নিউমোনিয়া, ফুসফুসের জটিলতা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা এনকেফেলাইটিস হয়ে রোগী জ্ঞান হারাতে পারেন। মানসিক স্থিতির অভাবে চিন্তাভাবনা ও বোধবুদ্ধিতে প্রভাব পড়তে পারে। সাধারণত বর্ষায় এই রোগের প্রকোপ বাড়ে।

চিকিৎসা কী?
এই রোগের চিকিৎসা খুব সহজ পদ্ধতিতেই করা যায়। সাধারণত পোকা কামড়ানোর ৭-১০ দিনের মধ্যেই এর উপসর্গ দেখা যায়। টেস্ট করে স্ক্রাব টাইফাস ধরা পড়লে ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করলে এই রোগ নির্মূল হয়। তবে কতটা ডোজ দরকার, তা রোগীর অবস্থা বুঝে দিতে হবে। ডোজের হেরফেরে বিপদ বাড়বে। 

এই অসুখ ছোঁয়াচে?
না, এই অসুখ ছোঁয়াচে নয়। রোগীর সংস্পর্শে এলে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু কোনও মাইট আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে ফের অন্য কোনও সুস্থ মানুষের শরীরে কামড় বসালে, আক্রান্ত রোগীর রক্তরস থেকে সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন। 

মাইট কামড়ানোর পরেই কী করবেন?
সব মাইটের শরীরে ওরিয়েনশিয়া সুতসুগামোসি নামক ব্যাকটেরিয়াটি থাকে না। সাধারণত যাদের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেসব পোকা কামড়ানোর ৭-১০ দিনের মধ্যেই জ্বর আসে। ধরা যাক, কেউ বুঝলেন, তাঁকে মাইট কামড়েছে। কিন্তু তখনও স্ক্রাব টাইফাসের কোনও উপসর্গ তাঁর শরীরে দেখা দেয়নি। সুতরাং সেক্ষেত্রে ডক্সিসাইক্লিন খাওয়ার কোনও কারণ নেই। বরং কামড়ের জায়গাটি ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে, কোনও অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগিয়ে নেওয়া ভালো। অযথা ভয় পাবেন না। কেননা, দংশন করা মাইটটি যদি ওরিয়েনশিয়া সুতসুগামোসির বাহক না হয়, তাহলে সেই মাইট থেকে স্ক্রাব টাইফাস হওয়ার সুযোগ নেই। তাই কামড় খাওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে জ্বর আসছে কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা করাতে হবে। 
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়

16th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ