বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

ক্যান্সার চিকিৎসায়
বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন

বহু মানুষের ধারণা, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (বিএমটি) মানে অপারেশন করে হাড় বাদ দিয়ে নতুন হাড় দেহে প্রতিস্থাপন করা! অথবা ডোনারের শরীর থেকে সংগৃহীত অস্থিমজ্জা রোগীর দেহের হাড় ফুটো করে প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়া। সত্যি বলতে কী, ধারণাগুলি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে রোগীর দেহে কোনওরকম অপারেশন করার প্রয়োজন হয় না।
বোন ম্যারো বিষয়টা কী?
‘বোন’ শব্দের অর্থ হাড় বা অস্থি। ‘ম্যারো’ বা মজ্জা হল হাড়ের ভিতরের নরম কোষ। বোন ম্যারো বা এই ধরনের কোষের কাজ হল দেহে বিভিন্ন প্রকার রক্তকণিকা যেমন শ্বেতরক্ত কণিকা, লোহিত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা ইত্যাদি তৈরি করা।
বংশগত কারণে, পরিবেশগত কারণে বা অন্যান্য কারণে মানুষের দেহে বোন ম্যারো কোষের ভিতরে জিনের মিউটেশন ঘটে থাকে। ফলে দেহে বোন ম্যারো কোষগুলি রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কোষগুলির স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। তারা অস্বাভাবিক ও রোগাক্রান্ত রক্তকণিকা তৈরি করতে শুরু করে। এর ফলে থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া, মাল্টিপল মায়েলোমা, লিউকেমিয়ার মতো দুরারোগ্য ব্যাধি দেখা দেয়। আর তখনই প্রাসঙ্গিকভাবে আসে বিএমটি চিকিৎসা পদ্ধতির কথা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিমাটোলজিস্ট এবং হিমাটো অঙ্কোলজিস্টরা বিএমটি চিকিৎসা করেন। 
কোন ক্ষেত্রে বিএমটি করা হয়?
অনেকসময় ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি ও উচ্চমাত্রায় কেমোথেরাপি প্রয়োগ করার দরকার পড়ে। মুশকিল হল, হাইডোজ কেমোথেরাপি সুস্থ বোন ম্যারোর কোষের বিস্তর ক্ষতি করে। ফলে শরীরে কোনও রক্তকণিকা উৎপন্ন হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়ে যায় শূন্য। এই অবস্থা সামাল দিতেই প্রয়োজন হয় রোগীর দেহে বাইরে থেকে ম্যাচিং বোন ম্যারো সরবরাহ করার। এই ম্যারো সরবরাহকেই বলে বিএমটি বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন।
বিএমটি কত রকমের?
বিএমটি পদ্ধতি সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
 অটোলোগ্যাস বিএমটি: এক্ষেত্রে বোন ম্যারো ডোনার রোগী নিজেই।
 সিনজেনিক বিএমটি: এক্ষেত্রে বোন ম্যারো ডোনার হয়ে থাকেন রোগীর যমজ (মনোজাইগোটিক)।
 অ্যালোজেনিক বিএমটি: এক্ষেত্রে বোন ম্যারো ডোনার রোগীর নিজের ভাই বা বোন, যাঁর সঙ্গে রোগীর এইচ.এল.এ ম্যাচিং হয়েছে।
অটোলোগ্যাস বিএমটি— এক্ষেত্রে রোগীকে প্রথমে কম মাত্রায় কেমোথেরাপি প্রয়োগ করে তথাকথিত রোগ মুক্তি ঘটানো হয়। এই সময়ে রোগীর নিজের দেহ থেকেই ম্যারো সংগ্রহ করে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এই সংরক্ষিত ম্যারোর মধ্যে খারাপ কোষ থাকলেও তাকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট গ্রোথ ফ্যাক্টর প্রয়োগ করে ম্যারোর কোষগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটানো হয়। এরপর হাইডোজ কেমোথেরাপি প্রয়োগ করার পর রোগীর দেহে সুস্থ, স্বাভাবিক বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন করা হয়। এই ধরনের বিএমটি-এর সাফল্য ভালো। তবে সব ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা যায় না।
সেনজেনিক ও অ্যালোজেনিক বিএমটি— এই পদ্ধতিতে প্রথম ধাপ ডোনার নির্বাচন। রোগীর যমজ ভাই বা বোন থাকলে সাধারণত তিনি ডোনার হতে পারেন। অপরদিকে রোগীর নিজের ভাই বা বোনের সঙ্গে রোগীর এইচ.এল.এ ম্যাচ করানো হয়। এইচ.এল.এ. হল মানুষের রক্তে শ্বেত কণিকার গায়ে লেগে থাকা এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিজেন প্রোটিন। এই এইচ.এল.এ.-এর ধরন নির্ভর করে মানুষের জিনগত গঠনের উপর যা কিনা পুরোপুরি বংশগত। তাই একমাত্র নিজের ভাইবোনের সঙ্গেই এইচ.এল.এ মেলে। রোগীর সঙ্গে তাঁর যে ভাই বা বোনের এইচ.এল.এ. মিলে যায়, তিনিই ডোনার হিসেবে নির্বাচিত হন। এইচ.এল.এ নির্বাচন করা হয় একটি বিশেষ রক্তপরীক্ষার সাহায্যে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, রোগী ও ডোনারের রক্তের গ্রুপ না মিললেও ক্ষতি নেই, কিন্তু এইচএলএ ম্যাচিং হতেই হবে।
বিএমটির একদিন আগে ডোনার বা দাতাকে হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। আর প্রতিস্থাপনের দিন সকালে ডোনারের থেকে ‘বোন ম্যারো’ সংগ্রহ করা হয়। ফলে ডোনারের দেহে বড় কোনও অসুবিধা হয় না। তিনি এক থেকে দুই দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে যান। সাতদিনের মধ্যে ডোনারের ম্যারো পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। তিনি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। 
ডোনারের কাছ থেকে সংগৃহীত ম্যারো গ্রহীতার দেহে ব্লাড ট্রান্সফিউশন পদ্ধতির মতো প্রক্রিয়ায় পাঠানো হয়। কোনও অ্যানাস্থেশিয়া বা অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। ফলে সুস্থ বোন ম্যারো রক্ত সংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে চলে যায় দেহের সব হাড়ের ভিতর। এই সুস্থ অস্থি মজ্জা হাড়ের ভিতরে প্রতিস্থাপিত হয়ে শুরু করে দেয় স্বাভাবিক রক্ত কণিকার উৎপাদন।
রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। বিএমটি হওয়ার পর কমপক্ষে ২১ দিন হাসপাতালে জীবাণুমুক্ত কেবিনে খুব সাবধানে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তারপর ছুটি দেওয়া হয়।
বিএমটি-এর ঝুঁকি
ডোনারের ম্যারো যেহেতু রোগীর শরীরে ‘ফরেন বডি’, তাই বেশ কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এই ধরনের জটিলতাকে বলে গ্রাফট ভার্সেস হোস্ট ডিজিজ বা জিভিএইচডি। এই সমস্যায় রোগীর গায়ে র‌্যাশ বেরনোর আশঙ্কা থাকে। হতে পারে মুখে ঘা। আবার বমি, জন্ডিস, আন্ত্রিক হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এছাড়া নতুন ম্যারো কাজ করতে কয়েকটা দিন লেগে যায়। এই সময়ে রোগীর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বললেই চলে। এমন অবস্থায় রোগী সাইটোমেগালো, নিউমোনিয়া ইত্যাদি ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে চিকিৎসকরা এইসব আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
বিএমটির পর আরও ১৮০ দিন রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয় ও রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়। পরবর্তী এক বছর তাঁকে একটু সাবধানে রাখতে হয়। 
সাফল্য কতটা
১০০ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বিএমটি পদ্ধতি প্রয়োগ করলে ৮০-৯০ জন রোগমুক্ত হন।
বিভিন্ন ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিএমটি’র সাফল্য নির্ভর করে রোগের ধরন ও রোগীর বয়সের উপর। শতকরা ৬০-৭০ রোগী সুস্থ, রোগমুক্ত জীবন যাপন করেন।

4th     February,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ