বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

আলফা, বিটা, ডেল্টা
করোনার এইসব অদ্ভুত
নাম এল কোথা থেকে?

পরামর্শে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ রাজা রায়।

• করোনা ভাইরাসের মিউটেশন, ভ্যারিয়েন্ট এবং স্ট্রেন বিষয়টি কী?
•• করোনা আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস। সবসময়ই মিউটেশন করার প্রবণতা রয়েছে। ভাইরাসের বাইরে থাকে স্পাইক প্রোটিন, তারপর লিপিডের চাদর। অন্দরে থাকে জেনেটিক মেটেরিয়াল বা আরএনএ। যখনই সুস্থ কোষের সংস্পর্শে আসে, সে প্রথমেই কোষের মধ্যে তার জেনেটিক মেটেরিয়াল বা আরএনএ প্রবেশ করিয়ে দেয়। কোষের অন্দরে ‘মেমোরি কার্ড’ বা তথ্যপূর্ণ ‘চিপ’-এর মতো কাজ করে আরএনএ। ফলে কোষে প্রবেশ করার পর আশ্রয়দাতা কোষকেই কাজে লাগিয়ে সেই কোষের ভিতরেই তৈরি করতে থাকে নিজের অসংখ্য প্রতিলিপি। অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে প্রতিলিপি তৈরির সময় কিছু কিছু প্রতিলিপির জেনেটিক কোডে পরিবর্তন হয়ে যায়। এর ফলে যখন গোটা ভাইরাস তৈরি হয়, তখন সেই ভাইরাসের গঠনেও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,  জেনেটিক কোডে পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসের গাত্রে থাকা স্পাইক প্রোটিনেরও পরিবর্তন হতে পারে। ভাইরাসটি আরও সংক্রামক হয়ে যেতে পারে। আবার খুব দুর্বল হয়ে মরেও যেতে পারে। 
মিউটেশন: দ্রুতগতিতে প্রতিলিপি তৈরির সময় কিছু ত্রুটি থেকে যায়। এই কারণেই হয় মিউটেশন। ব্যাপারটা অনেকটা জেরক্স করার মতো। জেরক্সের সময় কিছু প্রতিলিপি ঝকঝকে হয়ে বেরিয়ে আসে। আবার কিছু কিছু ঝাপসা হয়ে যায়। ব্যাপারটা খানিকটা সেইরকম। তবে ভাইরাসের মিউটেশনের মূল কারণ হল অস্তিত্ব রক্ষা করা। মিউটেশন শক্তিশালী হলে ভাইরাসের অস্তিত্ব রক্ষার পক্ষে লাভজনক হতে পারে। আবার ধ্বংসের কারণও হতে পারে। 
 ভ্যারিয়েন্ট: এই যে একাধিক মিউটেশন হল, সেগুলিই হল ভ্যারিয়েন্ট। চীনের উহান শহরে ‘উহান ১’ বা প্রথম ভাইরাসটির মিউটেশন ঘটে সংক্রামক ‘ডি৬১৪জি’ ভাইরাস তৈরি হয়। এরপর এই ভাইরাসের মিউটেশন ঘটে তা থেকে তৈরি হল বি.১.১.৭ বা আলফা ভ্যারিয়েন্ট। এরপর আরও মিউটেশন ঘটে। আমরা দেখা পাই বিটা (বি.১.৩৫১), গামা (পি.১), ডেল্টা (বি.১.৬১৭), এপসিলন (বি.১. ৬১৭/বি.১.৪২৯) ভ্যারিয়েন্টের। 
স্ট্রেন: এই যে আমরা ভারতে ডেল্টা ভাইরাসের দাপিয়ে বেড়ানোর খবর পাচ্ছি, তার অর্থ হল ভারতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়ি ঘোরাচ্ছে। এই ডেল্টা ভাইরাসের আবার অনেকগুলি মিউটেশন জুড়ে একটু আলাদা চারিত্রিক বৈচিত্রযুক্ত তিনটি ভাইরাস তৈরি হয়েছে। এইগুলিই হল ডেল্টার স্ট্রেন। অর্থাৎ ডেল্টা ভাইরাসের মূল কোড বি.১.৬১৭ হলে স্ট্রেনগুলি হল বি.১.৬১৭.১, বি.১.৬১৭.২, বি.১.৬১৭.৩।  
• কোন ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক?
•• হু’র তথ্য অনুযায়ী, আলফা (বি.১.১.৭), বিটা (বি.১.৩৫১), গামা (পি.১), ডেল্টা (বি.১.৬১৭), এপসিলন (বি.১. ৬১৭/বি.১.৪২৯) ভ্যারিয়েন্টগুলিকে নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
• ডেল্টা কেন বেশি বিপদজনক?
•• ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আগের চাইতে অনেক বেশি মাত্রায় ফুসফুসকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে। উপসর্গের রেশও থাকছে অনেক দিন। কিছু কিছু রোগী১৪ দিনেও সুস্থ হচ্ছেন না। একমাস ভুগছেন। এছাড়া অত্যন্ত সংক্রামক। তাই চিন্তা রয়েছে। 
• আলফা, বিট, গামা, গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে নামকরণের কারণ কী?
•• করোনা ভাইরাসের বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েন্টের দেখা মিলেছিল ব্রিটেনে, বি.১.৩৫১ ভ্যারিয়েন্টের দেখা মিলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, পি.১ মিলেছিল ব্রাজিলে, বি.১.৬১৭-এর দেখা মিলেছে ভারতে, আর মার্কিন মুলুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে বি.১. ৬১৭/বি.১.৪২৯ ভ্যারিয়েন্ট। নানা দেশে নানা ভ্যারিয়েন্ট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সংক্রামিত মানুষের মাধ্যমে অন্য দেশে চলেও যাচ্ছে। মুশকিল হল, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে না পেরে নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা বিপর্যস্ত হলেই অন্য দেশের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছেন। সাম্প্রতিককালে ভারতে তাণ্ডব চালানো বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্টের দেখা অন্য দেশেও মিলেছে। সেই দেশ তখন করোনার এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট’ বলে চালানোর চেষ্টা করছে। যেন করোনা আটকাতে না পারার দায় দায় আসলে ভারতের! এই পারস্পরিক দোষারোপের পালা ভঙ্গ করতেই হু’র তরফে ভ্যারিয়েন্টের নাম আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা, এপসিলন, জেটা, এটা কাপ্পা ইত্যাদি রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
•  মিউটেশন হলে ভাইরাস দুর্বল হয়? 
•• মিউটেশন আত্ম ধ্বংসের কারণ হতে পারে। ফলে এভাবে বারবার মিউটেশন করতে করতে একটা সময় আসতেই পারে, যখন ভাইরাস নিজেই নিজের বিলোপ ঘটাবে। করোনার ক্ষেত্রেও এমন ঘটবে কি না তা আগাম বলা সম্ভব নয়। তবে কোভিড বিধি মানলে ও সময়মতো ভ্যাকসিন নিলে আমরা ভাইরাসের প্রাণঘাতী আক্রমণ ঠেকাতে পারি। 
• কিছু ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে নাকি ভ্যাকসিন কাজ করছে না? 
• দক্ষিণ আফ্রিকার  বি.১.৩৫১ ভ্যারিয়েন্ট বা বিটা ভ্যারিয়েন্টর বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড আস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় তৈরি ভ্যাকসিন কম কাজ করছিল বলে জানা গিয়েছে। তাই কোভিশিল্ড তারা ফেরত পাঠিয়েছিল। তবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। আমাদের হাতে একাধিক ভ্যাকসিন রয়েছে। সেই ভ্যাকসিন গুলি বিটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকরী।
• বুস্টার ডোজ নিতে হতে পারে?
• এখনও যা তথ্য এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দু’টি ডোজ নেওয়ার পরেও কারও কারও সংক্রমণ হচ্ছে। তবে হ্রাস পেয়েছে ভোগান্তি, হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাণহানির আশঙ্কা। ভ্যাকসিনগুলি পরীক্ষিতভাবে একাধিক ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকরী। ফলে এত ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে হ্যাঁ, ভ্যাকসিন সবে এসেছে। কার্যকারিতা কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য হাতে নেই। ইতিমধ্যে কিছু কিছু দেশে নাগরিকদের সেকেন্ড ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর থার্ড বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা ভাবছে। তবে এ নিয়ে বিপুল দুশ্চিন্তা করার অর্থ নেই। কারণ ইমিউনিটি শক্তিশালী করতে ও প্রাণহানি রোধে বুস্টার ডোজ খুবই কার্যকরী। ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেও ফি বছর একবার বুস্টার নিতে হয়। এখনই বিস্তারিত বলার সময় আসেনি। সুতরাং টিকা নিন ও কোভিডবিধি মেনে চলুন। 
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক

1st     July,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ