বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

চেনা সব্জির 
অচেনা রূপ
কল্যাণকুমার দে

ফুলকপি আমাদের অতি পরিচিত শীতকালীন সব্জি। তবে ইদানীং প্রায় সব ঋতুতেই বাজারে ফুলকপি পাওয়া যায়। সবুজ পাতা দিয়ে ঘিরে থাকা সাদা অংশটি ফুলের মতো বলেই এর নাম ফুলকপি। প্রকৃতপক্ষে ফুলকপির মাথা একটি সাদা পুষ্পমঞ্জরীর মেরিস্টেম দ্বারা গঠিত। ফুলকপি হল সর্ষে পরিবারের উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্রাসিকা ওলেরেসিয়া ভ্যারাইটি ক্যাপিটাটা। আমরা সবসময় ধবধবে সাদা ফুলকপি পছন্দ করি। সেই কারণে সাদা রং ও আঁটোসাঁটো থাকতেই ফুলকপি জমি থেকে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু বীজ তৈরির জন্যে বেশ কিছু গাছ জমিতে রেখে দেওয়া হয়। এর ফলে মাথা ঢিলা হতে থাকে। রং হলদে থেকে হাল্কা সবুজ হয় তা থেকে অসংখ্য সবুজ পুষ্পমঞ্জরীর কুঁড়ি তৈরি হয়। পুষ্পমঞ্জরী বড় হলে, তাতে সর্ষে গাছের মতো ফুল ধরে।
ফুলকপি গত দেড়শো বছর ধরে ভারতে চাষ হচ্ছে। ভারতীয় ফুলকপি উনিশ শতকে অধুনালুপ্ত কর্নিশ (ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কর্নওয়াল অঞ্চল) ফুলকপির বংশোদ্ভূত। এটি ১৮২২ সালে ডঃ জেমসন ইংল্যান্ড থেকে প্রথমে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে আনেন এবং বীজগুলি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়।
সাধারণত একটি গাছে একটি ফুলকপি ধরে। ২০১৯ সালে ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপ-জেলার একটি বা দুটি নয়, ছোট-বড় মিলিয়ে এক গাছে কুড়িটি ফুলকপি ধরার কথা জানা গিয়েছিল। এমন বিরল ফুলকপি কেউ কখনও দেখেননি। সেদেশের কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি কপি গাছে একটি ফুল হলেও বিভিন্ন সময় তিন, চার এমনকী ছয়টি ফুলের মাথা দেখতে পাওয়া যায়। একটি গাছে কুড়িটা ফুলকপি এটিই প্রথম। অক্সিন হরমোনের প্রভাবে এমনটি হয়ে থাকতে পারে।
সাদা রঙের ফুলকপিই আমাদের চোখে পড়লেও সবুজ, বেগুনি, কমলা বা গাঢ় হলুদ রঙের ফুলকপি হালে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এমন অচেনা রঙিন ফুলকপি মানুষের মনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। রঙিন ফুলকপি বিশ্বজুড়ে জন্মায়। এইসব ফুলকপি ভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। স্বাদেও অতুলনীয়। বর্তমানে এই রঙিন ফুলকপির বীজ আসছে স্পেন থেকে।
সবুজ ফুলকপি কিন্তু ব্রকোলি নয়। এটি একটি হাইব্রিড ফুলকপি যা সাদা ফুলকপি ও ব্রকোলির ক্রস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার তানিসুরা ও অ্যান্টেল কোম্পানি ১৯৮০ সালে এটি তৈরি করেন এবং ’৮৮-তে ‘ব্রকোফ্লাওয়ার’ নামে বাজারে আনেন। নয়ের দশকের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আর একধরনের ফ্যাকাশে সবুজ ফুলকপি বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া গেল। এটির আকারের সঙ্গে রোমান যুগের স্থাপত্যশিল্পের সঙ্গে মিল আছে। এ ধরনের ফুলকপিকে রোমান ফুলকপি বলে। ষোড়শ শতাব্দীতে প্রথম ইতালিতে এই ধরনের ফুলকপির কথা জানা যায়। পুষ্টির দিক থেকে রোমানস্কো ফুলকপি ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ডায়াটরি ফাইবার এবং ক্যারোটিনয়েডসে সমৃদ্ধ। এতে বাদামের গন্ধ পাওয়া যায়।
বেগুনি রঙের ফুলকপির অন্য নাম সিসিলিয়ান ভায়োলেট বা ভায়োলেট কুইন বা গ্রাফিটি ফুলকপি। রং বেগুনি হলেও এটি কিন্তু হাইব্রিড বা সংকর নয়। ইতালি বা দক্ষিণ আফ্রিকাই এর আদি বাসস্থান। এর বেগুনি রং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যানথোসায়ানিনসের জন্য। অ্যানথোসায়ানিনই ক্যান্সার ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে।
কানাডার টরন্টো শহরের কাছে একটি জলা জায়গায় প্রথম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল কমলা বা গাঢ় হলুদ  রঙের ফুলকপি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ধরনের ফুলকপি একটি প্রাকৃতিক বংশানুক্রমিক জিনগত পরিবর্তন বা পরিবৃত্তির ফলে উদ্ভূত হয়েছে। পরে ১৯৮১ সালে মাইকেল ডিকসন কৃত্রিমভাবে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কমলা রঙের ফুলকপি তৈরি করেন। কমলা রঙের জন্যে এদের কোষে থাকে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-এ-র প্রোভিটামিন।
ফুলকপির গুণাগুণের কথা সর্বপ্রথম দ্বাদশ শতকে আরবের বিজ্ঞানী ইবনে আল আওয়াল ও ইবনে আল বাইতির লেখা থেকে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ফুলকপিতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-কে ও ফোলেটস (ভিটামিন-বি৯) থাকে। এক কাপ সেদ্ধ করা ফুলকপিতে রয়েছে প্রায় ৫৫ গ্রাম ভিটামিন-সি।   ফুলকপিতে রয়েছে ‘গ্লুকোরাফিন’ (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) যা পাকস্থলীর পর্দাকে রক্ষা করে এবং পাকস্থলীতে হ্যালোব্যাকটর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। এর ফলে পাকস্থলীর আলসার বা ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। ফুলকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক। এখন সারা বছর ফুলকপি পাওয়া গেলেও রসনায় শীতের ফুলকপির স্বাদই শ্রেষ্ঠ। আর রূপে সে যতই রঙ্গিন হোক, গুণেই তার আসল কদর।

12th     February,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ