বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

মাত্র একশো বছরেই
বিবর্তনের পথে টাইগার স্নেক

১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর। লন্ডন থেকে প্রকাশিত হল চার্লস ডারউইনের ‘অরিজিন অব স্পিসিস’। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে গেল প্রায় এক হাজার আড়াইশো কপি। কিছুদিনের মধ্যেই বইটি সারা বিশ্বেই তুমুল আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। জীবনব্যাপী গবেষণায় এক সম্পূর্ণ অজ্ঞাত পৃথিবী যেন আবিষ্কৃত হল। ধর্মীয় কাহিনির উল্টোপথে হেঁটে ডারউইনের গ্রন্থে স্পষ্টভাবে জানানো হল, জীবজগৎ আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়নি। পৃথিবীর জীবজন্তু এখন যেমন অবস্থায় রয়েছে, শুরুতে তেমন ছিল না। আদিম অপরিণত অবস্থা থেকে ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা অপেক্ষাকৃত জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে। একেই বলে বিবর্তন প্রক্রিয়া। প্রকৃতিতে চলছে অবিরাম সংগ্রাম। যারা সবচেয়ে যোগ্য, তারাই এই সংগ্রামে টিকে থাকে। যারা দুর্বল, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না, তাদের অবলুপ্তি ঘটে। এই তত্ত্বকেই বলে ‘যোগ্যতমের উদ্‌বর্তন’। জীবকোষের পরিবর্তনের ফলে এক প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রামের ফলে জীবদেহে অনেক পরিবর্তন ঘটে। আর বিবর্তন ঘটে খুব ধীরে ধীরে। সাধারণভাবে এজন্য কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুসারে বিবর্তন আরও দ্রুত, মাত্র কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে। আর উদাহরণ তো হাতের কাছেই রয়েছে। যেমন কোভিড-১৯ এর বিভিন্ন স্ট্রেন। আর তা শুধু ভাইরাস বা জীবাণুর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। আরও জটিল গঠনের প্রাণীর ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। ‘ইভোলিউশনারি বায়োলজি’তে সম্প্রতি একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। অস্ট্রেলিয়ার একটি দ্বীপে তীব্র বিষধর টাইগার স্নেক নিয়ে হয়েছিল এই গবেষণা। তাতে দেখা গিয়েছে, অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সিগাল পাখির ছানা আস্ত গিলে ফেলার সক্ষমতা রপ্ত করেছে এই সাপ। এই সক্ষমতা গড়ে উঠতে তাদের একশো বছর সময়ও লাগেনি। আর এই বিবর্তনই ছোট্ট একটি দ্বীপে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। 
এখন প্রশ্ন, এই সাপ নিয়েই গবেষণা হল কেন? আসলে অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডই মূলত এদের বাসস্থান। ছোটখাট প্রাণী, প্রধানত ব্যাঙই এদের খাদ্য। কিন্তু গবেষণা হয়েছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পারথের উপকূলের ছোট্ট দ্বীপ কারন্যাকের টাইগার স্নেকদের নিয়ে। এই দ্বীপে একশো বছর আগেও টাইগার স্নেকের অস্তিত্ব ছিল না। আইনের হাত থেকে বাঁচতে কোনও এক সাপুড়েই কিছু সাপ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই ছোট্ট দ্বীপে ছেড়ে পালিয়েছিলেন। নতুন পরিবেশে পূর্ণবয়স্ক সাপগুলির জীবনধারণ ও বংশবিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য খুব একটা ছিল না। এই দ্বীপে বাসা বাধে সিগাল পাখি। সেই সিগালের ছানাই তাদের শিকার হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে পাখির ছানা আস্ত গিলে নিতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে এখানকার টাইগার স্নেক। কিন্তু তারা এত দ্রুত মানিয়ে নিল কীভাবে? এর পিছনে যে প্রক্রিয়া লুকিয়ে রয়েছে, তাকে বলা হয় ‘ফেনোটিপিক প্লাসটিসিটি’। এর মাধ্যমে কোনও প্রাণীর তার জীবদ্দশাতেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ঘটে যায় শারীরিক পরিবর্তন । এর অনেক উদাহরণই রয়েছে। 
এক্ষেত্রে গবেষণাকারীরা মূল ভূখণ্ড ও কারন্যাক দ্বীপের কিছু বাচ্চা সাপকে একসঙ্গে বড় করে তোলেন। সেগুলিকে আবার দু’টি ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিছু সাপকে খেতে দেওয়া হয় ছোট ইঁদুর, অন্যদের বড় ইঁদুর। তারপর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সাপগুলির শারীরিক গঠন পরীক্ষা করে দেখা হয়। আর তাতেই ধরা পড়ে ভিন্ন ভিন্ন আকারের শিকারের ক্ষেত্রে মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপের সাপগুলির শারীরিক গঠনের বদল। মূল ভূখণ্ডের  সাপগুলি ছোট ও বড়-যে কোনও খাদ্যই খেয়ে থাকুক না কেন, তাদের মাথার আকার একই রয়ে গিয়েছে। দ্বীপ থেকে নিয়ে আসা টাইগার স্নেকগুলির পরিবর্তন কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। যাদের বড় আকারের শিকার দেওয়া হয়েছিল, তাদের চোয়ালের হাড় তুলনায় বেশ দীর্ঘ হয়েছে। ফলে তাদের হাঁ অনেকটাই বড়। এই ফেনোটিপিক প্লাসটিসিটি বিষয়টি আরও একটু সহজ করে বুঝে নেওয়া যাক। যারা জিমে যায়, তাদের কেউ কেউ ওয়েট ট্রেনিং থেকে দ্রুত পেশি সুগঠিত করে নিতে পারে। তাদের বলা হয় ‘ইজি গেনার’। আর যাদের তা হয় না, তাদের বলা হয় ‘হার্ড গেনার’। এক্ষেত্রে কারন্যাক দ্বীপের সাপগুলি ‘ইজি গেনার’।  তাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী আকার পরিবর্তনের সহজাত (জেনেটিক) ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। এর অর্থ, তারা ফেনোটিপিক প্লাসটিসিটির সর্বোচ্চস্তরে পৌঁছে গিয়েছে। কারন্যাক দ্বীপের টাইগার স্নেকদের জীবনধারণের জন্য সিগালছানা শিকার করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। তাই এই প্রক্রিয়ায় তাদের চোয়ালের হাড় দীর্ঘ হয়ে উঠেছে এবং তাদের এই ইজি গেনার জিন পরবর্তী প্রজন্মেও সঞ্চারিত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে (একশো বছরেরও কম সময়ের মধ্যে) আর কয়েক প্রজন্ম পর এখানকার সমস্ত সাপই ইজি গেনার হয়ে উঠেছে। বিবর্তনের শেষ এখানেই নয়। জেনেটিক মিউটেশনও ঘটছে, যাতে দীর্ঘ চোয়াল নিয়েই তাদের শাবকদের জন্ম হচ্ছে। আর টিকে থাকার জন্য ইজি গেনারদের চেয়েও এদের সুবিধা বেশি। আর এই কারণেই হয়তো ধীরে ধীরে দ্বীপটিকে উপনিবেশ বানিয়ে নিয়েছে টাইগার স্নেক।

5th     March,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ