বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

বুক না কেটেই ভালভ প্রতিস্থাপন
হার্টের চিকিৎসায় কেন
এত জনপ্রিয় হচ্ছে টাভি? 

পরামর্শে আরটিআইআইসিএস হাসপাতালের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবদত্ত ভট্টাচার্য।

টাভি কী?
টাভি-এর পুরো কথা ট্রান্সক্যাথেটার অ্যাওর্টিক ভালভ ইমপ্ল্যান্টেশন। টাভি পদ্ধতিতে বয়স্ক রোগীর হার্টের অকেজো ‘অ্যাওর্টিক ভালভ’-এর প্রতিস্থাপন করা হয়।
অ্যাওর্টিক ভালভের কাজ অ্যাওর্টিক ভালভ-এর কাজ সম্পর্কে বুঝতে হলে, হৃৎপিণ্ডের কাজ সম্বন্ধে সামান্য তথ্য জানতে হবে।
শরীরের দূষিত রক্ত মহাশিরার মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। তারপর ট্রাইকাসপিড ভালভের (ত্রিপত্র কপাটিকা) মধ্য দিয়ে ডান নিলয়ে ঢোকে। ডান নিলয় থেকে দূষিত রক্ত সেমিলুনার কপাটিকার মধ্য দিয়ে ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়। ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ রক্ত ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দে প্রবেশ করে। বাম অলিন্দ থেকে সেই বিশুদ্ধ রক্ত বাইকাসপিড ভালভ (দ্বিপত্র কপাটিকা) অথবা মাইট্রাল ভালভের মাধ্যমে বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। বাম নিলয় থেকে সেই বিশুদ্ধ রক্ত অ্যাওর্টিক ভালভের মাধ্যমে মহাধমনীতে ঢোকে ও মহাধমনীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। অতএব বাম নিলয় থেকে মহাধমনীতে ঢোকার জন্য যে ভালভ থাকে, তাই হল অ্যাওর্টিক ভালভ। অ্যাওর্টিক ভালভ একমুখেই খোলে। এই কারণেই বিশুদ্ধ রক্ত মহাধমনীতে প্রবেশের পর আর পিছনে ফিরে আসতে পারে না। 
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, হার্ট সংকুচিত হলে খুলে যায় অ্যাওর্টিক ভালভ। হার্ট প্রসারিত হলে ভালভ বন্ধ হয়ে যায়। অতএব অ্যাওর্টিক ভালভে গণ্ডগোল হলে রক্ত সংবহনেও তৈরি হয় অব্যবস্থা।

বয়স্কদের অ্যাওর্টিক ভালভে সমস্যা
স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যাওর্টিক ভালভের খোলামুখের পরিধি হয় তিন থেকে পাঁচ বর্গ সেন্টিমিটার অবধি। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে অ্যাওর্টিক ভালভে এক ধরনের ক্ষয় হয়। ভালভে জমতে থাকে ক্যালশিয়াম। ফলে ভালভ ক্রমশ পুরু হতে থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে এভাবে ভালভের খোলা মুখের পরিধি কমতে কমতে এক বর্গ সেন্টিমিটার বা তারও কম হয়ে যেতে পারে। ফলে মহাধমনীতে রক্ত ঠেলে পাঠানোর জন্য আরও বেশি বল প্রয়োগ করতে হয় হার্টকে। দেখা দেয় নানাবিধ শারীরিক সমস্যা। সাধারণত ৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের পরে অ্যাওর্টিক ভালভের এই ধরনের সমস্যা শুরু হতে পারে।

লক্ষণ
• রোগীর শ্বাসকষ্ট হয় • হাঁটাচলা করলে রোগীর বুকে চাপ বোধ হয় •  ঘুমোতে সমস্যা হয়  রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে  রোগের জটিল অবস্থায় হার্ট ফেলিওর হওয়ার ভয় থাকে।

কেন টাভি?
আগে অ্যাওর্টিক ভালভে সমস্যা হলে, এই ভালভ প্রতিস্থাপন করতে হলে ওপেন হার্ট সার্জারির সাহায্য নিতে হতো। সেক্ষেত্রে রোগীর বুকে প্রায় ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি ক্ষত তৈরি হতো। এমনকী অপারেশনের সময় রোগীকে রাখতে হতো হার্ট-লাং মেশিনের তত্ত্বাবধানে। টাভি পদ্ধতিতে এত কাটাছেঁড়া করার দরকার পড়ে না। রোগীর হাসপাতালবাসের সময় কমে। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

প্রক্রিয়া
টাভি পদ্ধতি অনেকটা অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি প্রক্রিয়ার মতোই। এক্ষেত্রেও কুঁচকি দিয়ে ফিমোরাল আর্টারিতে ক্যাথিটার প্রবেশ করানো হয়। এই ক্যাথিটারকে মহাধমনী পথে সরু হয়ে যাওয়া অ্যাওর্টিক ভালভ পেরিয়ে বাম নিলয় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ক্যাথিটারের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয় তার। এই তারের উপর দিয়ে পাঠানো হয় বেলুন ক্যাথিটার। বেলুনকে ঘিরে থাকে স্টেন্ট। আর ওই স্টেন্টের ভিতরে সেলাই করা থাকে নতুন ভালভ। পুরনো ভালভের কাছে বেলুনকে নিয়ে যাওয়া হয় ও ফোলানো হয়। বেলুন ফুলে যাওয়ার ফলে ভালভের সরু হয়ে যাওয়া মুখও বড় হয়ে খুলে যায়। এই পদ্ধতিতে বেলুনকে ঘিরে থাকা স্টেন্টও খুলে যায়। আর পুরনো ভালভের জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়ে যায় স্টেন্ট-এর সঙ্গে সেলাই করা নতুন ভালভ।

টাভির উপকারিতা
রোগীর বুকে বড়সড় ক্ষত তৈরি হয় না। দুই থেকে তিনদিনের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয় না। ভেন্টিলেশনেও রাখতে হয় না। ফলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে অ্যাওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট-এর ক্ষেত্রে টাভি পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী। বিশেষ করে বিভিন্ন বয়স্ক রোগীর একাধিক শারীরিক অসুখ থাকে। এমন রোগীর ক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই সকল ক্ষেত্রে টাভি অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

 

30th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ