বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

শিশুর মেধা ও বুদ্ধির
বিকাশে কী করবেন?

পরামর্শে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এর কর্ণধার ডাঃ অপূর্ব ঘোষ, পুষ্টিবিদ অরিত্র খাঁ এবং যোগবিশারদ রবিনাথ রায়।

শিশুর মেধা বৃদ্ধির জন্য কিছু ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন সব অভিভাবকরা। দেখা যাক সেগুলি কী কী—
• কল্পনাশক্তি নষ্ট করছে কার্টুন: ইদানীং বাচ্চাদের শান্ত রাখার জন্য কিংবা ভুলিয়েভালিয়ে খাবার খাওয়ানোর জন্য স্মার্টফোনে চালানো হচ্ছে কার্টুন! অবশ্য মাঝেমধ্যে ছড়া শেখাতেও বাবা-মা ব্যবহার করছেন স্মার্টফোন। এভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে দুই ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রথমত, বাচ্চাদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তি তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বাচ্চাদের কল্পনাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। তারা আশপাশের মানুষ নয়, বরং নকল করতে শুরু করছে কার্টুন চরিত্রের আদবকায়দাকে। শিখতে শুরু করছে কার্টুন চরিত্রগুলির মতো করে কথা বলা। এমনকী শিখছে অন্যকে আঘাত করাও। এমনকী সেই আঘাতের ফলাফল কী হতে পারে তা না বুঝেই অন্যকে পীড়ন করছে তারা। তৈরি হচ্ছে সংবেদনশীলতার অভাব।
কার্টুনে চোখের সামনে দৃশ্যপটের দ্রুত পরিবর্তন হয়। তাই কার্টুন দেখতে বিশেষ মনোনিবেশের প্রয়োজন হয় না। অথচ কার্টুন আনন্দের জোগান দেয়। ধৈর্যের দরকার পড়ে না। কিছু গবেষণা বলছে, কার্টুন দেখার অভ্যেস মনোযোগ ও ধৈর্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। 
বাস্তবতার মুখোমুখি হতে দেয় না স্মার্টফোনের জগৎ: কিশোর-কিশোরীরা ইন্টারনেটের সাহায্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিত থাকতেই বেশি উৎসাহিত বোধ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাচ্চারা সাইবার বুলিং-এর শিকার হতে পারে। কৃত্রিম জগতে এভাবে অন্যের উপহাসের পাত্র হয়ে পড়ার প্রভাব পড়তে পারে বাস্তব জীবনেও। ফলে বাস্তব জীবনে তারা আরও হতাশ ও অমনোযোগী হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, পড়াশোনা এবং পরীক্ষার ফলাফলেও খারাপ প্রভাব পড়ে। তাহলে উপায়?
বই পড়ুন ও পড়ান
• খুব ছোট বাচ্চা হোক বা কিশোর-কিশোরী— হাতে তুলে দিন গল্পের বই। পড়ে শোনান। তাতে ওদের কল্পনাশক্তি বাড়বে। বাড়বে মনোযোগের ক্ষমতা ও ধৈর্য। বাড়বে শব্দভাণ্ডারও। 
• বই পড়লে আমাদের প্রতিমুহূর্তে কল্পনা করতে হয়। মাথার মধ্যে ক্রমাগত নানা বিষয়ে ভাবতে হয়। একটি ভাবনা অন্য ভাবনা ডেকে আনে। ফলে বাচ্চারা ক্রমেই সৃজনশীল হয়ে ওঠে। পরীক্ষার উত্তরেও এই সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটে। 
• ব্যায়াম করলে যেমন আমাদের শরীরে পেশির বৃদ্ধি হয়, তেমনই বই পড়লে মস্তিষ্ক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বই পড়লে স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়। 
• বাবা-মাও সন্তানের সামনে বই পড়ুন। তাহলে বাচ্চারও বই পড়তে আগ্রহ তৈরি হবে।
এক্সারসাইজ
বাচ্চাকে খেলাধুলো করতে দিন। শরীরচর্চা এন্ডোর্ফিন নামে হর্মোনের ক্ষরণ ঘটায়। এই হর্মোন মানসিকভাবেও বাচ্চাকে উদ্দীপনায় ভরপুর রাখে। আনন্দে থাকা বাচ্চা নতুন বিষয়ও সহজে শেখে।
ডায়েট
সঠিক খাদ্যাভ্যাসই পারে মেধার উন্নতি ঘটাতে। তাই বুদ্ধি বাড়াতে চাইলে সচেতন হয়েই খাবারের প্লেট সাজাতে হবে— 
 ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষের মেমব্রেনকে উদ্দীপ্ত করে বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে। পাশাপাশি নিউরোনকে পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করে এই উপাদান। ফলে নতুন কিছু শিখে নেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ে। রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি বড় মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। মাছ ছাড়া চিয়া সিডে থাকে এই উপাদান। এখন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যাপসুলও পাওয়া যায়। ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ মাছ খেলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের ক্ষরণ বাড়ে।
 স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও বুদ্ধির বিকাশে আয়রন খুবই প্রয়োজনীয়। মাছ, মাংস, ডিম, শাকে থাকে পর্যাপ্ত আয়রন। 
 লুটেইন এবং জিয়াজ্যানথিন— এই দুই উপাদানই আমাদের মস্তিষ্কের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর কাজে ভীষণরকম সাহায্য করে। কালোজাম, জামরুল ফলে থাকে এই উপাদানগুলি।
 কুরেসিটিন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বুদ্ধি ও ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপেলের মধ্যে রয়েছে এই উপাদান। 
 পেঁয়াজের মধ্যেও কুরেসিটিন এবং অ্যান্থোসায়ানিন যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। কাঁচা পেঁয়াজ স্মৃতি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মস্তিষ্কে রয়েছে অসংখ্য স্নায়ু। এগুলিকে বলে নিউরোন। এই নিউরোন ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক তৈরি করে। ডোপামিন এবং সেরোটোনিন যৌথভাবে বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে। পেঁয়াজ খেলে এই দুয়েরই ক্ষরণ বাড়ে।
 ফোলিক অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশ, বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে। পালং শাকে ভালো পরিমাণে এই উপাদানটি রয়েছে। 
 ডিমে থাকে কোলিন নামক উপাদান যা মেধা বাড়াতে পারে। 
 ন্যাজোনিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের ফ্যাট মেমব্রেনকে খাদ্য জোগায়। ফলে বুদ্ধি বাড়ে। বেগুনে ভালো পরিমাণে ন্যাজোনিন রয়েছে।  
 টাইরোসাইন ও ফিনাইলালাইন সমৃদ্ধ খাবারও বুদ্ধির বিকাশে প্রয়োজনীয়। ডিম, সোয়াবিন, ডাল, টক দইতে এই উপাদান থাকে।
 চোলিন, অ্যাসিটোচোলিন মস্তিষ্কের সিগন্যালিং ব্যবস্থা উন্নত করে বুদ্ধি বাড়ায়। এমন উপাদান সমৃদ্ধ খাবার হল ডিম, বিন, কড়াইশুঁটি, বাদাম ইত্যাদি। এছাড়া বিট, ব্রকোলি, অঙ্কুরিত ছোলা, লাল ও কালো আঙুর, চেরি ফল ইত্যাদি খেলেও মেধা বৃদ্ধি হয়। 
যোগব্যায়াম
মগজাস্ত্রে শান দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম ও প্রাণায়াম গুরুত্বপূর্ণ—
 ডিপ ব্রিদিং
চঞ্চল মনকে একাগ্র করতে না পারলে মেধা বাড়বে না। প্রথমেই মনঃসংযোগ বাড়াতে নজর দেওয়া জরুরি। প্রথমে মাথা, পিঠ সোজা করে বাবু হয়ে, পদ্মাসনে বা চেয়ারে বসতে হবে। তারপর গভীরভাবে পাঁচ থেকে সাতবার শ্বাস নেওয়া-ছাড়া করতে হবে। মন থাকবে শ্বাসের উপর। ঠান্ডা বায়ু ঢুকে পড়া এবং শ্বাস ছাড়ার সময় গরম বাতাস বেরিয়ে যাওয়া— প্রতিটি অবস্থাকে অনুভব করতে হবে। পড়া শুরুর আগে এই ব্যায়াম করলে মনঃসংযোগ বাড়ে ও মেধা বাড়ে।
 ভ্রামরী
পিঠ-মাথা সোজা রেখে সুবিধামতো বসে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান কান এবং বাম হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে বাম কান বন্ধ করতে হবে। দুই হাতের তর্জনী রাখা থাকবে ভ্রূর উপর। দু’টি মধ্যমা আলতো করে দুই চোখের উপর থাকবে। অনামিকা দু’টি দিয়ে নাক সামান্য চেপে নাকের গর্ত দু’টিকে ছোট করে দিতে হবে। কনিষ্ঠা দু’টিকে ঠোঁটের উপর রাখতে হবে। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিতে হবে। এরপর শ্বাস ছাড়ার সময় গলার মধ্যে ‘উমম’ করে অল্প আওয়াজ করতে হবে। এই আওয়াজ করার সময় মাথার ভিতরে কম্পন অনুভূত হবে। দুই থেকে তিন মিনিট এই ব্যায়াম করা যায়। মস্তিষ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ আসবে। 
 ওম ধ্বনি
ওম উচ্চারণটিকে আ, উ এবং ম—এই তিনটি বর্ণে ভাঙা যায়। এই তিনটি মিলিয়ে হচ্ছে— আউম। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ওম ধ্বনির মধ্যে আ, উ উচ্চারণের পর ম বেশিক্ষণ ধরে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ ম-এর উচ্চারণ কিছুটা বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হবে। এক্ষেত্রে সোজা হয়ে বসে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে নিতে এক মিনিট এই ধ্বনি উচ্চারণ করতে হবে।
লিখেছেন : সুপ্রিয় নায়েক ও  সায়ন নস্কর

24th     June,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ