বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

করোনাকালে ইতিবাচক
থাকতে কী করবেন?

করোনা সঙ্কটে সব বয়সের মানুষের মধ্যেই অজান্তেই মন খারাপের সমস্যা দানা বাঁধছে। যেন কিছুতেই ভালো থাকা যাচ্ছে না। কোথাও একটা খেদ রয়ে যাচ্ছে। আতঙ্ক গ্রাস করছে। মনোবিজ্ঞান বলছে, এমন মন খারাপের সমস্যাকে বাড়তে দিলে ধীরে ধীরে তা মনের গণ্ডি পেরিয়ে শরীরের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কমছে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। ফলে সংক্রমণের জাঁতাকলে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। তাই এমন দুর্দিনে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতন থাকতেই হবে।

কেন সমস্যা?
১. নিয়মের বেড়াজাল— করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চেয়ে নানা বিধান আমাদের সামনে এসেছে। নিয়মিত হাত সাবান দিয়ে ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব রাখা, মাস্ক পরা, যতটা সম্ভব বাড়িতেই থাকা ইত্যাদি। পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে করোনা কার্ফু জারি হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাজার, দোকান খোলা। স্কুল, কলেজ বন্ধ। অফিসে ৫০ শতাংশ লোক... নিয়মের শেষ নেই! সবমিলিয়ে আমাদের দৈনন্দিন চেনা পৃথিবী যেন নিয়মের জালে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে করোনা থেকে রেহাই পেতে নিজেকেও একটা গণ্ডির মধ্যে আটকে ফেলতে হচ্ছে। এই অবস্থাকেও মন সঠিকভাবে মেনে নিচ্ছে না। তৈরি হচ্ছে মানসিক দ্বন্দ্ব। 
২. সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা যাচ্ছে না— মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমেই আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু করোনাকালের নানা নিয়মে আটকা পড়ে এই সম্পর্কগুলি রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। ক্লাবে যাওয়া নেই, পাড়ার চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া নেই, সকালের হাঁটা নেই, অফিসের টি ব্রেকে গল্প বন্ধ। ছোটদের  স্কুল বন্ধ, বন্ধ খেলার মাঠে যাওয়ার রাস্তা। এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে অনেকেই মানসিক ট্রমার শিকার হচ্ছেন। 
৩. নিজের পারদর্শিতা অপরের সামনে তুলে ধরার ইচ্ছে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সঙ্কটের মধ্যে একে অপরের কাজের প্রশংসা করার বিষয়টাই মানুষ ভুলে গিয়েছেন। এর ফল ভুগতে হচ্ছে মনকে।

করোনাকালে মনখারাপের লক্ষণ কী কী?
নিজের পছন্দের কাজ করতে ভালো লাগছে না  কারও সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে না  অবান্তর দুশ্চিন্তা গ্রাস করছে  ভয় লাগছে ইত্যাদি।
ছোটদের চাঙা রাখার উপায় বাচ্চাদের সাইকোমোটোর অ্যাক্টিভিটি অনেক বেশি থাকে। ফলে বেশি দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি, খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। দুঃখের বিষয় করোনা আবহে ওদের এই সরল ছোটাছুটিতেও টান পড়েছে। তাই ছোটদের মনেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 
১. এই সমস্যা কাটাতে অভিভাবকদের আরও সক্রিয় হতে হবে। ২. বাড়িতেই একটা জায়গায় বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি করতে দিতে হবে। ৩. তার সঙ্গে খেলতে হবে। ৪. অনলাইন ক্লাসের বাইরের সময়টিকে ভালো করে কাজে লাগাতে হবে। ৫. সন্তানকে একটা খাতা দিয়ে বলা যেতেই পারে তোমার যা মনে হয় লেখ, যা মনে হয় আঁকো ইত্যাদি। তার অনুভূতিকে খাতায় বের করে আনতে হবে। বাচ্চাকে ‘ক্রিয়েটিভ’ কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পারলে ভালো হয় ৬. পরিবারের ছোট সদস্যটিকে আরও একটু বেশি সময় দিতে হবে। পড়াশোনার বাইরে একসঙ্গে বসে টিভি দেখা, ফিল্ম দেখা যেতে পারে। অভিভাবকের ইচ্ছে নয়, কিছুটা সময় সন্তানের ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান দেখতে হবে ৭. রোজ কিছুটা সময় ওদের সঙ্গে গল্প করা দরকার। ৮. ওদের সামনে করোনার ভয়ঙ্কর খবর নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধরা মন ভালো রাখবেন কীভাবে? 
অবসরপ্রাপ্ত মানুষের ঘরে বসে অবসর কাটানোই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। সারাক্ষণ যেন করোনার সংক্রমণের ভয় তাঁদের তাড়িয়ে বেরাচ্ছে। এই বুঝি কিছু যেন হয়ে গেল! এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এই কয়েকটি বিষয়ে জোর দিন। ১. নিজের পছন্দ মতো কাজ করুন। রান্না, গান, ছবি আঁকা— যা ভালো লাগে করুন। সেই কাজের ছবি তুলুন বা ভিডিও করুন। সেই ছবি বা ভিডিও বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিন ২. বাইরে হাঁটতে না যেতে পারলে অসুবিধে নেই। বাড়িতেই সময় করে হাঁটুন ৩. বাড়িতে নাতি-নাতনিরা থাকলে তাদের সঙ্গে সময় কাটান ৪. ছেলেমেয়েরা দূরে থাকলে তাদের সঙ্গে ফোনে বা ভিডিও কলে নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিন ৫. ওষুধ সময়মতো খান ৬. যতটা পারবেন কম খবর দেখুন ৭. ভয় গ্রাস করলে অন্যকে বলুন। ৮. খুব সমস্যা হলে মনোবিদের পরামর্শ নিন।

প্রাপ্তবয়স্কদের ভালো থাকার দাওয়াই
করোনা, লকডাউন, পরিবার— সব চিন্তা মাথায় নিয়ে বসে আছেন প্রাপ্তবয়স্করা। দায়িত্বের শেষ নেই। এমন সময়ে বাড়িতে থাকতে ভালো না লাগলেও মেনে নিতেই হবে। ১. বাড়িতে বসেই নিজের অফিসের কাজ করে যেতে হবে। কাজ মিটলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। আগে যেখানে কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারতেন না, এখন তা পারছেন। এই সময়টুকু কাজে লাগান। ২. গান, ছবি আঁকা, লেখা যা ভালো লাগে করুন। ৩. বিকেলে বাগান পরিচর্যাতেও লেগে যেতে পারেন ৪. ঘরের কাজ করুন। ৫. অহেতুক দুশ্চিন্তা নয়,  বাড়িতেই সময় করে হাঁটুন বা শরীরচর্চা করুন ৭. লকডাউন বা এই ধরনের পদক্ষেপ মেনে নিন। সকলের ভালোর জন্যই এই পদক্ষেপ ৮. যে কোনও রকম সমস্যা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিন ৯. টিভিতে করোনা সংক্রান্ত ভয়াবহ খবর যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

করোনা আক্রান্ত হলে
নিজের করোনা হলে বা পরিবারের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে প্রথম থেকেই দুশ্চিন্তার কালো জলে ডুব দেবেন না। ধৈর্য ধরুন। করোনায় অধিকাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, এই কথাটা মাথায় রাখবেন। মনের জোর রাখতে হবে। সুস্থ হয়ে উঠতে হবেই। 
এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হোম আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা সম্ভব। তাই বাড়িতে থাকা নিয়ে চিন্তা ছাড়ুন  চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খান  কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে বা সরকারের করোনা হেল্প লাইনে যোগাযোগ করুন  পরিবারের কেউ হাসপাতালে ভর্তি থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফোন করে খবর নিন। অহেতুক দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই  এই অবস্থায় টিভিতে করোনার খবর দেখা বন্ধ করুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক হতে বাধ্য।     

পরিশেষে
গত বারেও আমরা করোনাকে হারিয়েছি, এবারও হারাব। শুধু কয়েকটি নিয়ম মেনে চলুন। মনে জোর রাখুন। এই সঙ্কট কাটবেই কাটবে। আবার সকলে মিলে একসঙ্গে আনন্দ করব। আর হ্যাঁ, মানসিক সমস্যা তীব্র হলে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নিন। 
লিখেছেন সায়ন নস্কর

13th     May,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ