বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

ডাকটিকিট সংগ্রহ

শৌণক সুর: —এই তোর কাছে কিউবার একই স্ট্যাম্প দুটো দেখছি!
—হ্যাঁ। তাতে কী?
—এক্সচেঞ্জ করবি? আমার কাছে ইতালির এই স্ট্যাম্পটা দুটো রয়েছে। এটা নিয়ে কিউবার একটা স্ট্যাম্প দিবি ভাই?
এই কথা বলে ছেলেটি তার স্ট্যাম্পবুক খুলে ধরল। দেখল, হেলানো পিসার মিনারের ছবিওয়ালা ডাকটিকিট। নীচে বাঁদিকে ছোট অক্ষরে লেখা ইতালিয়া, ডানদিকে লেখা এল. ৫০। ক্লাস ফাইভের এই দুই পড়ুয়ারই দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট জমানোর শখ। কিন্তু বয়স অনেকটাই কম হওয়ায় জ্ঞানের বহর তেমন একটা নেই। কিন্তু স্ট্যাম্পের ছবিটা দেখতে খাসা। তাই সেটি নিতে থুড়ি এক্সচেঞ্জ করতে রাজি হয়ে গেল অন্যজন। এখন কিন্তু এই ধরনের দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। ন’য়ের দশক পর্যন্ত স্কুল পড়ুয়াদের অনেকেরই স্ট্যাম্প কালেকশনের হবি ছিল।  পাড়ায় পাড়ায় বই-খাতা বিক্রির দোকানে পাওয়া যেত দেশ-বিদেশের স্ট্যাম্প ও কয়েন। সেখান থেকেই কিনতে পাওয়া যেত ডাকটিকিট জমানোর বিশেষ এক ধরনের বই। তার ভিতরে ডাকটিকিট আঠা দিয়ে আটকে রাখা যেত। পরের দিকে অবশ্য অন্য ধরনের স্ট্যাম্প বুক বাজারে আসে। হার্ড বাইন্ডিং। মলাটের রং গাঢ় লাল, নীল অথবা সবুজ। প্রতিটি পাতা পিজবোর্ডের মতো শক্ত। তাতে ওপর নীচে টানা লম্বা করে একটি একটি লাইন। দেখে মনে হবে লম্বা করে সেলোটেপ সাঁটা রয়েছে। তারমধ্যেই ঢুকিয়ে রাখা যেত স্ট্যাম্প। ফলে আঠা দিয়ে আটকানোর প্রয়োজন পড়ত না। সহজেই তা এক্সচেঞ্জ করা যেত অন্যজনের সঙ্গে। বাড়ির বড়দের তখন ছোটরা প্রায়শই জিজ্ঞাসা করত, কোন স্ট্যাম্পের ভ্যালু বেশি, কোনটি দুষ্প্রাপ্য, কোনটি জমালে ভালো হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। শিশুদের কৌতূহল মেটাতে অনেকেই বলে দিতেন ব্রিটিশ গুইনা ১ সেন্ট ম্যাজেন্টা, ট্রেসকিলিং ইয়েলো সুইডেন, দ্য সিলিকন এরর অব কালার, ব্লু অ্যান্ড রেড পেনি মরিশাস, দ্য ইনভার্টেড জেনি, থ্রিসি জর্জ ওয়াশিংটন, হাওয়াইন মিশনারিশ, টিফলিস স্ট্যাম্প ইত্যাদির নাম। এসব শুনে গোলগোল হয়ে উঠত শিশুদের চোখ। মনে হতো বিরাট জ্ঞানের সম্ভার অর্জন করে ফেলেছে তারা। এরপরই কলম্বাসের মতো অভিযানে বেরিয়ে পড়ত তারা। কিন্তু যাতায়াতের পরিধি, গতিবিধি সংক্ষিপ্ত। অগত্যা এলাকারই বিভিন্ন খাতা-বইয়ের দোকানে চলত সেসব স্ট্যাম্পের খোঁজ। কিন্তু আদতেও সেসব স্ট্যাম্প এলাকার কোনও দোকানে মিলত না। কিন্তু শিশু মন সেসব বুঝত না। আরও উদ্যমে তারা খোঁজ চালাত। আসলে শিশুদের পরামর্শদাতারা ভালো করেই জানতেন যে, ওই ধরনের দুষ্প্রাপ্য ডাকটিকিট সাধারণত পাড়ার বইয়ের দোকানে মিলবে না। কিন্তু হবির প্রতি আসক্তি বাড়বে একথা ভেবেই এমন উপদেশ দিতেন বাড়ির বড়রা। সেসব না পেয়ে মিউনিখ ওলিম্পিক্সের স্ট্যাম্প, ভিয়েতনামের জাহাজওয়ালা ছবির স্ট্যাম্প, ইংল্যান্ডের রানিদের ছবি থাকা হরেক রঙের ডাকটিকিট সিরিজ আকারে জমিয়ে ফেলত শিশুরা। কিছু কিছু দোকানে মিলে যেত জার্মানি, ফিলিপিন্স, ইয়েমেন, মঙ্গোলিয়া, কানাডা, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, কিউবা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালের স্ট্যাম্পও।  খুব জনপ্রিয় ছিল মাগইয়ার পোস্তার বিভিন্ন স্ট্যাম্প। বিদেশি স্ট্যাম্পের সঙ্গে জমানো হতো এ দেশেরও হরেক ডাকটিকিট। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, আম্বেদকর, বল্লভভাই, নেহরু, সত্যজিৎ রায়— প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদের ছবি সংবলিত ডাকটিকিট।
ডাকটিকিট জমানোর ফলে ছোট থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে বিভিন্ন দেশ সম্বন্ধে সম্যক একটা ধারণা তৈরি হতো। ভূগোল বিষয়ের প্রতি কিছুটা হলেও বাড়ত আগ্রহ। এই মোবাইল ফোন, ই-মেলের যুগে চিঠি ব্যাপারটাই কার্যত হারিয়ে গিয়েছে। যতটুকু বেঁচে আছে তাও ‘অফিসিয়াল লেটারে’র দৌলতে। পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড লেটার তো যেন জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। এই যুগেও তোমাদের মধ্যে কেউ আছ নাকি ফিলাটেলিস্ট? 

29th     May,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ