বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

ভবিষ্যতে জ্বালানির জোগান দেবে চাঁদ?

সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। চাঁদকে নিয়ে রোমান্টিকতার শেষ নেই। কিন্তু চরম দারিদ্র ও অনাহারের চালচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে রোমান্টিকতা দূরে সরিয়ে রেখেছেন কিশোর কবি। নজর কেড়েছেন মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের প্রতি। তারপর অনেক অনেক অমাবস্যা-পূর্ণিমা এসেছে, গিয়েছে। পৃথিবীর এই উপগ্রহ এখন আর অধরাও নয়। ইতিমধ্যেই চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে মানুষ। আমেরিকা, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলি চাঁদে একের পর এক মিশন পরিচালনা করছে। আর এই মিশনগুলির খরচও কম নয়। তাহলে এই মিশনগুলির উদ্দেশ্য কি নিছক কৌতূহলের মেটানো? নাকি এর পিছনে রয়েছে নতুন কিছু আবিষ্কারের ‘চেষ্টা’? আসলে এখন চন্দ্রাভিযানের কারণ হিসেবে সবচেয়ে আলোচনা হচ্ছে হিলিয়াম-৩ ঘিরে। এক্ষেত্রেও রয়েছে প্রয়োজন পূরণের তাগিদ। বর্তমান পৃথিবীর চালিকা শক্তি জ্বালানি।  কিন্তু যে উৎসগুলি এর জোগান দিয়ে চলেছে, সেগুলি ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। কয়েক বছর আগে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে পরিমাণ খনিজ তেল এখনও মাটির নীচে অবশিষ্ট রয়েছে, তা খুব বেশি হলে চলবে ৫০ বছর। প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যাবে আর ৫৩ বছর। আর মাটির নীচে কয়লা যা মজুত, তা চলবে ১১৪ বছর।  কয়লা ও তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে পরিবেশের উপর কুফল তো সবারই জানা। তাই এখন বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে বিজ্ঞানীরা দিনরাত এক করে কাজ করছেন। এই লক্ষ্যে এখন চাঁদের দিকে নজর তাঁদের। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, চাঁদের মাটিতে রয়েছে নানান বিরল খনিজ পদার্থ। আর রয়েছে হিলিয়াম-থ্রি গ্যাস। এই হিলিয়াম-৩ কে ভবিষ্যতে বিশ্বের জ্বালানির জোগানদাতা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।  নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে তা পৃথিবীতে যুগান্তর এনে দিতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। 
প্রশ্ন উঠতেই পারে পৃথিবীতে কি হিলিয়াম-৩ পাওয়া যায় না? উত্তর, না।  সূর্যে প্রতিনিয়ত সৌরঝড়ের কারণে উত্তপ্ত বাতাস সৌরজগতে আছড়ে পড়ে। কিন্তু পৃথিবীতে রয়েছে বায়ুমণ্ডল আর চৌম্বকক্ষেত্রের সুরক্ষাকবচ। ফলে সৌর বাতাস বা সোলার উইন্ড ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে না। কিন্তু চাঁদে এই সুরক্ষা নেই। সেখানে সরাসরি এসে পড়ে সোলার উইন্ড, যাতে থাকে হিলিয়াম-৩ উপাদানটি। বহু লক্ষ লক্ষ কোটি বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলছে। ফলে চন্দ্রপৃষ্ঠে জমেছে হিলিয়াম-৩-এর বিশাল ভাণ্ডার। হিলিয়াম-৩-এর বিপুল সঞ্চয়কে কাজে লাগানো গেলে পৃথিবীর জ্বালানির চাহিদার অনেকটাই পূরণ করা যাবে। 
জলবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ বা পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি তো ইতিমধ্যেই রয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে চাঁদ থেকে হিলিয়াম-৩ এনে কাজে লাগানোর মতো প্রযুক্তি নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। তাঁরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তবে এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার। তার অনেকটাই হয়তো করতে হবে চাঁদের মাটিতেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চন্দ্রাভিযানের অন্যতম বড় উদ্দেশ্য হিলিয়াম-৩-এর সন্ধান ও তা নিয়ে গবেষণা। আর এই উদ্যোগ থেকে মানব সভ্যতা কতটা লাভবান হবে, তার উত্তর রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে।

19th     February,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ