বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

জীব সংরক্ষণে 
প্রযুক্তি

আগামী কাল, সোমবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই বিরাট পৃথিবী জীব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে চলছে জীব সংরক্ষণের চেষ্টা। বিজ্ঞানের সেই অগ্রগতির গল্প শোনালেন উৎপল অধিকারী।

এই বিপুলা পৃথিবী জীব-বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। মানব সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিরও অগ্রগতি ঘটছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবেশের উপর মানুষের নির্মমতাও বেড়েছে। অর্থাৎ প্রযুক্তির উন্নতি জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিকে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান হাতিয়ার করা হয়েছে। অত্যন্ত উন্নত, সংবেদনশীল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বনভূমির সংরক্ষণ, বিভিন্ন প্রাণী সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা ইত্যাদির কাজে। পরিযায়ী পাখি ও প্রাণীরা আজ বিপদগ্রস্ত। পরিযায়ী প্রাণী সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানা যেতে পারে এইসব প্রযুক্তির ব্যবহারে। বর্তমানে আবার বায়ো টেকনোলজির ব্যবহার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্য দিশা দেখিয়েছে। যদি কোন স্থান থেকে সামান্য একটু উদ্ভিদ বা প্রাণী দেহের ডিএনএ পাওয়া যায়, তাদের সিক্যুয়েন্সিং করে সেই প্রাণীটি বা উদ্ভিদটি কী হতে পারে সেটা বলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বন্য পরিবেশে তারা আজও বর্তমান, না বর্তমান নয় সে সম্বন্ধেও তথ্য জানা সহজ হয়েছে।
 জীব সংরক্ষণে ক্যামেরার ব্যবহার
সাম্প্রতিককালে ডিজিটাল ক্যামেরার সঙ্গে ইনফ্রারেড সেন্সরকে যুক্ত করে ক্যামেরাকে করে তোলা হয়েছে আরও উন্নত। এই ধরনের ক্যামেরা কোন উষ্ণ বস্তুকে সহজে অনুভব করে ক্যামেরাকে ‘অন’ করে। ওই প্রাণীর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুলতে পারে। স্টিল ছবি ও ভিডিও এবং সেগুলি স্মৃতিতে স্টোর করে। বেশ কিছুদিন অন্তর ওই মেমোরি কার্ডগুলিকে অ্যানালিসিস করে জীববিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদরা ওই নির্দিষ্ট স্থানে বা নির্দিষ্ট জঙ্গলে বিভিন্ন প্রাণীর উপস্থিতি, তাদের হাঁটাচলা, তাদের সংখ্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারে। ক্যামেরা যত শক্তিশালী হবে, তত ছবির সংখ্যা, কোয়ালিটি ইত্যাদিও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। তার ফলে এগুলি থেকে পশুপাচার বন্ধ করা যেতে পারে। কারণ জঙ্গলের মধ্যে কোন দোষী ব্যক্তি ঢুকছে কি না বা তাদের সন্দেহজনক মনে হলে বনদপ্তরের কর্মীরা এবং পুলিস তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারে। মানুষের সঙ্গে প্রাণী এবং জঙ্গলের সম্পর্ক কী, তা নিয়েও নিবিড়ভাবে অনুশীলন করা যেতে পারে এই ধরনের ক্যামেরার ব্যবহার করে।
 একুইস্টিক সেন্সর
একুইস্টিক সেন্সর বা একুইস্টিক মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে জঙ্গলে বিভিন্ন পশুপাখি, বা মানুষের গলার শব্দ, হাঁটাচলার শব্দ ইত্যাদি নিখুঁতভাবে রেকর্ড বা পরিমাপ করা হয়। এগুলিকেও মেমোরি কার্ডের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখা যেতে পারে। এ থেকে কেবলমাত্র বিভিন্ন পশুপাখির উপর আক্রমণের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় তা নয়, আমরা জানি বিভিন্ন প্রাণীর শব্দই হচ্ছে যোগাযোগ স্থাপনের একমাত্র মাধ্যম—এগুলি সম্বন্ধেও ধারণা করা যায়। ফলে বন্যপ্রাণীদের সেই মুহূর্তে তাদের মানসিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য, সমগ্র জঙ্গলের মধ্যে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন বা অবস্থান ইত্যাদি বিষয় জানা যায়।
 ড্রোন মনিটরিং
বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ইত্যাদি দেশগুলিতে স্যাংচুয়ারি, ন্যাশনাল পার্ক, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ও বিভিন্ন বন বা জঙ্গলগুলিতে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পশুপাখির উপর নজরদারি চালানো হয়। এতে প্রত্যক্ষভাবে জঙ্গলে অবস্থিত পশুপাখির জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় না কিন্তু সমগ্র জঙ্গলের উপর শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায়। এরফলে প্রাণীদের অবস্থান, বিভিন্ন গাছের সংখ্যা, জঙ্গলে কোন প্রাণী পাচারকারী প্রবেশ করল কি না, এই সম্বন্ধে খুঁটিনাটি তথ্য জানা যায়। তাছাড়াও যারা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা চালায় তারাও এগুলি থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ কার্যকর হয়, যখন জঙ্গলটি হয় অত্যন্ত দুর্ভেদ্য এবং বিপদসংকুল।
 ক্লাউডের ব্যবহার
ক্যামেরা, ড্রোন বা অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি থেকে যে বিপুল পরিমাণে তথ্য উঠে আসে- সেগুলিকে সঞ্চয় করে রাখা, মেমোরি কার্ডের উপযুক্ত সংরক্ষণ ইত্যাদি খুবই কঠিন। তাই এই যাবতীয় তথ্য ক্লাউডের মাধ্যমে সর্বজনীনভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যা কোনওদিনই নষ্ট হবে না। যার সংরক্ষণ খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। এই ক্লাউডের ব্যবহার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রভূত সাহায্য করে।
 রেডার টেকনোলজি
রেডার টেকনোলজির সফল ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী পাখিদের যাত্রাপথ, তাদের যাত্রার উৎসস্থল ও সমাপ্তিস্থল, তাদের বিশ্রামের স্থান ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক ফিল্ড তথ্য পাওয়া যায়। এমনকী তারা কত স্পিডে উড়তে পারে, তাদের পাখার মুভমেন্ট কেমন হয় এই সম্বন্ধেও জানা যায়।
 জিপিএস ও রেডিও ট্রাকিং
বিভিন্ন প্রাণীদের সঙ্গে জিপিএস ট্যাগ বা ওয়ারলেস টেলিমেট্রি ট্যাগ করে দেওয়া হয়। এই ওয়ারলেস ট্যাগগুলি হয় ছোট এবং এখান থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বের হয়। যাকে রেডিও ডিটেক্টর দ্বারা সহজে সেন্স করা যায়। এগুলো কেবলমাত্র পরিযায়ী পাখি বা প্রাণী নয়, জলজ বিভিন্ন প্রাণী যারা জলের গভীরে থাকে তাদের থেকেও অনেক তথ্য জানা যায়। হাতি সহ বড় বড় প্রাণী যেমন— বাঘ, সিংহ, গন্ডার ইত্যাদির গলায় যে রেডিও কলার পড়ানো হয়, তা থেকে ওই প্রাণীগুলির অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।
 কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্যবহার
বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক গেজেট থেকে যে বিপুল তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলিকে বিশ্লেষণ করার জন্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্যবহার অনস্বীকার্য। কোনও প্রাণীর কঙ্কাল উদ্ধার হলে সেই প্রাণীটি কেমন দেখতে হতে পারে তার গ্রাফিক্স ডিজাইন করা যেতে পারে। সমগ্র তথ্যকে সংরক্ষণ এবং প্রসেসিংয়ের জন্য এই যন্ত্র দু’টির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
 

4th     June,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ