বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 


বিজ্ঞানের টুকিটাকি
মহাসাগরনামা
দেবজ্যোতি রায়

বিস্তীর্ণ বিশাল জলরাশিই হল মহাসাগর। পৃথিবীর ফুসফুস। মানুষের অক্সিজেনের সবথেকে বড় জোগানদাতা হল এই সাগর আর মহাসাগর। পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। মানবজাতির টিকে থাকার অন্যতম চাবিকাঠি হল সমুদ্র। খাদ্য, ওষুধসহ বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকার রসদের একটি বড় অংশ আসে মহাসাগর থেকে। আসলে এতকিছু বলার উদ্দেশ্য হল, আগামী বুধবার আন্তর্জাতিক মহাসাগর দিবস। হ্যাঁ, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ৮ জুন দিনটি পালিত হয়ে আসছে। দিনটি পালনে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে। ওই বছর মহাসাগরীয় জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এই দিনটি পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন কানাডার একটি প্রতিনিধি দল। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের ঘোষণা করে।
বিশ্ব মহাসাগর দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল পৃথিবীতে মহাসাগরের গুরুত্ব তুলে ধরা। প্রতিবছরই নির্দিষ্ট একটি থিমের উপর ভর করে এই দিবস উদযাপিত হয়। ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক মহাসাগর দিবসের থিম- ‘পুনরুজ্জীবন: মহাসাগরের জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ’। এবার আমরা জেনে নিই মহাসাগর সম্বন্ধে কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: 
১) পৃথিবীতে মোট মহাসাগরের সংখ্যা ৫টি।
২) মহাসাগরের থেকে আয়তনে ছােট জলভাগকে বলা হয় সাগর।
৩) তিন দিক স্থল দ্বারা বেষ্টিত জলরাশি হল উপসাগর।
৪) চারদিকে স্থল দ্বারা বেষ্টিত জলভূমিকে বলা হয় হ্রদ।
৫) পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগরের নাম প্রশান্ত মহাসাগর। এতে ২৫ হাজারেরও বেশি দ্বীপ রয়েছে।
৬) পৃথিবীর গভীরতম স্থান হল, প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চ।
৭) পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর অতলান্তিক।
৮) পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাসাগরের নাম দক্ষিণ মহাসাগর।
৯) পৃথিবীর বৃহত্তম সাগর হল দক্ষিণ চীন সাগর।
১০) বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগরের নাম মেক্সিকো উপসাগর।
আসলে পৃথিবীর প্রায় ৯৪ শতাংশ প্রাণী সমুদ্রের নীচে বাস করে। ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার অব মেরিন স্পিসিস বলছে, এ পর্যন্ত সমুদ্রে বসবাসকারী ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৭০-টিরও বেশি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও  জানা গিয়েছে, সমুদ্রের নীচে প্রায় ২ কোটি টন সোনা রয়েছে। কিন্তু সেগুলি তরল আকারে জলের সঙ্গে মিশ্রিত। সমুদ্র তলদেশের এমনই তিনটি আশ্চর্য স্থান হল: 
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ: স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের রানি ছিলেন মারিয়ানা। তাঁর নামেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপপুঞ্জের নামকরণ। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে এই দ্বীপগুলি আসলে ডুবে থাকা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির চূড়া। এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে ২০০ কিমি পূর্বে বিস্তৃত বিশ্বের গভীরতম মহাসাগরীয় খাত। নাম দেওয়া হয়েছে নিকটবর্তী দ্বীপপুঞ্জের নামেই। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। এই খাতের গভীরতম অংশের মাপ ১০ হাজার ৯৮৪ মিটার। এই অঞ্চলের নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ। বলা হয়, যদি মাউন্ট এভারেস্টকে এর মধ্যে বসিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে আরও প্রায় দু’কিমির মতো জায়গা বাড়তি পড়ে থাকবে। মারিয়ানা খাতের শেষ সীমায় তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে ১ ডিগ্রি থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। মারিয়ানা খাতে গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় জলস্তম্ভের চাপ। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বার মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা মাপে ব্রিটিশ জাহাজ এইচএমএস চ্যালেঞ্জার। পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে বহু অভিযাত্রীর পা পড়লেও মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে পৌঁছতে পেরেছেন মাত্র নগণ্য সংখ্যক অভিযাত্রী। প্রথম দুই অভিযাত্রী ছিলেন জাক পিকার্ড এবং মার্কিন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ডন ওয়ালশ। ঘুটঘুটে অন্ধকারে লুকনো মারিয়ানা ট্রেঞ্চের রহস্য এখনও অজানা। কেউ কেউ বলেন, এই খাতেও রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব। কিন্তু এখনও তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গ্রেট বেরিয়ার রিফ: অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত প্রায় আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৯০০টি একক প্রবাল প্রাচীরের সমন্বয়ে গঠিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ‘দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ’ পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর। ১৯৮১ সালে ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি দেয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্তৃত বাস্তুতন্ত্র এখানেই রয়েছে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে সংক্ষেপে ‘জিবিআর’ বলা হয়। 
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল: বিশ্বের রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। অতলান্তিক মহাসাগরের তিন বিন্দু দ্বারা সীমাবদ্ধ ত্রিভুজাকৃতির এই এলাকাকে ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গলও বলা হয়। যে তিনটি প্রান্ত নিয়ে কাল্পনিক এই ত্রিভুজ তৈরি হয়েছে তার এক প্রান্তে রয়েছে আমেরিকার ফ্লোরিডা, আর এক প্রান্তে পুয়ের্তো রিকো এবং অপর প্রান্তে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। এই কাল্পনিক ত্রিভুজের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা বহু জাহাজ এবং বিমান রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে। 
সম্প্রতি নতুন করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। সৌজন্যে মার্কিন পর্যটন সংস্থা ‘দ্য অ্যানসিয়েন্ট মিস্ট্রিজ ক্রুজে’র ওয়েবসাইটে দেওয়া একটি বিজ্ঞাপন। লেখা হয়েছে, ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ট্যুরে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করবেন না। যদি আপনি হারিয়েও যান, ১০০ শতাংশ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’ আর এখানেই নেটিজেনদের প্রশ্ন, কারা ফেরত পাবেন টাকা? ক্রুজটি ২০২৩ সালের মার্চে নিউ ইয়র্ক থেকে বারমুডা যাবে। জাহাজের প্রতিটি কেবিনের দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, অতলান্তিক মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো ভারতেরও একটি রহস্যজনক ত্রিভুজ রয়েছে। ভারতের বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নামে পরিচিত। গত ৭৪ বছর ধরে এই ত্রিভুজের রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি। এই অঞ্চলে অন্তত ১৬টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগই যুদ্ধবিমান। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ২৫ জনের।

5th     June,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ