বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

নীলবিদ্রোহী রানিমা
সোমনাথ সরকার

সিপাহি বিদ্রোহের অবসানের পর বাংলায় নীলকর সাহেবদের অত্যাচার চরমে ওঠে। চাষিদের আর্থিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে তারা বিঘার পর বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে দখল করে নিত। সেই জমিতে চাষিদের দিয়ে জোর জবরদস্তি নীল চাষে বাধ্য করত।  কখনও সামান্য কিছু অগ্রিম টাকা (দাদন) দিয়ে অনিচ্ছুক কৃষকদের জোর করে তাদের খেতে নীল চাষ করিয়ে নিত। একবার নীল বুনলে সেই খেতে অন্য ফসল ফলত না। তাই চাষিরা মোটেই নীল চাষ করতে চাইত না। অন্যদিকে তখন ইংল্যান্ডের বাজারে নীলের চাহিদা প্রচুর। সামান্য পুঁজিতে বিশাল অঙ্কের টাকা লাভ করত নীলকররা। তাই ছলে বলে কৌশলে বাংলায় নীল চাষ করাতে তারা ছিল বদ্ধপরিকর। গররাজি চাষির ঘরে আগুন দেওয়া, নীলকুঠিতে আটকে রাখা ইত্যাদি ছিল নীলকর সাহেবদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম।
এ সময় মিস্টার ডোনাল্ড নামক এক ইংরেজ নীলকরের অত্যাচারে  মকিমপুর পরগনায় (অধুনা বাংলাদেশে) কৃষকদের ঘরে ঘরে উঠল কান্নার রোল। মুনাফা লোভী সাহেবদের পাশবিকতার খবর পেয়ে স্তম্ভিত হলেন রানিমা। তাঁর জমিদারির মধ্যে লালমুখোদের এহেন তাণ্ডবলীলা কিছুতেই বরদাস্ত করবেন না। যেকোনও মূল্যে  প্রাণপ্রিয় প্রজাদের রক্ষা করতে তিনি বদ্ধপরিকর।
তাঁর নির্দেশে রণনিপুণ পঞ্চাশজন লাঠিয়ালের দল প্রস্তুত হল। রানিমার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে তারা রওনা দিল মকিমপুরের উদ্দেশে। সেখানে  পৌঁছে ‘জয় রানিমার জয়’ ধ্বনি তুলে ঝড়ের বেগে লাঠিয়ালের দল নীলকুঠিতে ঢুকে  নীলকর ডোনাল্ড আর তার সঙ্গীদের বেধড়ক প্রহার করল। লাঠির আঘাতে  ব্রিটিশদের তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি দশা। বন্ধ করে দেওয়া হল ওই অঞ্চলে নীলের চাষ।
মামলা করলেও মকিমপুরে নীলচাষের অধিকার আর ফিরে পেল না নীলকর সাহেব। রানিমা ঘোষণা করলেন, তাঁর জমিদারিতে নীল চাষ নিষিদ্ধ। হইচই পড়ে গেল চারদিকে। দেশের জনগণ বিশেষত কৃষক সমাজ দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করল রানিমাকে। প্রকৃতপক্ষে তেজোদীপ্ত প্রজাহিতৈষী রানি রাসমণিই নীল বিদ্রোহের মশাল জ্বালিয়েছিলেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই পরবর্তীকালে বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে নীলকর বিরোধী সংগ্রাম।
সামাজিক ও ধর্মীয় কল্যাণমূলক কর্মে আজীবন জড়িয়েছিলেন রানি রাসমণি।  জনহিতৈষী কাজের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে সুবর্ণরেখা নদী থেকে পুরী পর্যন্ত সড়ক পথ নির্মাণ করেন। কলকাতার বিখ্যাত বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট ও নিমতলা ঘাট নির্মাণে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি ( বর্তমানে ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগার) ও হিন্দু কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠাকালে রানি প্রভূত অর্থ সাহায্য  করেছিলেন। শিষ্টের পালন করার পাশাপাশি দুষ্টের দমন করতেও ছিলেন দৃঢ়চিত্ত। তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠা। জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র চিরপ্রণম্য ‘লোকমাতা’ রানি রাসমণি। তৎকালীন যুগে পথেঘাটে একটা গান শোনা যেত—
‘কলকাতায় রাজা আছে অনেকগুলো
রানি আছে একজন-ই
যার কেউ নেই তার আছে
দেশের রানি রাসমণি।’

7th     May,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ