বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

করোনাকে হারাতে ঘরে হাওয়া-বাতাস
চলাচল জরুরি কেন? 

লিখেছেন ইনস্টিটিউট অব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ অনির্বাণ মৈত্র।

 ল্যান্সেটের রিপোর্ট
বিশ্ববিখ্যাত ল্যান্সেট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকজন বিজ্ঞানীর যৌথ রচনা। একাধিক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তাঁরা বুঝিয়েছেন, করোনা ভাইরাস বাতাসে ছড়ায়। অর্থাৎ বায়ুবাহিত। অবশ্য, গত বছর থেকেই অনেক বিজ্ঞানী এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন। ল্যান্সেট-এর রচনাকারদের কৃতিত্ব যে তাঁরা সব প্রমাণ একত্রিত করে বৈজ্ঞানিক যুক্তিসম্মত জোরালো সাওয়াল করলেন। তার মানে কি এক বছর ধরে যা করা হল সব ভুল? না। আগের মতই মাস্ক পরতে হবে (বরং ডবল মাস্ক পরলে বেশি ভালো) এবং শারীরিক দূরত্ব আরও বাড়াতে হবে। কিন্তু, বায়ুবাহিত ভাইরাসের অস্তিত্ব যখন এবার প্রমাণিত হয়েছে, তখন মাস্ক ও দূরত্ব ছাড়া আরও কিছু সুরক্ষাবিধির কথা বলা হচ্ছে। প্রয়োজন ইন্ডোর পরিবেশে ভালো করে হাওয়া-বাতাস চলাচল ভেন্টিলেশন। 
হাওয়া বাতাস চলাচল জরুরি কেন? 
বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, করোনা ভাইরাস মূলত নাক-মুখ নিঃসৃত জলের বড় ফোঁটার (ড্রপলেট) মাধ্যমে ছড়ায়। তবে ড্রপলেট আয়তনে বড় হাওয়ায় বেশিদূর যাওয়ার আগেই মাধ্যাকর্ষণের জন্যে মাটিতে পড়ে যায়। সেই জন্যেই দু’গজের দূরত্ব, মাস্ক পরা এবং মেঝে, টেবিল, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নানা পৃষ্ঠ সানিটাইজ করায় জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, গত এক বছরের গবেষণা থেকে বিশেষজ্ঞ মহল এখন নিশ্চিত, ড্রপলেটরা সাইজে বড় হলেও আসলে ‘ছোটখাট অপরাধী’। একজন সংক্রমিত ব্যক্তি আশেপাশের অন্যদের কাছে এই ভাইরাস মূলত পৌঁছে দেন জলের ক্ষুদ্র কণার (বৈজ্ঞানিক নাম ‘এয়ারোসল’ বা ‘ড্রপলেট নিউক্লি) মাধ্যমে। 
প্রথমত, আয়তনে ছোট্ট বলে ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল মাটিতে চট করে না পড়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। তখন যে কারও পক্ষে ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল নিঃশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, করোনা রোগী কাশলে যত না ড্রপলেট বের হয়, তার থেকে অনেক বেশি বের হয় এয়ারোসল। তৃতীয়, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ৫৯ শতাংশই উপসর্গহীন। তাঁদের হাঁচি কাশি না হলেও, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ও কথাবার্তার সঙ্গে এয়ারোসল বেরতেই থাকে। হেঁকে কথা বললে (বা অতিমারির সময় আয়োজিত দফা দফায় ভোটের মিছিল মিটিং-এ স্লোগান দেওয়ার সময়) আরও বেশি ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল বেরিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই জন্যেই উপসর্গহীনরাই এই অতিমারি›র প্রধান বাহক।
বেশিরভাগ সংক্রমণ কোথায়?
বাড়ি, অফিস, দোকান, রেস্তরাঁ, ভিড় যানবাহন বা হাসপাতাল থেকেই ৯০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ হয়েছে। কারণ, যে কোন ইনডোর পরিবেশে হাওয়া চলাচল বাইরের তুলনায় কম হয়। ভিড় হলে, জানলা-দরজা বন্ধ থাকলে আরও কম। এই অবস্থায় একজন করোনা-আক্রান্ত ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল নিঃসৃত করতে থাকলে, তখন সেই এয়ারোসল ঘরের মধ্যেই কয়েক ঘণ্টা ধরে ঘুরপাক খেতে থাকে এবং ঘরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আধ ঘণ্টা বাদে কেউ ঢুকলেও, তাঁর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরোমাত্রায় থাকছে। অন্যদিকে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় বা জানলা-খোলা ফাঁকা গাড়িতে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম। কারণ, আউটডোর পরিবেশে বাতাসের পরিমাণ ও চলাচল ঘরের তুলনায় সবসময়ই বেশি। প্রচণ্ড ভিড়ে, অনেকক্ষণ ধরে কাছাকাছি না থাকলে আক্রান্তের থেকে যথেষ্ট সংখ্যায় এয়ারোসল অন্যের কাছে পৌঁছবে না।
এসি নয়, ভরসা রাখুন সিলিং ফ্যানে 
করোনাকে পরাস্ত করতে জানলা খুলে রাখুন। কামরার ভেন্টিলেশন বাড়িয়ে দিন। বিশেষ করে জায়গায় বহু মানুষ যাওয়া-আসা করেন—যেমন অফিস, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, দোকান, মল, রেস্তরাঁ, টিকাকেন্দ্র, টিউশন ক্লাস, মেট্রো রেল ইত্যাদি। সেখানে ভালো করে হাওয়া-বাতাস চলাচল করুক। গ্রীষ্মকালে এসি প্রয়োজনীয়। কিন্তু, এসি যন্ত্র ঘরের মধ্যে একই বাতাসকে বারবার ঠান্ডাও শুষ্ক করে পুনঃসংবাহিত করতে থাকে এমন বাতাসেই ভাইরাসের স্থায়িত্ব বেশি। তাই, এই বছর এসি বন্ধ করে সিলিংফ্যান আর এক্সহস্ট পাখা চালানো উচিত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেল মাস্ক ও দূরত্ববিধিই যথেষ্ট নয়। সেইজন্যেই হয়তো খবর আসছে, মেট্রোরেল কর্মীদের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। তাই, উন্নত মানের হেপা ফিল্টার বা এমইআরভি ফিল্টার (যা দিয়ে প্লেনের বাতাস পরিশোধিত করা হয়) ব্যবহার করার সময় এসেছে। 
টিকাকেন্দ্রে ভিড়: একাধিক টিকাকেন্দ্রের ভিড় থেকেই করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা। এই সব কেন্দ্রে আউটডোর ব্যবস্থা করতেই হবে।

29th     April,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ