বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

আসলে অসুখ মনে

পরামর্শে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
 
 শরীরটা ভালো নেই। সারাদিন শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। গায়ে কোনও জোর নেই। বোধ হয়, বড় কোনও রোগে ধরল।  পেটে মাঝে মধ্যেই ব্যথা করে। খেতে পারি না। 
 খাবার হজম হয় না। খেলেই বমি পায়। পেট জ্বালা করে।  বুকে প্রায়ই ব্যথা হয়। হাঁফ ধরে। মনে হয়, হার্ট অ্যাটাক হল বলে।
যে কেউ একবার পড়েই বুঝবেন, উপরের প্রতিটি লক্ষণই শারীরিক কোনও জটিলতার দিকে ইঙ্গিত করে। চিকিৎসকরাও প্রথমে তেমনটাই ভাবেন। ওষুধ দেন। হয় যাবতীয় টেস্টও। তারপরও বহু ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ে না! এদিকে রোগী বলেন, তাঁর সমস্যা কমছে না। এমতাবস্থায় নানা ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রোগীর শরীরে নয়, অসুখ বাসা বেঁধেছে মনেই। এই ধরনের রোগকে বলে সাইকোসোমাটিক ডিজঅর্ডার। যেন ছোটবেলায় পড়া সুকুমার রায়ের সেই ‘রাজার অসুখ’! চিকিৎসকরা এই ধরনের বেশিরভাগ রোগীকেই সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিতে বলেন। শুরু হয় আসল চিকিৎসা।
শরীর সম্পর্কে এই অহেতুক দুশ্চিন্তার নেপথ্যে মূলত থাকে অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন ইত্যাদি। করোনা পরবর্তী সময়ে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। এবার প্রশ্ন হল, কেন কোভিডের পরই সমস্যা বাড়ছে? উত্তর বলি, করোনাতে মানুষ অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। চেনা পৃথিবী হঠাৎই অনেকটা বদলে গেল। ঘরবন্দি জীবন। কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও তথৈবচ। এই জটিল অবস্থাতে দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা বহুগুণ বেড়েছে। বাড়ছে সাইকোসোমাটিক রোগের প্রভাব।
আবার করোনার সময়ে শুচিবাইগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতাও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনিটে মিনিটে অকারণে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা, স্নান করা, জামাকাপড় কাচা ইত্যাদি বদঅভ্যেস বহু মানুষকে জাপটে ধরেছে। এই সমস্যার নাম অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বা ওসিডি। 
সাইকোসোমাটিক রোগের মধ্যে দু’টি অসুখের কথা আলাদা করে বলতেই হবে—১. হাঁপানি, ২. আইবিএস। প্রথমে হাঁপানির কথায় আসা যাক। এমন অনেক হাঁপানি রোগী রয়েছেন যাঁদের শ্বাসকষ্টের সঙ্গে উদ্বেগের সরাসরি যোগ রয়েছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক— ধরা যাক কোনও মানুষের ফল খেলে অ্যালার্জি হয়, সেখান থেকে হয় শ্বাসকষ্ট। এই হল মূল সমস্যা। কিন্তু দেখা গেল, ফল না খেয়েও কেবল চোখের সামনে ফল দেখে কিংবা ফলের ছবি দেখে রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তখন বুঝতে হবে রোগীর মনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে অসুখ। এমনই অপর একটি রোগ হল আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম)। এই রোগে আক্রান্ত রোগী ডায়ারিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। আইবিএস-এর ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রোগীর মনে স্ট্রেস বাড়লে সমস্যাও বাড়ে। রোগী যত বেশি অসুখ নিয়ে ভাবেন, রোগের তীব্রতাও ততটাই বাড়তে থাকে। তবে মনে রাখবেন, এই দু’টি রোগ সামান্য উদাহরণ। এমন অসংখ্য সমস্যা রয়েছে, যেখানে রোগের নেপথ্যে প্রধান অনুঘটক হল মন। 
রোগ নির্ণয়
সব ধরনের টেস্ট করার পরও সমস্যার নাগাল না পেলে রোগীর মনের দরজাতেই কড়া নাড়তে হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর মানসিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করে নেন। এরপর হয় সাইকোমেট্রি টেস্ট। এই টেস্টেই অসুখটিকে চিহ্নিত করা হয়। 
চিকিৎসা
অ্যাংজাইটির সমস্যায় মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ থাকলে সাধারণভাবে কাউন্সেলিং করলেই রোগী ঠিক হয়ে যান। অপরদিকে সমস্যা তীব্র হলে মুখে খাওয়ার ওষুধ দিতে হয়। এই ওষুধগুলি দারুণ কাজ করে। হাতেনাতে পাওয়া যায় ফল। এদিকে ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিংই প্রথম রাস্তা। কাউন্সেলিং-এ কাজ না হলে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ দেওয়া হয়।
লিখেছেন সায়ন নস্কর

9th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ