বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

হার্ট সুস্থ রাখার ডায়েট

পরামর্শে জিডি হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউটের প্রধান পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার।

জন্ম থেকে অবিরাম কাজ করে চলেছে হৃৎপিণ্ড। এহেন দিনান্ত পরিশ্রম করে চলা একটি অঙ্গের স্বাস্থ্যরক্ষার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের খাদ্যাভ্যাস। তাই এমন কয়েকটি খাদ্যের নাম জেনে নেওয়া যাক, যা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে—
 শাক— পালং শাক, নটে শাকের মতো বাংলার অতি পরিচিত সব শাকের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পাতে পরিমাণ মতো শাক থাকলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। শাকে উপস্থিত ভিটামিন কে ধমনীর রক্ষণাবেক্ষণ করে। এছাড়া শাকে রয়েছে ডায়েটরি নাইট্রেট। এই খাদ্যোপাদান ব্লাডপ্রেশার কমায়, ধমনীকে নমনীয় করে। 
 হোল গ্রেইন— আটা, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, ওটস, বার্লি ইত্যাদি হল হোল গ্রেইন। এই ধরনের খাবারে শস্যের সমগ্র অংশ থাকে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারগুলি হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও দারুণ উপযোগী। নিয়মিত হোল গ্রেইন খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল কমে ও হার্ট সুস্থ থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই খাবার খেলে ব্লাডপ্রেশারও কিছুটা কমে। সবথেকে বড় কথা, এই খাবারের মধ্যে থাকা ডায়েটরি ফাইবার শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য রক্ষায় দারুণ কার্যকরী। 
 বেরি জাতীয় ফল— খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে শৌখিন হলে স্যালাডে রাখতেই পারেন বেরি জাতীয় ফল। ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরির মতো ফলগুলি হার্টের স্বাস্থ্যরক্ষায় দারুণ কার্যকরী। বেরির মধ্যে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে এই ফল। পাশাপাশি এই ফল রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তবে বেরি জাতীয় ফল ছাড়াও যে কোনও মরশুমি ফল খেলেও হার্ট ভালো থাকে। দিনে অন্তত একটি ফল খাওয়া জরুরি। 
 টম্যাটো— অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই সব্জি শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেলস নিষ্ক্রিয় করে ও প্রদাহের আশঙ্কা কমায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমে। 
 আদা— আদার বহু গুণের মধ্যে অহেতুক রক্ত জমাট বাঁধতে না দেওয়া (ব্লাড ক্লট), কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার ক্ষমতাও রয়েছে। 
 আখরোট— এই খাদ্যটি ফাইবারের পাশাপাশি ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজে ভরপুর। আখরোট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়।
 আমন্ড— হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এমন সব ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে আমন্ডে। এই খাদ্য খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। কমাতে পারে পেটের মেদ।
 সামুদ্রিক মাছ— স্যামন, সার্ডিনের মতো মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই মাছ হার্টের জন্য দারুণ উপকারী। ব্লাডপ্রেশার, সুগার নিয়ন্ত্রণেও ভালো কাজ করে। মুশকিল হল, এই ধরনের মাছ এখানকার বাজারে অমিল। তবে শপিংমলে ক্যানবন্দি অবস্থায় এই মাছ বিক্রি হয়। চাইলে কিনে খেতে পারেন।
হার্ট ভালো রাখার ডায়েট চার্ট
 সকাল শুরু হোক লিকার চা বা গ্রিন টি দিয়ে। দুধ চা খেলে ডাবল টোনড মিল্ক দিয়ে বানান। চিনি ছাড়া বা কম চিনি দিয়ে চা খান। সঙ্গে থাকুক এক থেকে দু’টি আটার বিস্কুট বা ডায়জেস্টিভ বিস্কুট।
 একটু ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে ফেলুন। এক্ষেত্রে ঘুম থেকে ওঠার দেড় ঘণ্টার মধ্যে প্রাতরাশ করে ফেলাটাই শ্রেয়। ব্রেকফাস্টে থাকুক রুটি, ওটস, ডালিয়ার মধ্যে যে কোনও একটি। সঙ্গে রাখুন সব্জি। প্রোটিন হিসেবে ডিম খেতে পারেন। সুস্থ মানুষ একটি গোটা ডিম খান। আর ডায়াবেটিস, প্রেশার, কোলেস্টেরল, হার্টের অসুখ থাকলে কুসুম ছাড়া ডিম খেতে হবে। নিরামিষাশী হলে ডাবল টোনড দুধের ছানা, অংকুরিত ছোলা খেতে পারেন। 
 ব্রেকফাস্ট করার দুই-তিন ঘণ্টা পর একটা গোটা মরশুমি ফল খেতে হবে। আর ফলের জ্যুস নয়, গোটা ফল খাওয়া উচিত। তবেই মিলবে সম্পূর্ণ পুষ্টি। 
 দুপুর একটা থেকে দুটোর মধ্যে লাঞ্চ সেরে ফেলার চেষ্টা করুন। দুপুরে স্যালাড মাস্ট। গাজর, লেটুস পাতা, শসা, পাতিলেবু ইত্যাদি সহযোগে একটা গোটা প্লেট স্যালাড খেতে হবে। সাধারণ চালের ভাত খেতে পারেন। রিফাইনড রাইস একদমই নয়। রুটি খেতে ভালো লাগলে তাই খান। সঙ্গে থাকুক ডাল, সব্জি, শাকের তরকারি। পাশাপাশি মাছ, মাংস, পনির, ছানার তরকারির মধ্যে একটি খেতে হবে। শেষপাতে বাড়িতে পাতা বা বাজারে বিক্রিত ফ্যাটবিহীন টক দই খেতে পারেন। 
 বিকেলে চা বিস্কুট।
 সন্ধেবেলা ভেজিটেবল স্যুপ, চিকেন স্যুপ, ঘুগনি, ভুট্টা, প্লেন ধোসা ইত্যাদি খেতে পারেন। 
 ডিনারে থাকুক রুটি বা ভাতের মধ্যে একটি। সঙ্গে ডাল, সব্জি, মাছ বা চিকেন খেতে পারেন।
 দিনে নিজের সময়মতো ছ’টি আমন্ড ও দু’টি আখরোট খেতে পারেন।
 পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
মনে রাখবেন, উপরে বলা ডায়েট চার্ট যে কোনও সুস্থ মানুষ চাইলেই মেনে চলতে পারেন। কিন্তু সুগার, প্রেশার, কিডনির সমস্যা বা অন্য কোনও ক্রনিক রোগ থাকলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করেই খাদ্য তালিকা বানান।
কী খাবেন না?
 তেল হার্টের শত্রু। দিনে একজনের হিসেবে ২৫ এমএল-এর বেশি পরিমাণ তেল খাওয়া উচিত নয়। সব তেলের মধ্যে সর্ষের তেল হার্টের জন্য ভালো। এছাড়া অলিভ, সোয়াবিন, সানফ্লাওয়ার অয়েল ইত্যাদি মিলিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন।
 নুন বেশি খেলে প্রেশার বাড়বে যা হার্টের পক্ষে খারাপ। তাই রান্নায় কম নুন দিন। আর কাঁচা নুন তো খাওয়া যাবেই না।
লিখেছেন সায়ন নস্কর

30th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ