বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

নুনে লুকিয়ে বিপদ

পরামর্শে পিজি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়।

কথায় আছে, নিজের চরিত্র নুনের মতো তৈরি করো। কারণ তার উপস্থিতি বোঝা না গেলেও, অনুপস্থিতি সমস্ত কিছুকে বিস্বাদ করে দেয়। মুশকিল হল, প্রবাদে যা বলা নেই— খাদ্যে নুন বেশি হয়ে গেলে কিন্তু সমূহ বিপদ। অর্থাৎ ভারসাম্য সব জায়গাতেই জরুরি।
খাবারকে মুখরোচক ও লোভনীয় করতে গিয়ে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ, যা আমাদের অচিরেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সৌজন্যে সেই নুন! বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে সেই বিষ মানব শরীরে প্রবেশ করছে। সঙ্গে দোসর হয়ে দাঁড়িয়েছে খাদ্যাভ্যাস নিয়ে চিরাচরিত কিছু ভুল ধারণা। শরীরে নুনের পরিমাণ কমে যাওয়াকে বলা হয় হাইপোন্যাট্রিমিয়া। রোগীর মধ্যে খিদে কমে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব, ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা যাবে। এমনকী রোগীর খিঁচুনি হয়ে তিনি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। তাই বলে, নুনের অভাব হচ্ছে ভেবে  পাতে বেশি করে নুন নিয়ে খেলে চলবে না। প্রশ্ন হল, নুন গ্রহণের সঠিক মাত্রা কত? জানলে অবাক হবেন, নিত্যদিন দুই গ্রামের বেশি নুন খাওয়াই উচিত নয়।
সমস্যা হল, কেউ কেউ আবার একটু বেশি নোনতা খাবার পছন্দ করেন। অথচ পৃথিবীর এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানকার মানুষ নুন খায়ই না বা খুবই কম খায়। বাচ্চাদের ছোট থেকে কম নুন খাওয়ার অভ্যেস গড়া হয়। দেখা গিয়েছে, যাঁরা নুন কম খায়, তাঁদের মধ্যে রক্তচাপজনিত রোগ যেমন হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক ফেলিওর ইত্যাদি কম হয়। নুনের মূল উপাদান হল সোডিয়াম ক্লোরাইড যা প্রাণধারণের জন্য অপরিহার্য। তবে, উপাদানটির মাত্রা অতিরিক্ত হলেই ঘনায় মারাত্মক বিপদ। তাই আলাদা করে নুন খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রায় নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে প্রতি বছর ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
নুন খাওয়া সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কিছু মিথ ও ভুল ধারণা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, ‘আমি তো কাঁচা নুন খাই না, কাঠ-খোলায় নেড়ে খাই’ বা ‘বিট নুন, সৈন্ধব লবণ খাই’ ইত্যাদি। এসব কথার কোনও অর্থ নেই।
মনে রাখতে হবে নুনের মূল উপাদান হল, সোডিয়াম ক্লোরাইড। তার থেকেই আসে লবণাক্ত স্বাদ। এই উপাদান শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঢোকা উচিত নয়। কাঠ-খোলায় নুন নেড়ে খেলে মোটেই সোডিয়াম ক্লোরাইডের মাত্রা কমে না। বড়জোর নুনের মধ্যে থাকা জলীয় উপাদান বাষ্পীভূত হয়ে নুন শুকনো হয়। আবার কাঁচা খাওয়া যাবে না বলে রান্নায় নুন বেশি দেওয়া যাবে এমন নয়। কারণ সেক্ষেত্রে রান্নার মাধ্যমে শরীরে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড ঢুকবে।
অনেকে বিশ্বাস করেন, ঘাম বেরনোর পরে নুন বেশি খাওয়া উচিত। এও ভুল ধারণা। ঘাম হওয়ার পরে দরকার শুধু জলপানের।
মুশকিল হল, আজকাল মানুষ বাজারি নানা বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। দোকানে এখন ‘লো সোডিয়াম সল্ট’ মেলে। সেই নুনে কম সোডিয়াম আছে বলে মানুষ সেই লবণ বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলছেন। ফলে শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত নুন। বেশি পরিমাণে নুন গ্রহণ করলেই রক্তচাপ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। সেখান থেকে বাড়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা। এছাড়া শরীরে বেশি লবণ প্রবেশ করলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। সুতরাং নুন খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সুস্থ থাকুন।
লিখেছেন দেবজ্যোতি রায়

16th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ