বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

কখন করাবেন নি রিপ্লেসমেন্ট?

 অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগটি কী?
 আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ আক্রান্ত হন প্রাইমারি অস্টিওআর্থ্রাইটিসে। বয়সবৃদ্ধিজনিত কারণে হাঁটুর যে ক্ষয় ও তার থেকে হওয়া বাতের সমস্যাকেই বলে প্রাইমারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস। 
তবে সেকেন্ডারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও কম নয়। সেকেন্ডারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার জন্য দায়ী দুর্ঘটনাজনিত ফ্র্যাকচার, লিগামেন্ট ইনজুরি, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অ্যাঙ্কোলাইজিং স্পন্ডিলাইটিস-এর মতো অসুখ। উল্লিখিত অসুখগুলির কারণে হাঁটুর জয়েন্ট-এ দ্রুত ক্ষয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কিছু মানুষের জুভেনাইল রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা জিনগত অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার সমস্যাও দেখা যায়। খুব কমবয়সেই এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে প্রাইমারি হোক বা সেকেন্ডারি, অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলে সাধারণ লক্ষণ হিসেবে থাকে— ব্যথা, ফোলা, চলাফেরায় প্রবল কষ্ট। এছাড়া হাঁটুতে মড়মড় আওয়াজ হওয়ার মতো ঘটনাও হতে দেখা যায়। তবে কোনও ব্যক্তি অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়া মাত্রই তাঁকে নি রিপ্লেসমেন্ট করাতে বলা হয় না। প্রথমে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ড্রাগ, সেক দেওয়ার মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।
 অস্টিওআর্থ্রাইটিস কি এক হাঁটুতে হয়? 
 প্রাইমারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা একযোগে দুই হাঁটুতেই হয়।
সেকেন্ডারি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা যে কোনও একটি হাঁটুতে দেখা দিতে পারে।
 কখন নি রিপ্লেসমেন্ট করার দরকার পড়ে?
 অস্টিওআর্থ্রাইটিসের জটিল অবস্থায় হাঁটু বেঁকে যাওয়া, হাঁটু শক্ত হয়ে ভাঁজ না হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। হাঁটু বেঁকে গেলে, হাঁটু ভাঁজ করতে না পারলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে চলাফেরা করার সময় রোগীর মাটিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। সেখান থেকে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও এড়ানো যায় না।
হাঁটু বেঁকে গেলে, হাঁটু ভাঁজ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে তখন রোগগ্রস্ত ব্যক্তি চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় নি রিপ্লেসমেন্ট করিয়ে নেওয়াই উচিত।
 দু’টি হাঁটুরই কি একযোগে অপারেশন করাতে হয়?
 প্রাইমারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস সাধারণত একযোগে দু’টি হাঁটুতেই হয়। তাই শুধু একটি হাঁটুতে প্রতিস্থাপন করালে সেই পা-টিই সোজা হয়। অন্য পা বেঁকেই থাকে। এমন অবস্থায় হাঁটাচলা করা সমস্যাবহুল হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রাইমারি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের রোগীর দু’টি হাঁটু ক্ষতিগ্রস্ত হলে একযোগে দু’টি পায়েই নি-রিপ্লেসমেন্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। 
 নি রিপ্লেসমেন্ট করানোর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চিকিৎসক কি আলাদা করে কোনও টেস্ট করাতে দেন?
 প্রাথমিকভাবে হাঁটুর এক্স রে করাতে দেওয়া হয়। এক্স রে-এর সাহায্যে হাঁটুতে কতটা কার্টিলেজ আছে, হাঁটু কতটা বেঁকে গিয়েছে তা বোঝা যায়।
 নি রিপ্লেসমেন্ট এর আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে যদি জানান?
 চিকিৎসক যত অভিজ্ঞ হন, ততই তিনি মিনিম্যাল ইনভেসিভ সার্জারি করার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ অল্প কাটা-ছেঁড়া করে রিপ্লেসমেন্ট করার চেষ্টা করেন। ক্ষত ছোট হওয়ার কারণে রোগীর পেশির ক্ষমতাও দ্রুত ফিরে আসতে থাকে। তাছাড়া এখন সমগ্র অপারেশন হয় কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পদ্ধতি বা কম্পিউটারের সহায়তায়। ফলে অপারেশনে ভুলভ্রান্তি কম হয়। প্রতিস্থাপন আরও নিখুঁত হয়। প্রতিস্থাপনের আগে রোগীর হাঁটুর এমআরআই করা হয়। তাই আগে থেকেই রোগীর হাঁটুর আকার অনুযায়ী ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করে রাখা হয়। তাই অপারেশনের পরে রোগীকে তেমন জটিলতা পোহাতে হয় না।
 প্রস্থেসিসে কি কোনও পরিবর্তন এসেছে?
 প্রস্থেসিসের উপাদানে ব্যবহার করা হচ্ছে টাইটেনিয়াম-নাইওবিয়াম, যা সেরামিকের মতো আচরণ করে। এছাড়া রয়েছে ‘রোটেটিং প্ল্যাটফর্ম নি’ যা প্রায় আসল হাঁটুর মতোই স্বাভাবিক কাজ করে। ফলে হাঁটাচলা অনেক মসৃণ হয়। এই ধরনের ইমপ্ল্যান্ট দ্রুত আলগা হয়ে যায় না।
 অপারেশনের পর কতদিন রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয়?
 সার্জারির পর মোটামুটি চার থেকে পাঁচ দিন রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয়। 
 কতদিন পরে রোগী হাঁটতে পারেন?
 অপারেশনের পরদিনই রোগীকে হাঁটানো হয় কিছুটা। এরপর ধীরে ধীরে যত সুস্থ হতে থাকেন, হাঁটাহাঁটির সময়ও বাড়তে থাকে। একসময় রোগী স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন। আসলে অপারেশনের পর রোগীর পায়ের পেশির সম্পূর্ণ জোর ফিরে আসতে প্রায় দেড় থেকে দু’মাস লাগে। তাছাড়া যেহেতু ইমপ্ল্যান্ট ফরেন বডি বা দেহের বাইরের একটি অংশ, তাই এটিকে গ্রহণ করতে ( আপন করতে) শরীরের অনেকখানি সময় লাগে। এই কারণেই অপারেশনের পরে সার্জারির জায়গা ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। ইমপ্ল্যান্টকে মানিয়ে নিতে শরীরের এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যায়।
 রোগীকে কি চিকিৎসকের কাছে ফলোআপ করাতে যেতে হয়?
 হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেলাই কাটাতে আসতে হতে পারে। এছাড়া চিকিৎসক ফলোআপের জন্য একটা সময় দিতে পারেন, কারণ বয়স্কদের অপারেশনের পর ডিসলেক্ট্রোলাইটিমিয়া বা সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ঘাটতি হওয়ার মতো সমস্যা হয়। সেই ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না দেখে নেওয়া দরকার। তাই কতকগুলি ব্লাড টেস্ট করতে হয়। 
 প্রতিস্থাপন সফল হলে রোগী কী কী কাজ করতে পারেন এবং কী কী করতে পারেন না?
 রোগী সিঁড়ি ভাঙতে পারেন। স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেন। এমনকী সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানোতেও কোনও বাধা নেই। এমনকী চাইলে রোগী পাহাড়েও বেড়িয়ে আসতে পারেন। তবে দৌড়ানো, লাফালাফি, স্কিপিং করা উচিত নয়।
 ইমপ্ল্যান্ট কতদিন স্থায়ী হয়?
 আধুনিক যে ইমপ্ল্যান্ট-এর সাহায্যে এখন অপারেশন করা হয়, তার স্থায়িত্ব প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর। ফলে সেকেন্ডারি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে যাঁদের নি রিপ্লেসমেন্ট করাতে হয়, তাঁরাও মোটামুটি ৫০ থেকে ৫৫ বছর বয়স অবধি নিশ্চিন্তে জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন। এই বয়সের পরে রোগীর রিভিসন ইমপ্ল্যান্ট সার্জারিও যথেষ্ট কার্যকরী।
সাক্ষাৎকার: সুপ্রিয় নায়েক
পরামর্শে বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ সন্তোষ কুমার।

21st     October,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ