বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

খুব হুঁশিয়ার! পেটে ঢুকলেই বিষ
হয়ে যাচ্ছে এই খাবারগুলো!
ডাঃ রুদ্রজিৎ পাল

কলকাতার রাস্তায় বেরলেই কত খাবার! দোকানে দোকানে রঙিন কেক, পেস্ট্রি, সন্দেশ, লজেন্স। ফুটপাথে জিভে জল আনা ঝালমুড়ি, নানা রঙের শরবত, রোল, চাউমিন, মোমো।  বাসে উঠলেই কটাকট দাঁতে কাটা যায় সবুজ মটরভাজা। এছাড়া মাঝে মধ্যেই শহর জুড়ে মেলা। সেখানে নানা মিষ্টি, জিলিপি, বুড়ির চুল মানে ক্যান্ডি ফ্লস, ললিপপ, বিরিয়ানি, পোলাও। কলকাতার রাস্তায় হাঁটলে খাবারের অভাব হবে না। কিন্তু কম দামে এইসব খাবার যে খাচ্ছেন, তার মধ্যে কী আছে, জানেন কী? লাল-নীল-সবুজ সন্দেশ, হলুদ জিলিপি বা বিরিয়ানি, লাল রঙের স্যস এসব তো হরদম খাচ্ছেন কিন্তু এই রঙ আসছে কোথা থেকে? ভারতে সরকার অনুমোদিত কিছু খাদ্যের রং রয়েছে। যেমন লাল রঙের জন্য কারমোসিন, হলুদের জন্য টারট্রাজিন, নীলের জন্য ব্রিলিয়ান্ট ব্লু ইত্যাদি। এইসব রং আলাদা করে বা একটার সঙ্গে আরেকটি মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। নানা খাদ্য দ্রব্যে এই রঙ ব্যবহার হয়। যেমন নরম পানীয়, আইসক্রিম, কেক, লজেন্স। এছাড়া প্রাকৃতিক রং, যেমন হলুদ, কেশর, ক্যারোটিন ইত্যাদিও খাবারে ব্যবহার করা যায়। তবে সব রঙই ব্যবহার করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণেই। ইচ্ছামতো নয়। অনুমোদিত রং খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহার হলেও কিন্তু শরীরে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে রাস্তার কম দামি দোকানে যে খাবার দেখে আপনাদের জিভে জল আসে, সেই খাবারে কী রং আছে, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। অনুমোদিত রং বাদ দিন, যে সব রং এই খাবারে থাকে, সেগুলি আদৌ খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত কি না, সেটাই সন্দেহ। বিজ্ঞানীদের অনুমোদিত, স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো রং স্বভাবতই দামি। ফলে আর দশটা ব্যবসায়ে যেমন বেশি লাভের জন্য কমদামি উপাদান মেশানো হয়, খাবারের ক্ষেত্রেও তাই করা হবে, সেটাই অর্থনীতির নিয়ম।
অতীতে বহুবার কলকাতার রাস্তার খাবারের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে রঙিন খাবারে বহু ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। যেমন কমদামি বিরিয়ানি গ্রাহকদের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলতে মেটানিল ইয়েলো ব্যবহার হয়।  কারখানায় বস্ত্র রঙিন করে তুলতে ব্যবহার হয় এই রং। সেই বিষাক্ত রং আপনার পেটে যাচ্ছে। ফল কি ভালো হবে? পরীক্ষায় প্রমাণিত যে এই রাসায়নিক পরবর্তীকালে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তবে ক্যান্সার তো আর একদিনে হয় না। আপনি দশ বা কুড়ি বছর ধরে এরকম রাসায়নিক খেয়ে গেলে তারপর হবে। ফলে তখন আপনি আর বুঝতে পারবেন না যে কেন বিরল ধরনের ক্যান্সার আপনাকে আক্রমণ করছে! ভারতে এখন কর্কটরোগ প্রচণ্ড ভাবেই বাড়ছে। তামাক, বায়ুদূষণ ইত্যাদি প্রধান কারণ ছাড়াও খাদ্যের এইসব রঙিন রাসায়নিকও কিন্তু এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিরিয়ানি ছাড়াও এরকম হলুদ রাসায়নিক ব্যবহার হয় জিলিপি, অমৃতি জাতীয় মিষ্টিতে।
রঙিন সন্দেশ। আরেকটি ক্ষতিকর খাবার। বিশেষত দেওয়ালির সময়ে আজকাল এরকম মিষ্টি সব দোকানেই পাওয়া যায়। কী থাকে এইসব রঙে? সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে রোডামিন বি, কঙ্গো রেড-এরকম প্ল্যাস্টিকে রং করার রাসায়নিক ব্যবহার হয় এই সব খাদ্যে। সবুজে ব্যবহার হয় ম্যালাকাইট গ্রিন। এগুলো একটাও মানুষ কেন, কোনও জীবিত প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করারই কথা নয়। আর সেই রাসায়নিক আপনাদের বাড়ির শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই খাচ্ছে!
তবে শুধু মিষ্টি বা লজেন্সের মত তৈরি খাবারই নয়, কাঁচা ফল বা সব্জিতেও অনেক সময়েই রং দেওয়া থাকে। বিশেষত রাস্তার কাটা ফলে এইরকম দূষণ হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। দেখতে ভালো লাগে। ক্রেতারা ছুটে আসে। তারপর সেই ভিড়ে কে কোথায় মিলিয়ে গেল, বাড়ি গিয়ে পরে কার অসুখ হল, কার মাথা ব্যথা? বাজার থেকে যে সব্জি কিনছেন বা ডাল কিনছেন, তাতেও রং আছে। মিষ্টি আলু কেনার পর জলে ডুবিয়ে রাখলে যদি গোলাপি রং ভেসে ওঠে বা সবুজ মুগ জলে ভিজিয়ে রাখলে যদি সেই জল সবুজ হয়ে যায়, তবে তাতে রং মেশানো আছে।
তাই কাঁচা থেকে রান্না করা, কোন খাদ্যদ্রব্যেই ক্ষতিকর রং বাদ নেই। বিশেষত শিশুদের শরীরের ওপর এইসব রাসায়নিকের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সীসাযুক্ত রঙ অনেকদিন খেলে শিশুদের স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়, রক্তাল্পতা হয়। বড়রাও এইসব ক্ষতি থেকে নিরাপদ নয়। এই যে আপনি দিনের পর দিন অগ্নিমান্দ্যে ভুগছেন, তার জন্য হয়তো দায়ী খাবারের রং। তাই রঙিন খাবার খাবেন না। শুদ্ধ খান। মুখে স্বাদ হয়তো একটু কম পাবেন, তবে শরীর সুস্থ থাকবে। নীরোগ থাকলে চিকিৎসা খাতে অর্থও কম ব্যয় করতে হবে।

16th     August,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ