বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

বিভিন্ন ধরনের জ্বর
লক্ষণ কী? চিকিৎসাই বা কী?

করোনার আবির্ভাবের পর থেকে জ্বর নিয়ে সকলের মধ্যেই একটা ভীতি তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। তাদের উপসর্গও বিভিন্ন। তাই অযথা ভয় না পেয়ে আগে জ্বরের কারণ শনাক্ত করা প্রয়োজন। 

ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে রীতিমতো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। সঙ্গে দেখা দেয় শারীরিক দুর্বলতা। ম্যালেরিয়ার জ্বর সাধারণত একদিন পর পর আসতে থাকে। প্রবল ঘাম হওয়ার মাধ্যমে এই ধরনের জ্বর ছাড়ে। আমাদের দেশে মূলত দু’ধরনের ম্যালেরিয়া দেখতে পাওয়া যায়। ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া ও প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া। এই দ্বিতীয় প্রকারের ম্যালেরিয়া কখনও কখনও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। আমাদের মস্তিষ্ক ও কিডনিও এই ধরনের ম্যালেরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনও কখনও জ্ঞান পর্যন্ত হারাতে পারেন। ম্যালেরিয়ার জ্বরের ক্ষেত্রে ক্লোরোকুইন দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ক্লোরোকুইন রেজিসটেন্স দেখা যায়। তখন আমরা সাধারণত রোগীকে আর্টেমিসিনিন গোত্রের ওষুধ দিয়ে থাকি।     

ডেঙ্গু
ইদানীং চারিদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এই রোগের ক্ষেত্রে জ্বরের পাশাপাশি ব্যক্তির শরীরের পেশি ও বিভিন্ন গাঁটে ব্যথা হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জ্বর দূর করতে প্যারাসিটামল খেতে বলা হয়। সেইসঙ্গে শরীরে ফ্লুইডের মাত্রা বজায় রাখতে প্রচুর জল বা সরবত পান করতে হয়। ডেঙ্গু হলে রোগীর প্লেটলেট অনেক সময়েই কমে যায়। সেটা রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে হয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্লেটলেট বাড়ছে নাকি কমছে, তা খেয়াল রাখতে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে রোগীর রক্ত পরীক্ষা করানোটা ভীষণ জরুরি। 

চিকুনগুনিয়া
ডেঙ্গুর মতোই প্রবল জ্বর ও ব্যথা নিয়ে শরীরে আক্রমণ করে চিকনগুনিয়া। আফ্রিকা থেকে এই শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ‘কুঁকড়ে যাওয়া’। জ্বর ও ব্যথার জন্য ব্যক্তির শরীর কুঁকড়ে যায় বলেই এহেন নাম। চিকুনগুনিয়া কিন্তু ডেঙ্গুর মতো প্লেটলেট কমিয়ে দেয় না। এক্ষেত্রেও রোগীকে প্যারাসিটামল ও প্রচুর পরিমাণে জলপানের পরামর্শ দেওয়া হয়। 

জাপানিস এনকেফেলাইটিস
মূলত মশাবাহিত রোগ। জাপানিস এনকেফেলাইটিসে আক্রান্ত হলে জ্বর আসেই। এই রোগ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুব ভয়ানক হতে পারে। বাচ্চারা এনকেফেলাইটিসে আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর ও ডায়ারিয়া শুরু হয়। তারপর এই ভাইরাস দেহের স্নায়ুযন্ত্রকে আঘাত করে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়। তখন ভুল বকা, জ্ঞান হারানোর মতো বিষয়গুলো দেখা দিতে পারে। এই প্রসঙ্গে আরও একটা বিষয় জেনে রাখা দরকার। জাপানিস এনকেফেলাইটিসের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার কিন্তু একটু বেশি (২০ থেকে ৩০ শতাংশ)। অন্যদিকে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে শরীরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা দিতে পারে। যেমন ধরা যাক পক্ষাঘাত। কখনও ব্যক্তি জিবি সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারেন। এই ধরনের অসুখে রোগীর সূক্ষ্ম ভাবনাচিন্তার ক্ষমতা কমতে পারে। মেরুদণ্ড থেকে সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড সংগ্রহ করে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের শনাক্তকরণ করা হয়।

জিকা ভাইরাস
এই রোগটিও মশাবাহিত। জ্বর এবং শরীরে ব্যথা হল এই রোগের অন্যতম উপসর্গ। জিকা ভাইরাস গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ক্ষতি করে। কারণ গর্ভাবস্থায় কেউ জিকায় আক্রান্ত হলে সদ্যোজাতের মস্তিষ্ক আকারে ছোট হয়ে যেতে পারে। এই রোগের এখনও চিকিৎসা সেইভাবে আবিষ্কৃত হয়নি।  

ভাইরাল জ্বর
রাইনো ভাইরাস থেকে আমাদের জ্বর হতে পারে। সাধারণত মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে সর্দি বেরনো এগুলো এই ধরনের ভাইরাল জ্বরের উপসর্গ। ইনফ্লুয়েঞ্জা বি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার অন্যান্য ভাইরাস থেকেও জ্বর হতে পারে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এই ধরনের জ্বর হলে, কখনও কখনও ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। যেমন করোনা। কোভিডের ক্ষেত্রে জ্বর ছাড়াও উপসর্গ হিসেবে স্বাদ বা ঘ্রাণশক্তি হারানোর মতো বিষয়গুলো থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়ারিয়াও হয়। এছাড়াও নিউমোনিয়া থেকেও জ্বর আসতে পারে। ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকেও কখনও কখনও জ্বর হতে পারে।

আরও কিছু জ্বর
উপরে আলোচিত বিষয়গুলো ছাড়াও ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। সমাজ বা আমাদের চারপাশ থেকেও কখনও কখনও জ্বর হতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জ্বর হতে পারে। ভেন্টিলেটর থেকেও জ্বর হতে হতে পারে। এই ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে কাঁপুনি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যেতে পারে। অনেকসময় মেনিনজাইটিস থেকেও জ্বর হতে পারে। এছাড়াও ইউটিআই (মূত্রনালীর সংক্রমণ) থেকে জ্বর হওয়াটা বহুক্ষেত্রেই এ দেশে লক্ষ করা যায়। যদিও পুরুষদের তুলনায় আমাদের দেশে মহিলারা অনেক বেশি ইউটিআইতে আক্রান্ত হন। একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, মূত্রনালীতে জ্বালা, যন্ত্রণা এবং জ্বর মানে ইউটিআই। এই উপসর্গগুলো কিন্তু সবসময় নাও হতে পারে। শরীরে দুবর্লতা দেখা দিলে এবং জ্বর এলে তখন মূত্র পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।        
সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়। কোনও নির্দিষ্ট উপসর্গ মেনে জ্বর হয় না। জ্বরের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও বয়সভেদে বিভিন্নরকমের উপসর্গ দেখা যেতে পারে। তাই জ্বর এলেই সবার আগে পরীক্ষা করে রোগের কারণটিকে সুনিশ্চিত করে জানা প্রয়োজন। তারপর ডাক্তারবাবুর পরামর্শমতো সেই জ্বরের চিকিৎসা করানো উচিত।     
লিখেছেন অভিনন্দন দত্ত

4th     November,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ