বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

ছদ্মবেশী মহানায়ক
সোমনাথ সরকার

শিয়ালদা থেকে ধর্মতলা সেদিন পুলিসে পুলিসে ছয়লাপ। পাকা খবর, তিনি এখানেই কোথাও আছেন। ধরা এবার পড়তেই হবে। খবর কিন্তু ভুল ছিল না। সত্যিই তিনি ছিলেন। শুধু ছিলেনই না, পুলিসের নাকের ডগায় শিয়ালদা পোস্ট অফিসের দোতলায় বসে বেহালা বাজাচ্ছিলেন। প্রবীণ অ্যাংলো   ইন্ডিয়ান বেহালা বাদকের অন্তরালে আসল মানুষটিকে চেনার সাধ্য হয়নি কারও।
কাশীতে একবার তাঁর আস্তানা ঘিরে চিৎকার করে দরজা খোলার আদেশ দিল পুলিস। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল ভীত সন্ত্রস্ত উড়িয়া ঠাকুর। মারাত্মক ভয়ে কুঁকড়ে মাথা নেড়ে জানাল বাবু বাড়িতেই আছেন। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে পুলিস বাহিনী দরজা ঠেলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে। কিন্তু কোথায় কে! উড়িয়া ঠাকুর ততক্ষণে নিশ্চিন্তে সরে পড়েছে।
চন্দননগরে তাঁর বাড়িতে হানা দিল পুলিস। যথারীতি বিফল অভিযান। ময়লার বালতি হাতে ঝাড়ুদার চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল যে কিছু আগেই।
শোনা যায়, সহযোদ্ধাদের কাঁধে ‘শবদেহ’ সেজেও পুলিসকে একবার বোকা বানান তিনি।
বোকা বনেছিলেন স্বয়ং বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জও। বড়লাটের উপর বোমা নিক্ষেপ করেন বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাস। এই ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন যিনি, তদন্তে দেখা যায় তিনিই আসলে এই পরিকল্পনার মূলে। বড়লাট হার্ডিঞ্জ যাঁকে রাজভক্ত প্রজা ভেবেছিলেন,  আসলে অকুতোভয় রাজদ্রোহী ছিল তাঁর আসল পরিচয়।
এ ঘরে তিনি, পাশের ঘরে জোর পুলিসি তল্লাশি। রেলের যে কামরাতে ব্রিটিশ পুলিসের উচ্চপদস্থ কর্তা সেই কামরাতেই ভ্রমণ করছেন ফেরারি আসামি। সন্দেহের উদ্রেক পর্যন্ত হয়নি।
চেষ্টার কসুর ছিল না ইংরেজ সরকারের। সর্বত্র ছবি ছড়িয়ে দিয়ে, অর্থ বা খেতাবের লোভ দেখিয়েও ছদ্মবেশী মহানায়কের নাগাল পায়নি ব্রিটিশ। বিভিন্ন ভাষায় সাবলীল, ছদ্মবেশে ছদ্মনামে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে বিপ্লবীদের সংঘটিত করেন তিনি।
সাহারানপুরে কাবুলিওয়ালা, লাহোরে  পাঞ্জাবি, কাশীতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী... একই অঙ্গে বহু রূপ! কখনও সতীন্দ্র চন্দর, কখনও ফ্যাটবাবু, আবার কখনও বা সি চন্দ্র নাম পরিবর্তন করে করে অভীষ্ট লক্ষ্যে তাঁর পথ চলা।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটালেন বিপ্লবের প্রয়োজনে মাতৃভূমি থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতিলগ্নে। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সোজা ঢুকে গেলেন ব্রিটিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ব্যক্তিটি। পরিচয়? পি এন ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একান্ত সচিব। উদ্দেশ্য? রবীন্দ্রনাথ জাপান যাবেন বলে মনস্থির করেছেন। তাই আগে সেখানে গিয়ে যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিদেশযাত্রার আগাম খবর সব সংবাদপত্রেই প্রকাশিত হয়েছে। সবাই তা জানেন। অতএব প্রফুল্লনাথ ঠাকুর ওরফে পি এন ঠাকুরের পাসপোর্টের আবেদন সহজেই মঞ্জুর হল।
১৯১৫ সালের ১২ মে।  জাপানি জাহাজ ‘সানু কি মারু ’র ডেকে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল নয়নে চললেন জাপানের উদ্দেশে।
হংকং বন্দরে শ্বেতাঙ্গ অফিসার পুরো নাম জানতে চাইলে প্রফুল্লনাথ ঠাকুর না বলে ভুলবশত ‘প্রিয়নাথ ঠাকুর’ বলে ফেলেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় এই নামেই কাগজপত্র তৈরি করে দিলেন অফিসার।
আজন্ম বিপ্লবের উপাসকের পর জাপানে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধবন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে গড়ে তোলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। পরবর্তীকালে এই ফৌজের নেতৃত্ব তিনি সঁপে দেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সুযোগ্য হস্তে।
১৮৮৬ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জীবনকালের অধিকাংশটাই কেটেছে অনিশ্চিত স্বাধীনতার  স্বপ্নে।    বিদেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন  দেশজননীর বীর সন্তান— তিনি বিপ্লবী মহানায়ক রাসবিহারী  বসু।

12th     March,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ